বরিশাল সেতুর দ্রুত বাস্তবায়ন চায় ভোলাবাসী

ইলশে নদীর তীরে অবস্থিত দেশের বৃহত্তম দ্বীপ ভোলা। নদী, খাল-বিল আর চরাঞ্চলের চোখ জুড়ানে সৌন্দর্যের সাথে এখানে রয়েছে প্রাকৃতিক অনন্ত সম্পদ। শুধু পিছিয়ে আছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। একটি মাত্র সেতু হলেই ঘুচে যায় ভোলার বিশ লাখ মানুষের দুঃখ ও দুর্দশার অনেকটা।
দেরিতে হলেও এবার আশার আলো দেখাচ্ছে ভোলাবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্নের ভোলা-বরিশাল সেতু। এটি হলে বদলে যাবে ভোলার বিশ লাখ মানুষের জীবনমান। আর সেতুর সুবাদে প্রথমবারের মতে সারাদেশের সঙ্গে সড়ক পথে সরাসরি যোগাযোগ সৃষ্টি হবে ভোলার। মুছে যাবে ‘বিচ্ছিন্ন দ্বীপ জেলা’র উপাধি। তবে কোনো আশ্বাস নয়, দ্রুত সেতুর কাজ শুরুর দাবি জেলাবাসীর।
ভোলার স্থানীয় বাসিন্দা জিয়াউদ্দিন সোহাগ জানান, দেশের একমাত্র দ্বীপ জেলা ভোলা। জেলার সঙ্গে সারাদেশের যোগাযোগের একমাত্র পথই নৌপথ। সরাসরি সারাদেশের সঙ্গে সড়ক পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষা, চিকিৎসা ও কর্মসংস্থানে পিছিয়ে রয়েছে ভোলাবাসী।
তারা জানান, ভোলা জেলা প্রাকৃতিক গ্যাসে সমৃদ্ধশালী হলেও হাতেগোনা ছোট বড় মিলে ৩-৪টির বেশি শিল্পকারখানা গড়ে ওঠেনি। যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ নানান কারণে শিল্প উদ্যোক্তারা আগ্রহী হননি ভোলায় শিল্পকারখানা করতে। তাই ভোলার উন্নয়নে দীর্ঘদিন ধরেই ভোলা-বরিশাল সেতুর দাবি জানিয়ে আসছিল জেলাবাসী। কিন্তু গড়ে ওঠেনি সেই স্বপ্নের সেতু।
গত ৮ মে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. শেখ মইনউদ্দিন ও সেতু বিভাগের সচিব মো. আবদুর রউফ ভোলা সফরে এসে ভোলা-বরিশাল সেতুর স্থান পরিদর্শন করেন। এতে করে নতুন করে আবারো স্বপ্ন দেখাচ্ছে কাঙ্ক্ষিত ভোলা-বরিশাল সেতু।
জেলাটি অনেক সুন্দর হলেও সন্ধ্যার পর লঞ্চ ও স্পিডবোট চলে না। তাই তাদের যদি জরুরিভাবে সন্ধ্যার পর বরিশাল যেতে হয়, তখন চরম ভোগান্তি ও বিপাকে পড়তে হয়। যানবাহন চালক মো. মাহবুব জানান, ভোলার সঙ্গে সরাসরি কোনো সড়ক যোগাযোগ নেই। বাস ও ট্রাক নিয়ে আসা-যাওয়ার একমাত্র পথই হলো ভোলার ভেদুরিয়া ও বরিশালের লাহারহাট ফেরি সার্ভিস।
তাও আবার ফেরিঘাটে গিয়ে অপেক্ষা করতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কখনো বিকেলে ফেরিঘাটে পৌঁছালে পরের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। যদি ভোলা-বরিশাল সেতু হয়, তাহলে আর অপেক্ষা করতে হবে না। ভোলা থেকে ৩০-৪০ মিনিটের মধ্যেই বরিশাল পৌঁছানো যাবে।
ভোলার সচেতন নাগরিকরা জানান, পদ্মা সেতু করা হয়েছে ভোলাসহ ২১ জেলার সহজ যোগাযোগের জন্য। কিন্তু পদ্মা সেতুর সুবিধা ভোলাবাসী পায়নি। কারণ ভোলা একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। ভোলায় প্রচুর গ্যাস থাকা সত্ত্বেও শিল্পকারখানা গড়ে মানুষের কর্মসংস্থান হয়নি। তারা আরও জানান, ভোলা থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস, ইলিশ, ধান, গমসহ বিভিন্ন শষ্য সারাদেশে গেলেও ভোলাবাসী তেমন কিছুই পাচ্ছে না।
সচেতন মহলটি মনে করেন, ভোলা-বরিশাল সেতু হলে সারাদেশের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা হবে। উন্নয়নের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে ভোলায়। সেতু হলে একে একে গড়ে উঠবে শিল্পকারখানা। তখন ভোলাসহ সারাদেশের হাজার হাজার মানুষ এখানে চাকরি করবে বলে তারা মনে করছেন। ভোলা-বরিশাল সেতু অধিক গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত নির্মাণ করার জন্য।
তবে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. শেখ মইনউদ্দিন তখন জানিয়েছিলেন, ভোলা-বরিশাল সেতুটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু হবে। এটির কাজ হয়ত জানুয়ারির মধ্যে শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আমরা তারিখ ও মাস এখন সঠিকভাবে বলতে পারবো না।
একুটু বলতে পারি ভোলা-বরিশাল সেতু হবে। সেতু বিভাগের সচিব ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক মো. আবদুর রউফ জানান, ভোলা-বরিশাল সেতুটি প্রায় ১১ কিলোমিটারের হবে। ভোলা-বরিশাল সেতু নির্মাণে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এটি আরও বাড়তে পারে কিংবা কমতেও পারে।
স্বপ্নের ভোলা-বরিশাল সেতু নিয়ে ভোলাবাসীর দাবীর সাথে দেশ ও বিদেশের দর্শনার্থীদেরও আগ্রহ রয়েছে। অস্ট্রিয়া থেকে মাহাবুবুর রহমান বলেন, ভোলাকে পর্যটন ও শিল্পনগরী হিসেবে গড়ে তুলতে ভোলা-বরিশাল সেতুর বিকল্প নেই। তিনি দ্রুত এ সেতুর বাস্তবায়ন আশা করছেন।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন