বর্ষায় পাহাড়ে ধস কমিয়ে আনতে পারে যেসব ব্যবস্থা
বর্ষায় পাহাড় ধস কমিয়ে আনতে হলে প্রথমেই পাহাড় কাটা সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে।আর এ জন্য সরকারের দিক থেকে সর্বোচ্চ কঠোরতা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে ডিজিটাল এই সময়ে অবিলম্বে বৃষ্টিপাত পরিমাপ করে উপকূলের বিপদ সংকেতের মতো পাহাড়েও ভূমিধসের বিপদ সংকেত চালুর পাশাপাশি সেখানে বসবাসরতদের অন্যত্র পুনর্বাসনের ওপর গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞরা পার্বত্য এলাকায় রাস্তা-ঘরবাড়ি করতে গিয়ে সৃষ্ট খাড়া পাহাড়ের পাশে আধুনিক প্রকৌশল ব্যবস্থায় দেয়াল গড়া এবং বেলেপাথরের নরম পাহাড়ে পানির জমাট ঠেকাতে সঠিক ড্রেনেজ ব্যবস্থা চালুর জন্যও তাগিদ দেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. এ. এস. এম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘আমাদের পাহাড়গুলোর বয়স মাত্র ৫ মিলিয়ন বছর। এগুলো বেলেপাথরের নরম পাহাড়। আগেও অনেক প্রাণহানীর পরও নির্বিচারে পাহাড় কাটা চলছে। তাই এ দুর্যোগ ঠেকাতে সবচেয়ে প্রথমে পাহাড়ে আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে। পাহাড় ও পাহাড়ি বন সংরক্ষণ করতে এগুলোকে রিজার্ভ হিসেবে ঘোষণা করতে হবে।’
আবাসন-চাষাবাদের নামে পাহাড় ন্যাড়া করা হলে ভূমিধসের মতো দুর্যোগের ট্রিগার হয়ে ওঠে টানা বৃষ্টিপাত।
তিনি বলেন, ‘৭৫ মিলিমিটার বৃষ্টি এই অঞ্চলে ভূমি ধসের আশঙ্কা সৃষ্টি করে। আর ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে অবশ্যই পাহাড়ে বসবাসরতদের নিরাপদে সরে যেতে হবে এবং ১৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি ভূমি ধসের সর্বোচ্চ সম্ভাবনা তৈরি করে। এজন্য পাহাড়ি এলাকায় বৃষ্টিপাতের মাত্রা জেনে সতর্ক বার্তা দিতে ‘রেইন গজ’ স্থাপন করা দরকার। বৃষ্টিপাতের মাত্রা বুঝে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেয়া, রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ রাখার মতো জরুরি স্ট্যান্ডার্ড অপারেশন প্রসিডিউর (এসওপি) নিতে হবে।’
অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কেটে আবাসন, রাস্তা বানাতে গিয়ে সংলগ্ন পাহাড়ী খাড়া অংশটি আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। এসব পাহাড় ধস ঠেকাতে হলে দু’টি অবকাঠামোগত ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন বলে জানান ড. মাকসুদ কামাল।
তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামের পাহাড়গুলোকে কেটে একেবারে খাড়া ঢাল বানানো হচ্ছে। এই খাড়া অংশ একেবারে গাছপালা মুক্ত থাকায় বৃষ্টির পানিতে ধসে যাচ্ছে। এজন্য এরকম খাড়া অংশে আধুনিক প্রকৌশল নীতি মেনে দেয়াল তৈরি করতে হবে। পাহাড়ে জমাট বাধা বৃষ্টির পানি ভূমি ধসের আরেক কারণ। তাই পাহাড়ের ভেতর যাতে পানি না জমতে পারে সেজন্য মাটির একেবারে ওপরের অংশ এবং ভূগর্ভের একেবারে ওপরের স্তরে ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।’
২০০৭ এর পর ২০১৭, এবারও পাহাড়ে ট্র্যাজেডি হলো জুন মাসেই। ২০০৭ সালের ১১ জুন কেবল চট্টগ্রামেই পাহাড় ধসে ১২৭ জনের প্রাণহানি ঘটেছিলো। ওই ঘটনায় উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন একটি কমিটি গঠন করেছিলো তৎকালীন সরকার। ওই কমিটির সদস্য ছিলেন এই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ।
তিনি বলেন, ‘কমিটি পাহাড় ধসের ২৮ কারণ চিহ্নিত করেছিলো। রক্ষা ও ধস ঠেকাতে ৩৬ টি সুপারিশ করা হয়েছিলো। ১০ বছরেও সেসব সুপারিশ বাস্তবায়িত হয়নি।’
ড. মাকসুদ কামালের মতো ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল খালেক সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন পাহাড় সংরক্ষণে।
তার মতে, পাহাড়কে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ করছে দখলদারদের পাহাড় চুরি। এজন্য পাহাড়ে হাউজিং, রিসোর্টের নামে অবাধ বাণিজ্য বন্ধ করতে প্রশাসনিক ব্যবস্থাগ্রহণ জরুরি। পাহাড়কে রাষ্ট্রীয় সম্পদ হিসেবে সংরক্ষণের দাবি করেন তিনি।
লঘুচাপের প্রভাবে রোববার থেকে সারা দেশে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়। সোমবার থেকে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি-বান্দরবানে শুরু হয় পাহাড় ধস। এতে ৪ জেলায় মৃতের সংখ্যা এখন পর্যন্ত ১৩৮ জন। পাহাড় ধসে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাঙামাটি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন