বলিভিয়ায় অভ্যুত্থানের চেষ্টা, সেনাপ্রধান গ্রেফতার
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2024/06/volibia-900x450.jpg)
বলিভিয়ায় অভ্যুত্থান চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে দেশটির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। তবে তা ব্যর্থ গেছে। এরই মধ্যে ব্যর্থ ওই অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী দেশটির সেনাপ্রধান জেনারেল হুয়ান হোসে সুনিয়াকে তাৎক্ষকণিকভাবে বরখাস্ত করেছেন প্রেসিডেন্ট লুইস আর্চি। এরপর তাকে গ্রেফতার করেছে দেশটির পুলিশ।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বুধবার রাজধানী লাপাজে দেশটির প্রেসিডেন্টের বাসভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবনগুলো ঘিরে অভিযান চালায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
এ সময় প্রেসিডেন্টের বাসভবনের প্রধান ফটকও ভেঙে ফেলার চেষ্টা করা হয়। সেনাবাহিনীর এই তৎপরতার নিন্দা জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট লুইস আর্চি।
স্থানীয় সময় বুধবার লাপাজের ঐতিহাসিক প্লাজা মুরিলো চত্বরে জড়ো হতে থাকেন সেনা সদস্যরা। এ সময় তাঁদের সঙ্গে ট্যাংকসহ অন্যান্য সাঁজোয়া যানও ছিল। প্লাজা মুরিলো চত্বরে বলিভিয়ার প্রেসিডেন্টের বাসভবন ও কংগ্রেস ভবন রয়েছে। অভিযানের একপর্যায়ে একটি ট্যাংক প্রেসিডেন্টের বাসভবনের ধাতব ফটক ভেঙে ফেলার চেষ্টা চালায়।
অভিযানের সময় প্রেসিডেন্টের বাসভবনের বাইরে অবস্থান করছিলেন সেনাপ্রধান জেনারেল হুয়ান হোসে সুনিয়া। তাকে ঘিরে ছিল সেনাসদস্যসহ আটটি ট্যাংক। এ সময় সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে তিনি বলেন, সশস্ত্র বাহিনী দেশে গণতন্ত্র পুনর্গঠন করতে চায়, সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। হাতে গোনা সেই একই ৪০-৫০ জনকে দেশ পরিচালনা করতে দেওয়া হবে না।
ঘটনার পরপরই হুয়ান হোসে সুনিয়াকে তার পদ থেকে বরখাস্ত করেন প্রেসিডেন্ট আর্চি। নতুন সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় হোসে উইলসন সানচেজকে। তিনি সেনাসদস্যদের তাদের ব্যারাকে ফিরে যাওয়া নির্দেশ দেন। এই আহ্বান জানান প্রেসিডেন্টও। এর কিছুক্ষণ পরই প্লাজা মুরিলো চত্বর থেকে সেনাসদস্য ও ট্যাংকগুলোকে সরিয়ে নিতে দেখা যায়।
সেনাবাহিনীর অভিযান চলাকালে টেলিভিশনে দেওয়া এক বার্তায় প্রেসিডেন্ট আর্চি জনগণকে গণতন্ত্রের পক্ষে থেকে অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান। সাবেক প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেসও জাতির প্রতি একই আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, “একটি অভ্যুত্থান ঘটছে।”
এদিকে হুয়ান হসে সুনিয়াকে সেনাপ্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে— এমন জল্পনা মঙ্গলবার থেকেই চলছিল। আগের দিন সোমবার টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেছিলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট মোরালেস যদি আবার ২০২৫ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেওয়ার চেষ্টা করেন, তাহলে তাকে গ্রেফতার করা হবে।
বলিভিয়ার ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী থেকে উঠে আসা প্রথম প্রেসিডেন্ট মোরালেস। বামপন্থী এই নেতা দেশটিতে ব্যাপক জনপ্রিয় ছিলেন। সংবিধান সংশোধন করে ২০১৯ সালে চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসার চেষ্টার পর তার সেই জনপ্রিয়তায় ধস নামে। তিনি ওই নির্বাচনে জয় পেয়েছিলেন। তবে দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে বাধ্য হয়ে পদত্যাগ করেন। দেশ ছেড়ে পালাতেও হয়েছিল তাকে। পরে লুইস আর্চি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর দেশে ফেরেন তিনি।
বলিভিয়ায় সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থান চেষ্টার নিন্দা জানিয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা লিখেছেন, “আমি গণতন্ত্র ভালোবাসি, আর চাই পুরো লাতিন আমেরিকায় গণতন্ত্র টিকে থাকুক। বলিভিয়ায় যেকোনও ধরনের অভ্যুত্থানের নিন্দা জানাচ্ছি আমরা।”
এক্সে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ বলিভিয়ার সব পক্ষকে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের প্রতি সম্মান জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন। আর যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের এক মুখপাত্র বলেছেন, বলিভিয়ার বর্তমান পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে মার্কিন প্রশাসন। একই সঙ্গে দেশটিতে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান তিনি। সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স, আল-জাজিরা, এপি
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন