বাঁচা-মরার ঝুঁকি মাথায় নিয়ে ফুটবল খেলছেন আফগান নারীরা
তাদের লক্ষ্য করে থুথু ছোঁড়া হতো, ঢিল মারা হতো, পথের পাশে বোমা পুঁতে রাখা হতো।
এসবই করা হতো কারণ আফগানিস্তানের এই নারীরা ফুটবল খেলতে চাইতেন।
তাদের কোচ হলেন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক মহিলা ফুটবল দলের সাবেক তারকা কেলি লিন্ডসে।
কিন্তু প্রাণভয়ে জীবনে কোনদিন আফগানিস্তানে পা রাখতে পারেন নি তিনি।
এই স্কোয়াড গঠিত হয় ২০১০ সালে। কিন্তু দল গঠনের আগে এর কোন কোন সদস্য জীবনেও কোন পুর্নাঙ্গ দলের সদস্য হয়ে ফুটবল খেলেননি।
কিন্তু লিন্ডসে দায়িত্ব নেয়ার দু’বছরের মধ্যে ফিফা র্যাংকিং-এ আফগান মহিলা দল ১২৬তম অবস্থান থেকে উঠে এসেছে ১০৬-এ।
কিন্তু এই সাফল্যের পরও তার দায়িত্বটা এতই ঝুঁকিপূর্ণ যে এই নারী ফুটবলারদের ট্রেনিং এবং ম্যাচগুলোর সবাই আয়োজন করতে হয় বিদেশের মাটিতে।
ঝুঁকি মাথায় নিয়ে তারা নামছেন মাঠে
লিন্ডসে যে স্কোয়াডটি গঠন করেছেন তাতে যেমন আফগানিস্তানের বর্তমান বাসিন্দা নারীরা রয়েছেন, তেমনি রয়েছে প্রবাসী আফগানরা।
কিন্তু দেশে থেকে যারা এতে খেলছেন তাদের মাথার ওপর ঝুলছে নানা ধরনের সহিংসতার হুমকি।
ঘরের নারীরা বাইরে ফুটবল খেলবেন, আফগান সংস্কৃতিতে এটা এখনও অনেকের পক্ষেই মেনে নেয়া কঠিন।
“একজন মহিলা যদি ফুটবল খেলে, তাহলে তার বাবা, মা, ভাই – সবাই সমাজের চোখে দোষী বলে বিবেচিত হয়,” বলছেন লিন্ডসে।
তিনি জানালেন, আফগান মহিলা ফুটবলের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর খালিদা পোপালের ভাইকে ছুরি মেরে প্রায় মরেই ফেলা হয়েছিল।
তার অপরাধ ছিল তার বোন ফুটবলের সাথে জড়িত।
“শুধু ফুটবলের জন্য এদের প্রতিদিন যা ভোগ করতে হয়, তা অবাক করার মতো,” বলছেন লিন্ডসে।
সর্বসম্প্রতি বিবিসির এক জরিপ থেকে জানা যাচ্ছে, আফগানিস্তানের ৭০% এলাকায় তালেবান এখনও তৎপর রয়েছে।
দেড় কোটি মানুষ, আফগানিস্তানের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক, এখন তালেবানের ছায়ায় জীবন যাপন করছেন।
ফলে ২০০১ সালে তালেবানের পতনের পর থেকে আফগান নারীরা যে স্বাধীনতা উপভোগ করছিলেন তা এখন হুমকির মুখে পড়ছে।
ফুটবল মাঠও দেখেনি অনেক খেলোয়াড়
নারী ফুটবল দলের জন্য আফগানিস্তানের বাইরে ট্রেনিং ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়।
কোচ লিন্ডসে ফোন কিংবা ইমেইলের মাধ্যমে কোচিং করান।
“দুই সপ্তাহ অন্তর আমরা ফোনে কথা বলি। প্রশিক্ষণ, পুষ্টি, দলের ভেতরের এবং দলের বাইরের অবস্থা নিয়ে কথাবার্তা হয়,” বলছেন তিনি।
“আমরা তাদের ট্রেনিং ভিডিও পাঠাই, শরীরচর্চার নির্দেশাবলী পাঠাই, ট্যাকটিকাল পাওয়ারপয়েন্ট পাঠাই যাতে তারা এগুলো বাড়িতে দেখে এসে প্রশিক্ষণে যোগ দিতে পারে।”
“এই মেয়েগুলো প্রশিক্ষণে যোগদান করে প্রচণ্ড মানসিক শক্তি নিয়ে এবং নিজের দেশ সম্পর্কে গর্ব নিয়ে,” বলছেন তিনি।
তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য বিশ্বকাপের জন্য কোয়ালিফাই করা। কিন্তু আফগান ফুটবল দল এখনও ফিফার ১০০ দেশের তালিকার বাইরে রয়েছে।
এপ্রিল মাসে শুরু হবে মহিলাদের এশিয়া কাপ। এতে একমাত্র মুসলিম দেশ হচ্ছে স্বাগতিক জর্ডান।
এই টুর্নামেন্টটি ২০১৯ সালের নারী বিশ্বকাপ ফুটবলের কোয়ালিফাইং টুর্নামেন্ট হিসেবে কাজ করবে।
সেই পথও যে আফগান নারীদের জন্য সহজ হবে না তা বলাই বাহুল্য।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন