বাংলাদেশকে কী দিয়ে গেলেন আইয়ুব বাচ্চু?
আইয়ুব বাচ্চু নিজেকে পরিচয় দিতে ভালোবাসতেন প্রথমত একজন গিটারিস্ট হিসেবে। তারপর গায়ক।
তিনি নিজেই গান লিখতেন, সুর করতেন।
দীর্ঘ কয়েক দশক ব্যান্ড সঙ্গীতের জগতকে মাতানোর পর বৃহস্পতিবার তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।
কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গীতের জগতে তিনি কতটা প্রভাব রাখতে পেরেছেন তাঁর কাজের মাধ্যমে?
শিল্পী এবং সঙ্গীত পরিচালক ফেরদৌস ওয়াহিদ বলছিলেন, আইয়ুব বাচ্চু তাঁর নিজের স্থান থেকে বাংলাদেশের সঙ্গীত জগতকে শতভাগ দিয়ে গেছেন।
তিনি বলেন, “প্রথমত তিনি একজন গিটারিস্ট, টিউনার এবং সিঙ্গার। এসব বিষয়গুলো যদি ধরি তাহলে ১০০% তিনি দিয়ে গেছেন। বেঁচে থাকলে ওভার ১০০% হতো।”
“তরুণরা যে তাকে ফলো করে, সেই ফলো করার জিনিস তিনি তরুণদেরকে দিয়েছেন।”
আইয়ুব বাচ্চু ১৯৬২ সালে চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। গানের জগতে আসেন ব্যান্ড ফিলিংস-এর মাধ্যমে। এর আগে বন্ধুদের সাথে ছোটখাট অনুষ্ঠান করতেন। কিন্তু ১৯৭৮ সাল থেকে ফিলিংস-এর সাথে তিন বছর তিনি চট্টগ্রামের বিভিন্ন হোটেলে ইংরেজি গান করেছেন।
সত্তরের দশক থেকে বাংলাদেশে শ্রোতাদের কাছে ইংরেজি গান, হার্ড-রক, ব্লুজ, অল্টারনেটিভ রক, ব্যান্ড মিউজিক – এসব জগতের পরিচয় হতে থাকে তাঁর গানের মধ্য দিয়ে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের অধ্যাপক লীনা তাপসী বলেন, আইয়ুব বাচ্চু তাঁর প্রচেষ্টা দিয়ে বাংলাদেশের ব্যান্ড মিউজিক জগতের পথিকৃৎ হয়ে থাকবেন।
“তার ধ্যান, জ্ঞান, চিন্তা এবং কঠোর সাধনা তাকে এই জায়গায় উন্নীত করেছে। এটা একদিনের বিষয়টা না। একটা কথায় বলতে চাই, তিনি যে ধারাটা তৈরি করে গেছেন সেটা অপূরণীয় থেকে যাবে।”
“মানুষ তাঁর মত করে গান গাইবে, তাঁর মত করে গিটার বাজাবে এখন।”
১৯৮০ সালের দিকে তিনি সোলস ব্যান্ডের সাথে গান করতেন। এই দলের সাথে তিনি ১০ বছর যুক্ত ছিলেন।
তারপর ১৯৯১ সালে তিনি গঠন করেন এলআরবি। তিনি একক অ্যালবাম করেছেন ১৬টি। আর ব্যান্ড অ্যালবাম করছেন ১২টি। এর মধ্যে ‘কষ্ট’ এবং ‘ফেরারি মন’ – এই দুটি অ্যালবামের গান বাংলাদেশের বড় শহর ছাড়িয়ে ছোট ছোট শহরেও আইয়ুব বাচ্চুর নামকে পরিচিত করে তোলে।
নব্বইয়ের দশকে আইয়ুব বাচ্চুর এসব হিট অ্যালবামের প্রভাব পরে বাংলাদেশের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতেও।
মিউজিক কোম্পানি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনস অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক এস. কে. শাহেদ আলী বলছিলেন, তাঁর বেশির ভাগ অ্যালবাম ব্যবসার দিক থেকে সফল অ্যালবাম। ফলে আইয়ুব বাচ্চু নিজে এবং ইন্ডাস্ট্রি উভয়েই সুবিধাভোগী হয়েছে।
মি. আলী বলেন, “ঈদের সময় বা কোন অনুষ্ঠানে কাস্টমার অপেক্ষা করে থাকতো কখন বাচ্চুর অ্যালবাম রিলিজ হবে। প্রচুর ফোন আসতো শ্রোতাদের কাছ থেকে। কোন এলাকায় অ্যালবাম দিতে দেরি হলে তারা অনেক রাগ, অভিমান করতো।”
“যখন উনার অ্যালবাম রিলিজ হত, তখন একটা আনন্দ-মূখর পরিবেশ তৈরি হতো।”
ব্যান্ডের গান ছাড়াও তিনি লোকসঙ্গীত, আধুনিক গান এবং বাংলা সিনেমার গান গেয়েছেন।
সঙ্গীত শিল্পী সামিনা চৌধুরী বলছিলেন যে আইয়ুব বাচ্চু শুধু তরুণ প্রজন্ম নয়, বরং নানা ধরণের গান গাওয়ার কারণে সব শ্রেণীর শ্রোতাদের মন জয় করতে পেরেছিলেন ।
বছর খানেক আগে বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আইয়ুব বাচ্চু বলেছিলেন, বাংলাদেশের মানুষ, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম এবং সারা বিশ্বে যারা বাংলা ভাষাভাষী মানুষ আছেন, তাদেরকে গানের মাধ্যমে জাগিয়ে রাখার জন্যই তাঁর সব রকমের প্রচেষ্টা।
-বিবিসি বাংলা
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন