‘বাংলাদেশকে কেউ করুণার চোখে দেখতে পারবে না’

বাংলাদেশকে কেউ আর করুণার চোখে দেখতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেতে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেছেন, এখন বাংলাদেশ মর্যাদা নিয়ে চলবে।

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে ইউনেস্কো বিশ্ব প্রামাণ্য ঐহিত্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে, তার সনদ সরকারি পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে দেয়ার সময় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। মঙ্গলবার রাতে গণভবনে এক অনুষ্ঠানে এই সনদ হস্তান্তর করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ, বাংলাদেশ বেতার এবং আইসিটি মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযু্ক্তি বিভাগে হাতে সনদ তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ৭ মার্চের ভাষণটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেয়ায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, আমাদের আত্মত্যাগ, সবকিছু বিশ্বে একটা মর্যাদা পেয়েছে।’

বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এরপর কেউ বলতে পারবে না বাঙালি ভিক্ষা নিয়ে চলবে, বা হাত পেতে চলবে বা দরিদ্র হয়ে চলবে। আমাদেরকে আর করুণার চোখে কেউ দেখতে পারবে না, অন্তত সেইটুকু সে মর্যাদা আমরা অর্জন করতে পেরেছি।’

আওয়ামী লীগ টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় এই অর্জন সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘২০০৮ সালে নির্বাচনে জিতে ২০০৯ সালে সরকার গঠন করি। আর এই সরকারের ধারাবাহিকা ছিল বলেই অর্থাৎ আর ২০১৪ সালে নির্বাচনে জিতে আমরা ক্ষমতায় আসতে পেরেছিলাম বলেই আজকে স্বল্পোন্নত দেশ না, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছি।’

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত বাঙালির জীবন থেকে ২১টা বছর নষ্ট হয়েছে বলেও মনে করেন শেখ হাসিনা।

উন্নয়নের সব প্রেরণা, সবটুকু জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দান বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘তিনি কখনও নিজের দিকে তাকাননি। মানুষের দিকে তাকিয়েছেন, মানুষের জন্য কাজ করেছেন।’

‘তিনি (বঙ্গবন্ধু) সব সময় বাংলাদেশকে একটা ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত সোনার বাংলা গড়ে ‍তুলবেন। এ কথাটা তার বক্তৃতায় সব সময় এসেছে। আমরা মনে করি, সেই দিন খুব বেশি দেরি না, যেদিন আমরা ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, সোনার বাংলাদেশ হিসেবে আমরা গড়ে তুলতে পারব, সে বিশ্বাস আমাদের রয়েছে।’

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, ১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে সব রাজনৈতিক আন্দোলনে তার ভূমিকার কথাও স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘তার (বঙ্গবন্ধু) ভেতরে যে বাংলাদেশকে স্বাধীন করার একটি চেতনা ছিল, সেটি পরিবারের সদস্য হিসেবে হিসেবে আমাদের কাছে স্পষ্ট ছিল। কিন্তু এটা মুখে বলা নিষেধ ছিল।’

৭ মার্চের ভাষণের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তিনি (বঙ্গবন্ধু) জানতেন ভাষণ দেয়ার পর তাকে মেরে ফেলতে পারে, গ্রেপ্তার করা হতে পারে। তিনি ধরে নিয়েছিলেন তাকে তাকে মেরেই ফেলা হবে।’

৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর সরাসরি স্বাধীনতা ঘোষণা না দেয়ার বিষয়ে তার কন্যা বলেন, ‘যদি তিনি একতরফাভাবে ঘোষণা দিয়েই দিতেন, তাহলে কিন্তু বিচ্ছিন্নতাবাদী বলা হতো।’

‘তিনি একটা কথাই বলতেন, ‘আমরা তো সংখ্যাগরিষ্ঠ, সংখ্যাগরিষ্ঠরা কীভাবে বিচ্ছিন্নতাবাদী হয়?’

৭ মার্চের ভাষণের আবেদন এখনও রয়ে গেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যখনই শুনি মনে হয়, তখনই শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠে, এই ভাষণটা এখনও আমাদের জন্য কত প্রযোজ্য, কত সজীব।’

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সেনা শাসকরা ক্ষমতায় এসে ভাষণটা বাজাতে দিত না জানিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘শত বাধা অতিক্রম করেই আমাদের নেতা-কর্মীরা মনে হয় জেদ নিয়েই ভাষণটা বাজাতো।’

‘জাতির পিতাকে হত্যার পর নেতা-কর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়েও বাজিয়েছে। জানি না এটা হিসাব করতে পারব কি না, যে কত দিন, কত ঘণ্টা, কত মিনিট এই ভাষণটি বেজেছে।’

‘পৃথিবীতে কিন্তু কোনো ভাষণ একবারই সবাই শুনেছে। তার পর কিন্তু এর পুনরাবৃত্তি হয় না। সেই দিক থেকেও ৭ মার্চের ভাষণটি একটি অনন্য দৃষ্টান্ত।’

১৯৭৫ এর পর বাঙালিদেরকে মাথা নিচু করেই চলতে হতো জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘একদিকে খুনির দেশ, জাতির পিতাকে হত্যা করে, অন্যদিকে আর্থসামাজিক দিক থেকে বিধ্বস্ত অবস্থা, দারিদ্র্যের হাহাকার, বঞ্চনা সবকিছু ফিরে এসেছিল। সেখান থেকে আস্তে আস্তে আমরা মুক্তি পেয়ছি।’

‘আজকে আর্থ সামাজিক উন্নয়নে আন্তর্জাতিকভাবেও আমরা স্বীকৃতি পেয়েছি। একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ, মাত্র সাড়ে তিন বছরে বাংলাদেশটাকে তিনি একটি স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে রেখে গিয়েছিলেন। এই দেশটা আরও উন্নত হওয়ার সুযোগ ছিল।’

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘরের ট্রাস্ট মফিদুল হকও এ সময় বক্তব্য রাখেন।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন, মুক্তিযুদ্ধ বিয়ক মন্ত্রী আ কম ম মোজাম্মেল হক, আইসিটি মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আখতারুজ্জামান, শিক্ষাবিদ আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী, শিল্পী হাশেম খান প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।