বাংলাদেশে যতবার শকুন পড়েছে, ততবার এই জিয়া পরিবার এসে নেতৃত্ব দিয়েছে’- এমন মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক জোট কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব কবি সেলিম বালা।

ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার নিজ গ্রাম মুখুরিয়া বাজারে শনিবার রাতে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি এসব মন্তব্য করেছেন।

তিনি বলেন, এই বাংলাদেশে দীর্ঘ সময় ধরে রাজনৈতিক ভাবে নোংরা খেলা চলে আসছিল। আপনারা জানেন নির্বাচন ছিল এক ধরনের প্রহসন, কুক্ষিগত করা হয়েছিল বিচার ব্যবস্থা, আদালত ছিল তাদের ফরমাইশি রায় বাস্তবায়ন করার এক নিরাপদ আশ্রয়।

সর্বস্তরে ছিল দুর্নীতি, মানুষ হারিয়েছিল তার কথা বলার অধিকার, লুণ্ঠিত হয়েছিল গণতন্ত্র। দেশের সে সময়ে বিএনপির সকল নেতা কর্মী তথা গণতন্ত্রী মানুষকে সময়ের উপযোগী দিক নির্দেশনা দিয়ে এগিয়ে নিয়ে আসলেন তারুণ্যের অহংকার লক্ষ কোটি মানুষের প্রিয় নেতা দেশনায়ক তারেক রহমান।

আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ভেতরে ভেতরে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠল কৃষক, শ্রমিক, বুদ্ধিজীবী, ছাত্র, সর্বস্তরের মানুষ। একটা ন্যায্য দাবিকে সামনে রেখে ছাত্ররা, আমাদের সন্তানরা রাস্তায় নেমে এলে তাঁদের উপরে গুলি করা হল। তখন একসাথে বারুদের মতো জ্বলে উঠল সমগ্র বাংলাদেশ। শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছেড়ে পালালো ইতিহাস হলো ২০২৪ এর জুলাই বিপ্লব।

তিনি বলেন, অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই বাংলাদেশ, এই স্বাধীন রাষ্ট্র। এই দেশ কারো বাপ-দাদার পৈর্তৃক সম্পত্তি নয়, যে ক্ষমতায় এসেই গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করে একদলীয় বাকশাল কায়েম করবে, ক্ষমতায় এসেই জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করে দিনের ভোট রাতে করবে এসব কাউকে করতে দেওয়া হবে না।

১৯৭১ সালে যেমন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দেশকে বাঁচাতে প্রকাশ্যে যুদ্ধ করেছিলেন, ’৯০ এর গণঅভ্যূত্থানে যেমন রাস্তায় নেমে এসে নেতৃত্ব দিয়ে স্বৈরশাসক এরশাদের পতন ঘটিয়েছিলেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং সর্বশেষ তারেক রহমানের দীর্ঘদিনের সুপ্ত নির্দেশনায় সোনালী ফসল স্বৈরাচার হাসিনার পতন।

ঠিক তেমনই এই বাংলাদেশে যতবার শকুনের চোখ পড়বে ততবার এই জিয়ার পরিবার নেতৃত্ব দেবে। ততবার আমরা এই জাতীয়তাবাদী আদর্শের সৈনিকেরা কঠিন হাতে তাদেরকে প্রতিহত করব।

কবি সেলিম বালা আরও বলেন, বাঙালিরা বীরের জাতি, এই জাতি কখনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেনি। সেই ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ’৬৯ এর গণঅভ্যূত্থান, ’৭১ এর স্বাধীনতা সংগ্রাম, ’৯০ এর স্বৈরশাসকবিরোধী আন্দোলন এবং ২০২৪ এর জুলাই বিপ্লব। আমরা বার বার অন্যায়ের কাছে মাথা নত করিনি, অন্যায়ের কাছে পরাজিত করেছি, প্রতিহত করেছি। বুকের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে রাজপথ, আমরা তাতেও মাথা নত করিনি। আমরা বার বার বাংলার আকাশে উড়িয়েছি বিজয়ের পতাকা, সৃষ্টি করেছি নতুন ইতিহাস।

দীর্ঘ ১৬/১৭ বছর পর বাংলাদেশ স্বৈরশাসন মুক্ত হয়েছে, দেশের মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করেছে। সবার মধ্যে একটি আকাঙ্ক্ষা তারা ভোট দিতে চায়, তারা নির্বাচন চায়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দিকে তাকিয়ে আছে সারা দেশের মানুষ। আমরা আশা করছি, একটা সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে অচিরেই এই সরকার নির্বাচিত প্রতিনিধির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে।

আমরা চাই, এই বাংলাদেশে একটা সুষ্ঠ গণতান্ত্রিক ধারা ফিরে আসুক। কোন মারামারি থাকবে না, কাটাকাটি থাকবে না। মানুষ নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে যাবে তার পরে ভোট দিয়ে আসবে।

কয়েকবার আমি সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলাম কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার তো নির্বাচনকে নির্বাচন রাখেনি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ-৩ গৌরীপুর আসন থেকে আমি ধানের শীষের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছি।

মত-বিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি মাওলানা মোঃ আব্দুল হাদী খন্দকার। কবি জিল্লুর রহমান টিটুর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ময়মনসিংহ উত্তর জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান সোহেল, এম আর করিম উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক নাজমুল ইসলাম জুয়েল প্রমুখ।