বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে এবার তেলের পাইপলাইন তৈরি হচ্ছে
বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের পর বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে এবার তেল পরিবহন লাইন নির্মাণ হতে যাচ্ছে। মঙ্গলবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৫ টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পাইপলাইনটির নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেদ্র মোদি।
ভারতের আসামের নুমালিগড় তেল পরিশোধনাগার থেকে বাংলাদেশের পার্বতীপুর তেল ডিপো পর্যন্ত ১৩০ কিলোমিটার পাইপলাইনটি নির্মাণ করা হবে। এজন্য বাংলাদেশেকে ৫২০ কোটি টাকা অনুদান হিসেবে দেবে ভারত।
কয়েক বছর ধরে দেশের মধ্যে তেল পরিবহন ব্যবস্থায় পাইপলাইন নির্মাণের বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রামের সরাসরি পাইপলাইন নির্মাণের কথা থাকলেও ওই প্রকল্প আলোর মুখ দেখেনি। যদিও এর মধ্যেই বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে জ্বালানি তেলের পাইপলাইন নির্মাণ করা হচ্ছে।
জ্বালানি বিভাগ জানায়, বিদ্যুৎ এবং জ্বালানিখাতে সহায়তা সম্প্রসারণের জন্য ২০১০ সালে উভয় দেশ সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করে। এরপর থেকে বিদ্যুৎখাতে সহায়তা সম্প্রসারণের প্রক্রিয়া গতি পায়। এছাড়া জ্বালানিখাতে তেল আমদানি ও এলপিজি সম্প্রসারণ বিষয়ে নানা প্রকল্প নিয়ে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করে। এরমধ্যে নুমালিগড় তেল পরিশোধনাগার থেকে ডিজেল কেনার চুক্তি করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। রেলওয়ের মাধ্যমে ২০১৬ সালের জুনে তেল আমদানি শুরু করে বাংলাদেশ। পরিবহন ব্যয় নিয়ন্ত্রণ ও তেল পরিবহনের ঝামেলা সামাল দিতে উভয় দেশ পাইপলাইন নির্মাণ করছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের জ্বালানি তেলের বেশিরভাগই চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে দেশে আনা হয়। দেশের বাৎসরিক জ্বালানি চাহিদা প্রায় ৬০ লাখ মেট্রিক টনের মধ্যে ১৫ লাখ মেট্রিক টন দেশে পরিশোধন করা হয়। অবশিষ্ট পরিশোধিত তেল আমদানি করে বিপিসি। দুই দেশের সরকারি পর্যায়ে চুক্তির পর ২০১৬ সালের ১৯ জুন ভারত থেকে প্রথম ট্রেনে করে জ্বালানি তেল আসে।
এ বিষয়ে বিপিসি’র চেয়ারম্যান মো. আকরাম-আল-হোসেন বলেন, ‘ভারত এই প্রকল্পের ঠিকাদার নিয়োগ করবে। আমরা শুধু আমাদের অংশে জমি অধিগ্রহণ করে দেবো। আমরা হিসাব করে দেখেছি, আমাদের ব্যারেল প্রতি এক দশমিক ৮৭ ডলার সাশ্রয় হবে।’ এর ব্যাখ্যায় বিপিসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা এখন তেল আমদানিতে প্রতি ব্যারেলে ৩ দশমিক ১৫ ডলার প্রিমিয়াম দিয়ে থাকি। এছাড়া বহির্নোঙ্গর থেকে চট্টগ্রাম হয়ে থেকে খুলনার দৌলতপুর পর্যন্ত নৌপথে পরিবহন করতে হয়। এরপর রেলওয়েতে পার্বতীপুর পর্যন্ত নিতে আমারে ব্যারেল প্রতি সাড়ে সাত ডলার খরচ হয়। আবার ভোক্তার কাছে পৌঁছে দিতেও খরচ হয়। সব মিলিয়ে এই খরচ ব্যারেল প্রতি দাঁড়ায় সাত দশমিক ৩৭ ডলার। এখন ভারতকে আমরা প্রতি ব্যারেলে সাড়ে ৫ ডলার করে প্রিমিয়াম দিলেও বাৎসরিকভাবে ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা লাভ হবে।’
বিপিসি সূত্র জানায়, মোট ১৩০ কিলোমিটার পাইপ লাইনের মধ্যে ভারতে পড়েছে মাত্র ৫ কিলোমিটার আর বাংলাদেশ অংশে পড়েছে ১২৫ কিলোমিটার। ভারত সীমান্ত এলাকা থেকে পাবর্তীপুর তেল ডিপো পর্যন্ত ১২৫ কিলোমিটার পাইপলাইন বসানোর জমি অধিগ্রহণ করে দেবে বিপিসি। ভারত এই প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান করবে এবং পাইপলাইন নির্মাণ করে দেবে। পাইপ লাইনের ১৩০ কিলোমিটারের মধ্যে জিরো পয়েন্টে মিটার বসানো হবে। সেখানে দুই দেশেই মিটারে তেলের সরবরাহ এবং গ্রহণের পরিমাণ দেখতে পারবে।
জানা যায়, বাৎসরিক ১০ লাখ মেট্রিকটন পরিবহন ক্ষমতার এই পাইপলাইন দিয়ে শুধু দেশের উত্তরাঞ্চলের চাহিদা মেটানোর মতো ভারত থেকে ডিজেল আমদানি করা হবে। চুক্তির ১৫ বছরের মধ্যে প্রথম তিন বছর আড়াই লাখ মেট্রিক টন, পরের তিন বছর তিন লাখ মেট্রিকটন, পরবর্তী চার বছর (৭ম থেকে ১০ম বছর) পর্যন্ত আসবে সাড়ে তিন লাখ মেট্রিক টন এবং পরবর্তী পাঁচ বছর (১১তম থেকে ১৫তম) বছর আসবে চার লাখ মেট্রিক টন করে। জ্বালানি বিভাগ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য এরমধ্যে বিস্তারিত প্রস্তুতি নিয়েছে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী ভারত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির উদ্বোধন করেন। এক সপ্তাহের ব্যবধানে এটি প্রতিবেশী দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বিতীয় ভিডিও কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন