বাংলা একাডেমি পুরস্কার : আলোচনা-সমালোচনায় শেষ হলো ঘোষণা

বাংলা একাডেমি ঘেরাও কর্মসূচি, প্রত্যাখ্যান, প্রত্যাহার এবং নির্বাহী পরিষদ থেকে পদত্যাগের মধ্য দিয়ে শেষ হলো বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ঘোষণার কার্যক্রম। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখকদের হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনুস।

গত ২৩ জানুয়ারি বাংলা একাডেমি নির্বাহী পরিষদের অনুমোদনে মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে ঘোষণা করা হয়, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪ পাচ্ছেন ১০ জন কবি ও লেখক। তারা হলেন—কবিতায় মাসুদ খান, কথাসাহিত্যে সেলিম মোরশেদ, নাটক ও নাট্যসাহিত্যে শুভাশিস সিনহা, প্রবন্ধ/গদ্যে সলিমুল্লাহ খান, শিশুসাহিত্যে ফারুক নওয়াজ, অনুবাদে জি এইচ হাবীব, গবেষণায় মুহম্মদ শাহজাহান মিয়া, বিজ্ঞানে রেজাউর রহমান, মুক্তিযুদ্ধে মোহাম্মদ হাননান এবং ফোকলোরে সৈয়দ জামিল আহমেদ।

ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪ প্রস্তাবক কমিটি’র প্রস্তাবনার পরিপ্রেক্ষিতে এবং ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার কমিটি ২০২৪’-এর সিদ্ধান্তক্রমে বাংলা একাডেমি নির্বাহী পরিষদ ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪’ অনুমোদন করে।

পুরস্কার ঘোষণার পর আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। বিক্ষুব্ধ কবি-লেখক সমাজের ব্যানারে বাংলা একাডেমি ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। বৈষম্যযুক্ত বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রত্যাখ্যান ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান থেকে ফ্যাসিবাদের মূলোৎপাটনের দাবি তোলে সংগঠনটি। এ সংগঠনের প্রতিবাদ এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনার মুখে পুরস্কারের জন্য ঘোষিত নামের তালিকা স্থগিত করা হয়। সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ২৫ জানুয়ারি নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এ কথা জানান।

এরপর মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতেও বলা হয়, পূর্বঘোষিত তালিকা অনধিক তিন কর্মদিবসের মধ্যে পুনর্বিবেচনার পর পুনরায় প্রকাশ করা হবে। তবে পুরস্কারের তালিকা স্থগিত করার পরও সমালোচনা বাড়তে থাকে। এরই মধ্যে কথাসাহিত্যিক সেলিম মোরশেদ পুরস্কারের তালিকা থেকে নিজের নাম প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।

অপরদিকে নির্বাহী পরিষদের সদস্য মোরশেদ শফিউল হাসানও পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তিন কর্মদিবস পেরিয়ে ২৯ জানুয়ারি রাত ১১টা ৪৪ মিনিটে একাডেমির ফেসবুক পেজে পুনরায় পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। সংশোধিত তালিকায় তিনজনের নাম বাদ দেওয়া হয়। এতে বাদ পড়েন—মোহাম্মদ হাননান, ফারুক নওয়াজ ও সেলিম মোরশেদ।

সভায় স্থগিতকৃত পুরস্কৃত লেখক তালিকা নিম্নোক্তভাবে চূড়ান্ত করা হয়:
ক. কবিতায় মাসুদ খান
খ. নাটক ও নাট্যসাহিত্যে শুভাশিস সিনহা
গ. প্রবন্ধ/গদ্যে সলিমুল্লাহ খান
ঘ. অনুবাদে জি এইচ হাবীব
ঙ. গবেষণায় মুহম্মদ শাহজাহান মিয়া
চ. বিজ্ঞানে রেজাউর রহমান
ছ. ফোকলোরে সৈয়দ জামিল আহমেদ।

চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর ড. মোহাম্মদ হাননান তার নাম বাদ দেওয়ায় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠান। বিবৃতিতে তিনি লিখেছেন, ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪ প্রাপ্তির তালিকা থেকে আমার নাম বাদ দেওয়ায় আমি কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

এ ছাড়া নির্বাহী পরিষদের আরেক সদস্য সাজ্জাদ শরিফও পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বলে গণমাধ্যমের কাছে স্বীকার করেছেন। সাজ্জাদ শরিফ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলা একাডেমি এবং একাডেমির মহাপরিচালক, নির্বাহী পরিষদের পদগুলোর মর্যাদা ক্ষুণ্ন হওয়ায় নৈতিক কারণে আমার পক্ষে এই পদে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়। আমি পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছি।’

আট বছর আগে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছিলেন কথাসাহিত্যিক মোরশেদ শফিউল হাসান। এবারের পুরস্কার কমিটিতে জুরি বোর্ডের সদস্য ছিলেন তিনি। তিনি বলেন, ‘লেখকের বিষয়ে গোয়েন্দা রিপোর্ট এবং তার অতীত রাজনৈতিক পরিচয় বা কার্যক্রম বিবেচনায় আনতে হবে, এমন ধারণা আমাদের কারো চিন্তায় আসেনি। আসা উচিত ছিল হয়তো!’

নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ঘোষিত সাত কবি-লেখকের হাতে উঠবে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার। বাংলা একাডেমির ইতিহাসে বছরটি আলোচিত হয়ে থাকবে। বাংলা একাডেমিও ভবিষ্যতে পুরস্কার ঘোষণার ক্ষেত্রে আরও সতর্কতা অবলম্বন করবে বলে ধারণা কবি-লেখকদের।