‘বাংলা বর্ষবরণ থেকে সাম্প্রদায়িকতার ছোবল দূরীভূত হোক’
আমিন মুনশি : প্রত্যেক জাতির একটি নিজস্ব ইতিহাস-ঐতিহ্য থাকে । একান্ত কিছু রীতি ও আচরণিক বৈশিষ্ট্য থাকে । থাকে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ সাংস্কৃতিক পরিচয় । এসবের মধ্য দিয়েই ফুটে উঠে সেই জাতির সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ধর্মীয় বিশ্বাস ও মূল্যবোধের প্রভাব।
আবহমানকাল থেকে বছর বা সাল গণনার জন্য বছরের প্রথম দিনটিতেই নতুন বছরের আগমন উপলক্ষে নানা রকম আনুষ্ঠানিকতার রেওয়াজ চলে এসেছে । এটাকে নববর্ষ উদযাপন আবার বর্ষবরণও বলা হয়ে থাকে । গ্রীক তথা ইংরেজি সনের ধারক ও বাহক হচ্ছে পশ্চিমের খ্রিষ্টানপ্রধান দেশগুলো । তাই তাদের বর্ষবরণের পদ্ধতিতে খ্রিস্ট ধর্মের প্রভাব সুস্পষ্ট । ইরান একটি ইসলামি প্রজাতন্ত্র; তাই তাদের নওরোজ বা নববর্ষ উদযাপনেও ইসলামি রীতি-আচরণের প্রভাব আবশ্যিকভাবে সুস্পষ্ট । এটা হতেই পারে । একজন মানুষের সবকাজের মধ্যেই তার বিশ্বাস ও আদর্শের ছাপ থাকবে- এটাই তো স্বাভাবিক । এতে কারো রাগ বা দুঃখ করার কিছু নেই । প্রতিবাদ করারও অধিকার নেই । তবে প্রতিবাদ বা সমালোচনার বিষয়টি তখনই আসে যখন কোন জাতির উৎসব পালনে সেই জাতির নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ভিনদেশি রীতি বা বিজাতীয় অপসংস্কৃতিকে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয় ।
আমাদের এই বাংলাদেশ একটি উদার মুসলিম গণতান্ত্রিক দেশ । এদেশের প্রায় ৯২ভাগ মানুষ কুরআন-সুন্নাহের আদর্শে বিশ্বাসী । বাকি আরো যেসব আদর্শের মানুষ এখানে বসবাস করেন তারা প্রত্যেকে তাদের স্ব স্ব আচার-আচরণ নির্বিঘ্নে পালন করে থাকেন । তারপরও কিছু কুচক্রিমহল এদেশে নানা সময়ে নানা উপায়ে বিষবাষ্প ছড়াতে উন্মুখ । সংখ্যগরিষ্ট মুসলিম দেশ হিসেবে অন্যান্য জাতীয় উৎসবের মত বাংলা নববর্ষ উদযাপনেও মুসলিমদের আদর্শ বা কৃষ্টি-কালচার এখানে প্রাধান্য পাওয়ার কথা ছিল । কিন্তু হচ্ছে এখন তার উল্টো । প্রগতিশীলতার কথা বলে একটি নির্দিষ্ট আধিপত্যবাদের সংস্কৃতি গোটা জাতির উপর চাপানোর চেষ্টা করা হচ্ছে । ধর্মনিরপেক্ষতার দৃষ্টিতেও যে বিষয়টি অগ্রহণযোগ্য এবং সাম্প্রদায়িক চক্রান্ত বলে বিবেচিত । রাখিবন্ধন, ভাইফোঁটা, সিঁদুর, তিলক, উল্কি- এসবের সাথে হিন্দু ধর্মের মৌলিক সম্পর্ক বিরাজমান । মঙ্গল প্রদীপ, মুখোশ, প্রতিমা, ঢোল-বাদ্য হিন্দুদের পূজা মণ্ডপের সুনির্দিষ্ট আবশ্যিক বৈশিষ্ট্য । অথচ এগুলিকেই প্রচার করা হচ্ছে বাঙালি সংস্কৃতি বলে।
ভারতীয় আধিপত্যবাদ বিস্তারে দীর্ঘদিন ধরে যারা কাজ করছেন তারাই জাতীয় ঐতিহ্যকে এভাবে পদদলিত করার দুঃসাহস দেখাচ্ছেন। হিন্দুত্ববাদী সংস্কৃতি যেমন এ দেশের অধিকাংশ মানুষের জীবনাদর্শের প্রতিনিধিত্ব করেনা ঠিক তেমনি সাম্প্রদায়িকতার এই অপচ্ছায়াকে শিগগিরই দূরীভূত করা না গেলে এর ছোবল থেকে রক্ষা করা যাবেনা এদেশের প্রকৃতি ও শান্ত পরিবেশকে!!!
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন