বাইক ও কারের বিরুদ্ধে মামলা, বাসের নিয়ন্ত্রণ কোথায়?
বাংলাদেশের ঢাকায় পুলিশের ট্রাফিক সপ্তাহ চলার মধ্যেই বাস চাপায় সেনাবাহিনী পরিচালিত একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর সড়ক ব্যবস্থাপনা আবারও প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
সাড়ে ছ’মাস আগে ঢাকায় বাসের চাপায় স্কুল শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে নগরীর স্কুল শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছিল। সে সময় সরকার বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়ার কথা বললেও সেসব এখনও চোখে পড়ছে না।
আবরার আহম্মেদ চৌধুরীর নিহত হওয়ার পর তার সহপাঠীরা ঢাকার রাস্তায় দু’দিন ধরে বিক্ষোভ করেছেন। তাদের একটাই প্রশ্ন ছিল – এর আগে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বিভিন্ন আশ্বাস দেয়া হলেও এখনও কেন সড়কে বিশৃঙ্খলা এবং অরাজকতা থামছে না?
বিক্ষোভকারীদের মধ্যে একজন নারী শিক্ষার্থী বলছিলেন, “প্রশাসন কিছুই করছে না। ছয় মাস আগেও অনেক দুর্ঘটনা হয়েছে। তারপর আমরা মার খেলাম। অনেক কিছু হলো। কিন্তু এখনও প্রতিশ্রুতি সব প্রশাসনে জমে আছে।”
বাস চলাচলে শৃঙ্খলা কোথায়?
ঢাকা নগরীর রাস্তায় এবং সারাদেশে সড়কপথে যোগাযোগ নির্ভরশীল বেসকারিখাতের বাসের ওপর।
আর তাই এই বেসরকারি পরিবহন নিয়ে যত অভিযোগ। সড়ক দুর্ঘটনার কথাই যদি বলা যায়, তাহলে বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশে গত বছরে পাঁচ হাজারেরও বেশি সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে এবং এর বেশির ভাগই ঘটেছে বাসের কারণে।
কিন্তু রাস্তায় বাস চলাচলে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ উঠেছে।
বুয়েটের অধ্যাপক শামসুল হক বলছিলেন, ২০১৫ সালে পরিবহন খাতের সমস্যাগুলো এবং সমাধানের উপায় চিহ্নিত করা হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই।
“বিশৃঙ্খলা এবং উগ্র প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বাস যারা চালাচ্ছে, তাদের সাথেই কিন্তু সংঘর্ষ হচ্ছে। বাসের চলাচল যতদিন না শৃঙ্খলায় আনা যাবে, ততদিন কোনো লাভ হবে না। বাকিগুলো উপসর্গ।”
মোটর সাইকেল এবং ব্যক্তিগত গাড়ির বিরুদ্ধেই শুধু মামলা?
ঢাকা নগরীতে পুলিশের যে ট্রাফিক সপ্তাহ চলছে, তাতে প্রতিদিন যানবাহনের বিরুদ্ধে কয়েক হাজার করে মামলা হচ্ছে। এসব মামলা হচ্ছে মূলতঃ মোটর সাইকেল এবং ব্যক্তিগত গাড়ির বিরুদ্ধে।
বাস চলাচলে নানা অভিযোগ থাকলেও সেদিকে নজর নেই। বাস-ট্রাক বা বড় পরিবহন চলাচলে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার বিষয়কে গুরুত্ব না দেয়ার অভিযোগ মানতে রাজি নন ঢাকার পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া।
তবে তিনি স্বীকার করেছেন যে, বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা বলা হলেও সেগুলো দৃশ্যমান হচ্ছে না।
“অনেকগুলো বিষয় আছে, যেগুলো আসলে আমরা দৃশ্যমান করতে পারিনি। কারণ আমাদের কিছু অবকাঠামো দরকার। যেমন ধরেন, বাসস্টপেজগুলো আমরা চিহ্নিত করেছি, সেখানে যাত্রী ছাউনী নির্মাণ করতে হবে। রোড মার্ক করা দরকার।”
তিনি বলেন, “আর এই যে ভাড়া চুক্তিতে গাড়ি চালাচ্ছে, এটা বন্ধ করা দরকার। এসব কারণে আমরা যে ব্যবস্থাগুলো নিচ্ছি, সেগুলোতে আশাপ্রদভাবে ফল আসছে না।”
“সব কিছুর সমন্বয় হলেই একটা ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে। এবং এই সমন্বয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মাধ্যমে করা হচ্ছে।”
তবে অধ্যাপক শামসুল হক মনে করেন, কোনো পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বাস মালিক-শ্রমিকদের সংগঠনের রাজনৈতিক প্রভাব।
তিনি বলেছেন, এখনকার পরিস্থিতিতে সরকারের রাজনৈতিক ইচ্ছা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
“রাজনীতির পেশী আছে এখানে। অর্থের ইন্টারেস্ট আছে। এখানে অনেক পক্ষ জড়িত হয়ে গেছে। সিন্ডিকেট আছে। এর সবই জানা।”
মি. হক বলেন, “তৃতীয় মেয়াদের এ সরকার এসে নতুন করে বিচার বিশ্লেষণের কোনো দরকার নেই। এখন অ্যাকশনে যাওয়ার কথা। এটা ট্যাকনিক্যাল সমাধান নয়। রাজনৈতিকভাবে এর সমাধান দিতে হবে।”
সরকারের একাধিক সিনিয়র মন্ত্রী দাবি করেছেন, বিষয়টিতে তারা রাজনৈতিক গুরুত্ব দিয়ে সমাধানের পরিকল্পনা নিচ্ছেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন