বাগেরহাটের শরণখোলায় অগ্নিকান্ডে ২০ দোকান পুড়ে ক্ষতি ১০ কোটি, আহত ১৬, তদন্ত কমিটি গঠন

বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলা সদর রায়েন্দা পাঁচরাস্তা মোড়ের ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ১১টি দোকান সম্পূর্ণ ভষ্মিভ‚ত হয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৯টি দোকান। এনিয়ে মোট ২০ টি দোকানের মালামাল ও অবকাঠামো মিলিয়ে কমপক্ষে ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এমনটাই দাবি করেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসয়ী ও বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটি নেতারা।

বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) রাত আনুমানিক ১০টার দিকে এই অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ও স্থনীয় শত শত মানুষ আগুন নেভাতে ছুটে আসেন। তাদের প্রায় দেড় ঘন্টার চেষ্টায় আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে বৃষ্টি শুরু হলে আগুন সম্পূর্ণ নিভে যায়।

পোড়া এবং ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মুদি, মিষ্টি, ওষুধের ফার্মেসী, ইলেট্্রনিক্সসহ বিভিন্ন পণ্যের দোকান ছিল। আগুন নেভাতে গিয়ে আহত হয়েছেন অন্তত ১৬জন। এদের মধ্যে গুরুতর আহত চার জন শরণখোলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

এদিকে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমান জানতে উপজেলা প্রশাসন থেকে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে ফায়ার সার্ভিসের ধারণা, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে এই আগুনের সূত্রপাত হয়েছে।
মেসার্স রহমান স্টোরের মালিক আব্দুর রহমান জানান, তার মুদি দোকানসহ দুটি গুদাম সম্পূর্ণ পুড়ে প্রায় ৮০লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। মেসার্স ইব্রাহিম স্টোরের মালিক মো. ইব্রাহিম ফকির জানান, তার মুদি দোকানের ৮৫ লাখ টাকার মালামাল পুড়ে গেছে।

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও ঘর মালিকরা জানান, লাখ লাখ টাকা ব্যাংক ও বিভন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে আনছিলেন। আগুনে তাদের সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। তারা নতুন করে ব্যবসা শুরু করতে পারবেন কিনা সে নিশ্চয়তাও নেই। তারা এই ঋণ কিভাবে শোধ করবেন তাও জানা নেই তাদের। তারা যাতে আবার ঘুরে দাড়াতে পারেন সেজন্য সরকারের কাছে আর্থিক সহায়তার দাবি জানিয়েছন।

রায়েন্দা বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান বাবুল তালুকদার জানান, আগুনে ১১টি দোকান ও মালামাল সম্পূর্ণ ছাই হয়ে গেছে। ৯টি দোকান আংশিক আংশিক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও ঘর মালিকদের তালিকা তৈরীর কাজ চলছে।

শরণখোলা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের বারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আফতাবি আলম জানান, কাছাকাছি পানির উৎস না থাকায় তাদের মারাত্মক সংকটে পড়তে হয়। যে কারণে আগুন নেভাতে সময় লেগেছে। ধারণা করা হচ্ছে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট তেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে।

শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুদীপ্ত কুমার সিংহ বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে পাঠানো হবে। সেখান থেকে যে বরাদ্দ আসবে তা ক্ষতিগ্রস্তরে বিতরণ করা হবে।

ইউ এন ও সুদীপ্ত কুমার সিংহ বলেন, আগুন সঠিক কারন ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করেত উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেবব্রত সরকারকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন দিনের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে তাদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

শরণখোলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রায়হান উদ্দিন আকন শান্ত বলেন, আগুনে একেকজন ব্যবসায়ীর যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা অপুরণীয়। বিপদে সবাইকে ধৈর্ষধারণ করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগীতার চেষ্টা করা হবে।