বাগেরহাটের শরণখোলায় কৃষিতে লাইলি বেগমের সফলতা

বসতবাড়ির চারপাশে কৃষি,ফলের বাগান ও সবজি চাষ করে বদলে গেছে লাইলি বেগমের ভাগ্য। নিজ বাড়িকে খামার বানিয়ে নারী উদ্যোক্তা হিসেবে সফল ৩৯ বছর বয়সী লাইলি বেগম। কৃষি অফিসের পরামর্শ ও সহযোগীতায় দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করে পুরুষদের পেছনে ফেলে লাইলি বেগম এখন স্বাবলম্বী।

বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার ধানসাগর ইউনিয়নের রতিয়া রাজাপুর গ্রামের মৃত শাহাদাৎ সেপাইয়ের স্ত্রী লাইলি বেগম। ২০১৮ সালে লাইলি বেগমের স্বামী কামাল সেপাই ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর আগে চিকিৎসার জন্য সবটুকু খুইয়েও বাঁচাতে পারেননি প্রিয় মানুষটাকে। এরপর স্বামীহারা লাইলি বেগমের সংসারে নেমে আসে শিমাহীন কষ্ট।

সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে অভাব অনটনে চলে জীবন। তবুও মনোবল শক্ত করে সন্তানদের শিক্ষিত করা এবং অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেন এই নারী। স্বপ্ন অনুযায়ী নিজ বাড়িকে রোজগারের একমাত্র পথ হিসেবে বেছে নেন তিনি।

এনজিও থেকে লোন নিয়ে ২৩ কাঠা জমির ওপর করা বাড়ির পুকুরে মাছ চাষ এবং কৃষি অফিসের পরামর্শ ও সহযোগীতা নিয়ে বাড়ির পেছনের অংশে পেপে বাগান, পেয়ারা বাগানসহ পুরো বাড়ি জুড়ে করেন সবজি ক্ষেত। সম্প্রতি কৃষি আফিসের সহযোগীতায় বাড়ির আঙিনায়ও আলাদা আলাদা সেড করে বিভিন্ন প্রকার সবজির চাষ করেছেন তিনি। যার ফলন খুবই ভাল এবং লাভজনক হয়েছে।

এরই মধ্যে সেই ক্ষেতের সবজি বিক্রি করে ২০ হাজার টাকা আয় করেছেন সফল এই কৃষাণী। লাইলি বেগমের বাড়িতে বর্তমানে পালন শাক,লাল শাক,শালগম,লাউ,বরবটি,কলমি শাকসহ রয়েছে হরেক রকমের সবজি।

এছাড়া পেপে, পেয়ারা, সজনে, চুইঝালসহ রয়েছে সিজোনাল ফলের সমারোহ। বাড়ির দুটি পুকুরে রুই, কাতলসহ রয়েছে দেশীও সব সাদা মাছ। এসব বিক্রি করে লাইলী বেগমের বছরে প্রায় তিন থেকে চার লাখ টাকায় আয় হয়। শুধু কৃষিতেই নয়,ছেলে-মেয়েকেও শিক্ষিত করতে সক্ষম হয়েছেন স্বামী হারা এই নারী।

লাইলী বেগম বলেন,কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজের বাড়িকে একটি খামার বাড়ি হিসেবে প্রস্তুত করেছেন তিনি। এখন আর তাকে পেছনে ফিরে তাঁকাতে হবেনা। দিনদিন তার বাড়ি থেকে আয় বাড়ছে। আর এসবের পেছনে তাকে সহযোগীতা করছেন উপজেলা কৃষি অফিস। তবে,আগামীতে কৃষির পাশাপাশি গরু ও মুরগীর ফার্ম করার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান এই নারী উদ্যোক্তা।

লাইলী বেগমের কৃষিখামার দেখে প্রতিবেশীরাও উদ্ভুদ্ধ হচ্ছেন একইভাবে চাষাবাদ করতে। ইতোমধ্যে একই গ্রামের নিগার সুলতানা,মিনারা বেগমসহ অনেকে লাইলী বেগমের মতো বাড়ির আঙিনায় সবজি চাষ শুরু করেছেন। আর এসব দেখাশোনা ও তদারকি করছেন উপজেলা কৃষি অফিসের উপসহকারী কৃষি অফিসার মোঃ হাসিবুল ইসলাম মনি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেবব্রত সরকার বলেন,লাইলী বেগম একজন নারী উদ্যোক্তা। একজন নারী হয়ে তার বাড়িতে চার’শ ফলের গাছ লাগিয়েছেন তিনি। তার বাড়িকে বানিয়েছে একটি খামার। যে খামার থেকে তিনি এখন সফল এবং স্বাবলম্বী। তাছাড়া কৃষি অফিসের সহযোগীতায় তার বাড়ির আঙিনায় আলাদা আলাদা সেড করে বিভিন্ন প্রকার সবজি চাষ করে তিনি লাভবান। লাইলী বেগমের মতো কৃষাণীদের জন্য শরণখোলা কৃষিতে অনেক এগিয়ে যাবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।