বাজেটে আ’লীগকে চুরির সুযোগ দেওয়া হয়েছে : খালেদা জিয়া

জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেটকে ‘আওয়ামী লীগের চুরি করার বাজেট’ বলে অ্যাখ্যায়িত করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের সফিউর রহমান হলে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের আয়োজিত এক ইফতার মাহফিলে তিনি এ সব কথা বলেন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৩৬তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়।

খালেদা জিয়া বলেন, এই বাজেট (২০১৭-১৮) লুটপাটের বাজেট। এ বাজেটে আওয়ামী লীগকে চুরি করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এ বাজেট তো আর অর্থমন্ত্রীর না। এ বাজেট তৈরি হয় হাসিনার কথামত। কাজেই হাসিনা যা চান, বাজেট তাই। আর এই বাজেট কি আর বাজেট থাকবে নাকি?

তিনি বলেন, আপনারা সবই জানেন, দেশের বর্তমানে কি অবস্থা। আপনাদের যে বিচার বিভাগ, সে বিচার বিভাগেরও আজ কি দুরাবস্থা! সেটা আমরা প্রধান বিচারপতির বক্তব্য পড়লেই বুঝতে পারি।

‘এই সরকারের থাবা এতো বেশি যে, সব দিকে তারা হাত দিয়েছে। কোনো জায়গা তারা বাদ রাখে নাই। সব তার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে এবং তিনি আজীবন ক্ষমতায় থাকবেন। এটাই তাদের উদ্দেশ্য, লক্ষ্য। সেজন্যই আপনারা দেখেছেন, এই সরকার কি শুরু করে দিয়েছে।’

খালেদা জিয়া বলেন, বিচারকরা ন্যায়বিচার করতে চান। বিচারকরা সুবিচার দিতে চান। কিন্তু প্রধান বিচারপতির বক্তব্য থেকে আমরা বুঝেছি যে, নিম্ন আদালত পুরো সরকারের নিয়ন্ত্রণে। সেখানে সরকার যে নির্দেশ দেয় বিচারকদের সেই নির্দেশ মেনে কাজ করতে হয় এবং সে রায় দিতে হয়। যদি বিচারক দেখে যে বিচারপ্রার্থী নিরপরাধ, তার সঙ্গে এরকম করা ঠিক হবে না- ওই বিচারক যদি তার বিবেকমত রায় দেন তাহলে তাকে হয় চাকুরিচ্যুত হতে হয়, নয়ত দেশ ছাড়া হতে হয়। না হলে মামলা, হামলা দিয়ে তার উপরে হয়রানি করা হয়।

‘আজকে সাধারণ মানুষ বড় অসহায়। দেশটা আজকে বড় অসহায়ের মধ্যে আছে। আমরা যুদ্ধ করে রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছি। দেশের এই অবস্থা করার জন্য নয়। আজকে আওয়ামী লীগ এই দেশটা ধ্বংস করেছে। এখন সব বিচারকসহ দেশের সর্বস্তরের জনগণের উচিত জেগে উঠা, ঐক্যবদ্ধ হওয়া, ন্যায় বিচার ও সকল মানুষের অধিকার নিশ্চিত করা।’

‘কোন ধর্মের মানুষ আজ নিরাপদ নয়। এখনই নিজেদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত। আল্লাহর বিচার আছে।’

খালেদা জিয়া আরো বলেন, আওয়ামী লীগ আজকে ভয় পায় বিএনপির মত একটি দলকে। কারণ, বিএনপি জনগণের ভোটে বারবার নির্বাচত হয়। এখনো বিএনপি জনগণের ভোটে বিশ্বাস করে বলে আমরা বলেছি- একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। যেখানে সবাই অংশগ্রহণ করবে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবে, আমরাও তাদের মেনে নেব।

কিন্তু আজকে আওয়ামী লীগ ষড়যন্ত্র করছে ৫ই জানুয়ারির মত আরেকটি নির্বাচন করতে। কিন্তু সেই নির্বাচন বাংলাদেশের মানুষ অংশগ্রহণ করবে না। কোন দল অংশ গ্রহণ করবে না। তারপরও যদি আওয়ামী লীগ জোর করে নির্বাচন করে তাহলে তাদের সেই নির্বাচন থেকেই বিদায় নিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

‘আমরা যে ২০৩০ ভিশন দিয়েছি সেখানে দেশের প্রতিটি মানুষের কথা বলা আছে। আমরা সেটা শুরু করবো। তাহলে দেশ অনেক উঁচু স্থানে চলে যাবে। সম্মানের সঙ্গে থাকবে দেশ।’

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেন, গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে। চাউলের দাম এত বেড়েছে যে, দেশের গরীব মানুষ খেতে পারে না। কাজেই গ্যাসের দাম বাড়ানো বন্ধ করুন। গ্যাসের টাকাও হবে লুটের টাকা। এগুলো বন্ধ করেন, দেশের মানুষের দিকে একটু চান। এখনো কক্সবাজারে রিলিফ যায়নি। এখন পর্যন্ত সাহায্য দেওয়ার জন্য কেউ যায়নি।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি আইনজীবী জয়নুল আবেদীনের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, বিএনপির মহাসবিচ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, খোন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, সাবেক স্পীকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সাবেক বিচারপতি টি এইচ খান, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, আইনজীবী আহমেদ আজম খান, ডা. এজেডএম জাহিদ প্রমুখ।