বাদুড়ের মাংস খাচ্ছে যশোরের ‘বাদুড় গ্রামের’ মানুষরা!
যশোরের কেশবপুর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের একটি প্রাচীন বটগাছের আশপাশে শিকারিরা ফাঁদ পেতে বাদুড় শিকার করছে। বন বিভাগ বা প্রশাসন এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আইন অনুযায়ী বাদুড় হত্যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হরিহর নদের পারের কালীতলার বটগাছে দিনে যুগ যুগ ধরে হাজার হাজার বাদুড় ঝুলে থাকতে দেখা যেত। পাখিদের ডাকে এলাকা মুখর থাকত। শুধু বটগাছে নয়, অন্য উঁচু গাছগুলোতেও বাদুড়ের আবাস ছিল। দেখে মনে হতো গ্রামের মানুষ সযত্নে বাদুড় লালন-পালন করছে। এ কারণে বালিয়াডাঙ্গা বাদুড়ের গ্রাম হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু ফাঁদ পেতে বাদুড় ধরে মাংস খাওয়ার কারণে ক্রমেই বাদুড় চলে যেতে শুরু করে। গ্রামটি একসময় প্রায় বাদুড়শূন্য হয়ে পড়ে। সম্প্রতি ওই বটগাছে কিছু বাদুড় ফিরে আসা শুরু করে। আবারও শিকারিরা ফাঁদ পাতা শুরু করেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের পরিচিত সেই বটগাছে বেশ কিছু বাদুড় ফিরেছে। বালিয়াডাঙ্গা শ্মশানের পাশে একটি উঁচু মেহগনিগাছে শিকারিরা বাঁশ বেঁধে সুতা নদের অন্য পাশে নিয়ে গেছে। রাতে ওই সুতার সঙ্গে জাল ঝুলিয়ে রাখা হয়। বাদুড় ওড়ার সময় জালের ফাঁদে আটকা পড়ে। আর ছুটতে পারে না। ভোরে শিকারিরা আটকে পড়া বাদুড় ধরে জবাই করে।
গ্রামের বাসিন্দা দুলাল চন্দ্র সাহা (৭০) বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে কালীতলা বটগাছে হাজার হাজার বাদুড় দেখে আসছি। সন্ধ্যার আগে যখন আহার সংগ্রহের জন্য উড়তে শুরু করত তখন কেশবপুর সদরসহ বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের আকাশে বাদুড় ছেয়ে যেত। বেশ কয়েক বছর আগে থেকে মাংসলোভী এক শ্রেণির অসাধু মানুষের অত্যাচারের কারণে এলাকা থেকে বাদুড় চলে যায়।’
২০১২ সালের বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন অনুযায়ী, বাদুড় বা পাখি হত্যা করলে সর্বোচ্চ এক বছর জেল অথবা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। একই অপরাধ আবার করলে সর্বোচ্চ দুই বছরের জেল অথবা সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।
কেশবপুর উপজেলা বন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ‘বাদুড় সাধারণত থাকার স্থান পরিবর্তন করে না। তবে মানুষ যদি অত্যাচার শুরু করে তাহলে ওরা বাধ্য হয়ে অন্যত্র চলে যায়। তা ছাড়া যে এলাকায় বৈদ্যুতিক তার বেশি রয়েছে, ওই এলাকা থেকেও বাদুড় চলে যায়। ফাঁদ পেতে বাদুড় ধরার অভিযোগ পাওয়া যায়নি। এর পরও যদি কেউ ফাঁদ পেতে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ খুলনার গবেষক ফারহানা রহমান বলেন, ‘বাদুর প্রাকৃতিক ভারসাম্য সংরক্ষণে ভূমিকা রাখে। উদ্ভিদের পরাগায়ণে সহায়তা করে। এতে পৃথিবীর সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন