বার্সার অস্ত্রেই বার্সাকে হারাল রিয়াল!

বার্সেলোনা মানেই পাসিং ফুটবলের পসরা। পাসের পর পাসের মালা গেঁথে প্রতিপক্ষকে নাস্তানুবাদ করা। কিন্তু টিকি-টাকার জাদু দিয়ে বার্সেলোনা বিশ্ব মাতালেও রিয়াল মাদ্রিদের মন জয় করতে পারেনি। বার্সেলোনার টিকি-টাকা তথা পাসিং ফুটবল বরং রিয়ালের অনেকের কাছেই ছিল দু’চোখের বিষয়। তারা বরং নিজেদের ‘বল পেলেই দ্রুত আক্রমণ কর’ দর্শনেই মুগ্ধ ছিল। কিন্তু প্রশ্ন হলো, রিয়ালের এই ‘দ্রুত আক্রমণ’-প্রেমীরা এখন কি করবে? তারা কি চিরশত্রু বার্সেলোনার পাশাপাশি নিজেদের প্রিয় দল রিয়ালের দর্শন থেকেও মুখ ফিরিয়ে রাখবে? রিয়াল যে এবার বার্সেলোনার পাসিং ফুটবলকেই ধার করে নিজেদের দর্শন বানিয়ে ফেলেছে!

সত্যিই তাই। সময় পাল্টে গেছে। পরিবর্তন এসেছে রিয়ালের কোচের পদে। আর কোচ বদলের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে গেছে রিয়ালের খেলার ধরণও। নিজেদের ‘দ্রুত আক্রমণে যাওয়ার’ কৌশল পাল্টে রিয়ালের নতুন কোচ জুলিয়েন লোপেতেগুই বেছে নিয়েছেন বার্সেলোনার পাসিং ফুটবলকেই।

আর শুধু বেছে নেওয়াই নয়। পাসিং ফুটবলে লোতেপেগুইয়ের রিয়াল বরং বার্সেলোনাকেই হারিয়ে দিয়েছে। লিগে মৌসুমের প্রথম দুই ম্যাচের পরিসংখ্যান অন্তত সে কথাই বলছে। নতুন মৌসুমে লিগে এ পর্যন্ত সমান দুটি করে ম্যাচ খেলেছে রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা। পরিসংখ্যান বলছে, তাতে বার্সেলোনার চেয়ে রিয়াল মাদ্রিদই পাস খেলেছে বেশি!

দুই ম্যাচে পাসিং ফুটবলের ধারক-বাহক বার্সেলোনা মোট পাস খেলেছে ১৪৭০টি। সেখানে লোতেপেগুইয়ের রিয়াল দুই ম্যাচে পাস খেলেছে ১৫০৫টি। মানে দুই ম্যাচে বার্সার চেয়ে ৩৫টি পাস বেশি দিয়েছে রিয়াল। বার্সার অস্ত্রেই বার্সেলোনাকে ঘায়েল। রিয়াল চিরশত্রুদের হারিয়ে দিয়েছে সফল পাসের হারেও। দুই ম্যাচে রিয়াল মোট পাসের ৯০.৭৬ শতাংশই সফল পাস দিয়েছে। বার্সেলোনা সফল পাস দিয়েছে ৮৭.৮৯ শতাংশ।

দলীয় লড়াইয়ের পাশাপাশি ব্যক্তিগত দ্বৈরথেও এগিয়ে রিয়াল শিবিরই। বার্সেলোনার লিওনেল মেসি বা সার্জিও বুসকেটসদের কেউ নন। দুই ম্যাচে দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাস দেওয়া খেলোয়াড়টিও রিয়াল মাদ্রিদেরই। তিনি টনি ক্রুস। রিয়ালের এই জার্মান মিডফিল্ডার দুই ম্যাচে মোট পাস দিয়েছেন ২২৬টি। যার ২২০টিই সফল পাস। ১৫টির উপরে পাস খেলেছেন, এমন খেলোয়াড়দের মধ্যে সফল পাসে টনি ক্রুসই সবার উপরে।

প্রথম দুই ম্যাচের এই চিত্র স্পষ্ট করেই বলে দিচ্ছে, এই মৌসুমটিতে পাসিং ফুটবলের প্রসরাই দেখা যাবে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে। মানে অন্য আর স্ব দ্বৈরথের পাশাপাশি এবার রিয়াল-বার্সার পাসিং ফুটবলের দ্বৈরথটাও হবে জমজামট।

অথচ গত মৌসুম পর্যন্তও রিয়াল ছিল পাসিং ফুটবলের ঘোর বিরোধী। তবে বার্সেলোনার পাসিং ফুটবলের সবচেয়ে বড় সমালোচক ছিলেন রিয়ালের সাবেক কোচ হোসে মরিনহো। বার্সেলোনায় পাসিং ফুটবল তথা টিকি-টাকার গোড়া পত্তন মূলত ১৯৯২ সালে, প্রয়াত ডাচ কিংবদন্তি ইয়োহান ক্রুইফের হাত ধরে। তবে টিকি-টাকার পূর্ণাঙ্গ প্রসরা সাজান পেপ গার্দিওলা।

টিকি-টাকার জাদু দিয়েই ৪ বছরে বার্সেলোনাকে ১৪টি শিরোপা উপহার দেন তিনি। কিন্তু টিকি-টাকার মোহনীতায় গার্ড়িওলা বিশ্ব জয় করলেও মন ভরাতে পারেননি। গার্দিওলার টিকি-টাকার জবাব দিতে মরিনহো বরং রিয়ালে নিজের ‘দ্রুত আক্রমণ’ দর্শনই চালূ করেন।

যার ফল, মরিনহোর ৪ বছরে বার্সেলোনার চেয়ে ২৭,৩৬৬ টি পাস কম খেলে রিয়াল! মরিনহোর বিদায়ের পর জিনেদিন জিদানও ‘দ্রুত আক্রমণ’ নীতিতেই চলেন। কিন্তু লোপেতেগুই এসেই ধার করে ফেললেন চিরশত্রুদের দর্শন। এবং প্রথম দুই পরীক্ষাতে চিরশত্রুদের হারিয়েও দিলেন।

দেখা যাক, লোপেতেগুই বার্নাব্যুতে এই পাসিং-রাজত্ব কত দিন বজায় রাখতে পারেন।