বার্সেলোনার গোল-বন্যায় ভেসে গেল সেভিয়া

যুদ্ধে কিভাবে জিততে হয়, বুধবার রাতে ন্যু-ক্যাম্পে আরেকবার সেটি দেখিয়ে দিল বার্সেলোনা। কোপা ডেল রের কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগ ম্যাচটিতে প্রতিপক্ষ সেভিয়াকে শক্ত পায়ে দাঁড়াতেই দেয়নি বার্সা। পায়ের তলার মাটি কাঁপিয়ে সেভিয়াকে ভাসিয়েছে গোল-বন্যায়।

সেমি ফাইনালে ওঠার জন্য বার্সেলোনার দরকার ছিল ৩-০ গোলের জয়। ফিলিপে কুতিনহো, সের্গিও রবার্তো, ইভান রাকিতিচ, লুইস সুয়ারেজ, লিওনেল মেসিরা মিলে সেভিয়াকে দিয়েছে তার চেয়েও ৩টি গোল বেশি। মানে গুনে গুনে ৬ গোল। শেষ পর্যন্ত জয়টা ৬-১ গোলে। গোল-বন্যা নয়তো কি!

বিশাল এই জয়ের অর্থ, দুই লেগ মিলিয়ে ৬-৩ অগ্রগামিতায় কোপা ডেল রের সেমিফাইনালে বার্সেলোনা। গত ৭ দিন ধরে সেমির স্বপ্নের ফানুস ওড়ানো সেভিয়া টুর্নামেন্ট থেকে আউট! বার্সেলোনার দাপটের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করে বিদায় নিতে হলো নত মস্তকে।

ন্যু-ক্যাম্পের এই ম্যাচটাকে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল বার্সেলোনা। কোচ আর্নেস্তো ভালভার্দে বলেছিলেন, এটা তাদের জন্য যুদ্ধ। অধিনায়ক মেসিও আখ্যায়িত করেন ‘যুদ্ধ’ বলে। তা ছাড়া আসলে উপায়ও ছিল না। আগের বুধবার সেভিয়ার মাঠের প্রথম লেগে অতি বিলাসিতা দেখাতে গিয়ে ধরা খায় বার্সেলোনা। মেসিসহ সিনিয়র খেলোয়াড়দের বিশ্রাম দেওয়ার খেসারত হিসেবে হেরে আসে ২-০ গোলে।

এখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে সেমি ফাইনালে উঠতে হলে দরকার ছিল অন্তত ৩-০ গোলের জয়। এমন কঠিন সমীকরণ মেলানোর ম্যাচটিকে যুদ্ধ না বলে উপায় কি! কাল রাতে নিজেদের সাজানো সেই যুদ্ধে শুরু থেকেই সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে বার্সেলোনা। উদ্দেশ্য ছিল, প্রথমেই শত্রুকে মানসিকভাবে চেপে ধরা।

সেই কাজটা মেসিরা কতটা সার্থকভাবে করেছেন, এই তথ্যেই তার প্রমাণ। ম্যাচ শুরুর বাঁশি বাজার পর প্রথম ৯০ সেকেন্ডই বল ঘুরল বার্সেলোনার খেলোয়াড়দের পায়ে পায়ে। সেভিয়ার খেলোয়াড়রা স্পর্শই করতে পারলেন না। অবশ্য বার্সেলোনার পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে ম্যাচের প্রথম আক্রমণটা করে সেভিয়াই। তবে পাবলো সারাবিয়ার দুর্বল শট রুখে দিতে বার্সেলোনার গোলরক্ষক সিলেসনের কোনোরকম অসুবিধাই হয়নি।

এরপর থেকেই শুরু হয় বার্সেলোনার একের পর এক আক্রমণের পালা। যুদ্ধে জিততে হলে শক্তির প্রদর্শনী, উন্নত রণ-কৌশল এবং তার যথাযথ প্রয়োগের পাশাপাশি ভাগ্যও লাগে। তা বুধবার রাতে বার্সা ভাগ্যদেবীর সহায়তাও পেয়েছে, একবার নয়, দুবার। ম্যাচে বার্সেলোনা প্রথম এগিয়েও যায় ভাগ্যের সহায়তায়।

১২ মিনিটে মেসিকে ফাউল করার কারণে পেনাল্টি দেন রেফারি। কিন্তু রিপ্লেতে পরিস্কার, মেসির সাথে কোনো রকম সংঘর্ষই লাগেনি কুইন্সি প্রোমাসের। স্পেনের সাবেক রেফারি অ্যান্ডজুরা অলিভার ম্যাচ চলাকালেই রেডিও মার্কায় বলেছেন, এটা কিছুতেই পেনাল্টি নয়। ভাগ্যের সহায়তায় পাওয়া পেনাল্টি থেকে গোল করেই বার্সাকে প্রথম এগিয়ে দেন ব্রাজিলিয়ান তারকা ফিলিপে কুতিনহো।

১০ মিনিট পর আবারও ভাগ্যের সহায়তা পায় বার্সেলোনা। এবার পেনাল্টি পায় সেভিয়া। গোলটা হলে ম্যাচের ফলটা ঘুরে যেতে পারত। কিন্তু আর্জেন্টাইন তারকা এভার বানেগা বল তুলে দেন বার্সেলোনার গোলরক্ষক সিলেসনের হাতে। ২৩ মিনিটেই দু-দুটি হতাশার ঘটনায় সেভিয়া যেন মুষড়ে পড়ে। তার ফসল হিসেবেই বার্সেলোনা আদায় করে নিয়েছে একের পর এক গোল।

৩২ মিনিটে ব্রাজিলিয়ান মিড ফিল্ডার আর্থারের পাস থেকে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ক্রোয়েশিয়ান মিড ফিল্ডার ইভান রাকিতিচ। ২-০ লিড নিয়েই বিরতিতে যায় বার্সা। ফিরে এসে ৯ মিনিটের মাথায় বার্সা পেয়ে যায় আরও দুই গোল। সেই গোল দুটো করেন কুতিনহো ও সের্গিও রবার্তো। ৫৩ নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেন কুতিনহো। পরের মিনিটেই গোলের খাতায় নাম লেখান রবার্তো।

এরপর অবশ্য ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছে সেভিয়া। ৬৬ মিনিটে অতিথিদের হয়ে একমাত্র গোলটি করেন আরানা। আর একটি গোল দিতে পারলেই সেভিয়া জিতে যেতে পারত যুদ্ধে। কিন্তু বার্সেলোনার খেলোয়াড়দের গোল-ক্ষুধার সামনে সেভিয়া ছিল অসহায়। দাপটের রাজত্ব কায়েম করে বার্সেলোনাই বরং আদায় করে নেয় আরও ২ গোল। ৮৯ মিনিটে দলের পক্ষে পঞ্চম গোলটি করেন উরুগুইয়ান ফরোয়ার্ড সুয়ারেজ।

দল ৫ গোল করে ফেলেছে। অথচ সেই গোল-তালিকায় গোল-মেশিন মেসির নাম নেই! ব্যাপারটি যেন ফুটবল দেবতার কাছেই বেমানান লাগছিল! তাই হয়তো মেসিকে দিয়েও গোল করিয়ে ভাগ্যদেবী তালিকাটা মানানসই করলেন! যোগ করা সময়ে সেভিয়ার কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুঁকেছেন মেসি।

ম্যাচ শেষে বার্সেলোনার কোচ ভালভার্দে এবং অধিনায়ক মেসি, দুজনের কণ্ঠেই ঝরল উচ্ছ্বাস। সংবাদ সম্মেলনে দুজনেই সুর মিলিয়ে বললেন, বার্সেলোনা হারার আগে হারে না। যেকোনো অবস্থা থেকে ঘুরে বার্সা ঘুরে দাঁড়াতে পারে।

এদিন জোড়া গোল করেছেন কুতিনহো। এছাড়া একটি করে গোল করেছেন রাকিতিচ, রবার্তো, সুয়ারেজ ও মেসি। কিন্তু সবাইকে ছাপিয়ে ম্যাচের নায়ক বার্সার গোলরক্ষক সিলেসন। অনেকগুলো বল সেভ করে ম্যাচ সেরাও হয়েছেন তিনি।