বিএনপির আসন ভাগাভাগির জটিল সমীকরণ
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হাওয়ায় ব্যাপক সরগরম রাজনীতির মাঠ। গত ৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার পর শুরু হয়েছে ব্যাপক তোড়জোড়। চলছে নানান সমীকরণ। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমীকরণে এতদিন ছিল বিএনপিকে নিয়ে। কারণ এবারের নির্বাচনে বিএনপির আসা না আসা নিয়ে বড় ধরনের হিসাব রয়েছে ক্ষমতাসীনদের। যা রোববার খোলাসা হয়ে গেছে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ফলে এখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের হিসাব তার শরিক দলগুলো এবং জাতীয় পার্টিকে নিয়ে। কারণ আসন ভাগাভাগির হিসাবটা নিজেদের মধ্যেই।
তেমনি বিএনপির মধ্যেও রয়েছে কঠিন হিসাব। যদিও জোটবদ্ধ নির্বাচনের অভিজ্ঞতা নতুন কিছু নয়, কিন্তু এবার বিএনপিকে জটিলতর এক জোট-রাজনীতি সামাল দিতে হবে। বিএনপি শরিক দলগুলোর পাশাপাশি যুক্ত রয়েছে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে। তাই হিসাবটা বেশ কঠিন।
সোমবার থেকে মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু করবে বিএনপি। তবে রোববারই বিএনপি নির্বাচন কমিশনকে জানিয়ে দিয়েছে, শরিকদের সঙ্গে জোটবদ্ধভাবেই নির্বাচন করবে তারা।
কিন্তু আসন ভাগাভাগির সমীকরণ কী দাঁড়াতে পারে? কতটা কঠিন হতে পারে সেই ভাগযোগ? কতটা ছাড়া দিতে প্রস্তুত বিএনপি?
বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিএনপির নীতিনির্ধারকদের কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন- শরিক দলগুলোর সঙ্গে প্রাথমিক কিছু আলোচনার ভিত্তিতে তাদের দল মনে করছে, শরিকদের ৫০ থেকে ৬০টি আসন দিতে হতে পারে।
বিএনপির শীর্ষ একজন নেতা ইঙ্গিত দিয়েছেন, ড. কামাল হোসেনের জোটের কাছ থেকে আসনের জন্য ততটা চাপ তাদের ওপর নেই। এমনকি ড. কামাল হোসেন নিজেও নির্বাচন করতে ততটা আগ্রহী নন বলেই বিএনপির মনে হয়েছে।
বিএনপির ওই নেতা বলেন, বিএনপি চাইছে ড. কামাল হোসেনসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কয়েকজন নেতাকে দলের নিরাপদ কয়েকটি আসনে প্রার্থী করে জিতিয়ে আনতে। সূত্র জানায়, ড. কামাল হোসেনকে ফেনী বা দিনাজপুরে খালেদা জিয়ার একটি আসনে মনোনয়ন দেয়ার প্রস্তাব করা হতে পারে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কাছ থেকে আসনের প্রধান দাবিদার হতে পারে কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। তারা তিনটি আসনে চাইতে পারে বলে বিএনপি মনে করছে।
এছাড়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা সুলতান মনসুর সিলেটে তার এলাকায় একটি আসন চাইছেন। অন্যদিকে গণফোরামের মোস্তফা মহসীন মন্টু ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে মনোনয়ন চাইছেন। বিএনপির সূত্র বলছে, আসনটি বিএনপি নেতা আমানুল্লাহ আমানের হওয়ায় তা নিয়ে কিছুটা জটিলতা সৃষ্টি পারে। তবে বিএনপি সূত্রে বলছে, আসনের প্রধান দাবি আসবে ২০দলীয় জোটের শরিকদের কাছ থেকে। প্রধানত জামায়াতে ইসলামির কাছ থেকে। তবে নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় জামায়াতের প্রার্থীরা এবার তাদের দলের পরিচয়ে নির্বাচন করতে পারবেন না।
বিএনপি নেতারা ইঙ্গিত দিয়েছেন, আসন ভাগাভাগি নিয়ে বড় কোনো সঙ্কটের আশঙ্কা তাদের নেই।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরাও মনে করছেন, আসন নিয়ে বড় কোনো জটিলতা এড়িয়ে চলতে চাইবে বিএনপি।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দিলারা চৌধুরীর ভাষ্য, দরকষাকষি হবে, কিন্তু জটিলতা আয়ত্তের বাইরে যাবে না। তিনি বলেন, বিএনপি নিশ্চিতভাবে জিতবে, এমন আসন শরিকরা দাবি করলে জটিলতা তৈরি হতে পারে।
ভোটের অংকের বিবেচনায় বিএনপির প্রধান এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শরিক জামায়াতে ইসলামী। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। কিন্তু জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় নতুন এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
সূত্রের ভাষ্যমতে, ভোটারদের ভেতর বিভ্রান্তি এড়াতে বিএনপি চাইছে তাদের শরিকরা সবাই ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করুক।তবে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীদের ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করা নিয়ে বিএনপির নেতৃত্বের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।
তাছাড়া জামায়াত নেতাদের ধানের শীষ প্রতীক দিলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের একই প্রতীক নিতে রারি করানো অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে। এমন অবস্থায় প্রতীকের এই বিষয়টি কীভাবে সুরাহা হবে, সেটা এখনো নিশ্চিত নয় বলে জানিয়েছে বিএনপি সূত্র।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন