বিএনপি-জামাতের তকমায় উন্নয়ন বঞ্চিত হয়েছে জয়পুরহাটের বড়মানিকা উচ্চ বিদ্যালয়

শিক্ষা সহ সকল কার্যক্রমে সাফল্য থাকলেও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি পৌরসভা ঘেঁষা বড়মানিকা উচ্চ বিদ্যালয়টির অবকাঠামোগত উন্নয়ন বঞ্চিত হয়ে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ফলে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা, ফলাফল, সহপাঠ্যক্রম, স্কাউটিং খেলা-ধুলাসহ সকল ক্ষেত্রেই সুনামধন্য বিদ্যালয়টির মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে।

বিগত সরকারের স্হানীয় প্রতিনিধির রাজনৈতিক প্রতিহিংসার স্বীকার বিদ্যালয়টি বর্তমানে জরাজীর্ণ টিনের ছাউনী, লোনা ধরা স্যাঁতস্যাঁতে দৈন্যদশা প্রাপ্ত শ্রেণী কক্ষ ও সেকেলে আসবাবপত্র নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে।

পাঁচবিবি উপজেলা শহরের ১ কিলোমিটার পশ্চিমে ছোট যমুনা নদীর পশ্চিম তীর ঘেঁষে আন্তঃউপজেলা সড়ক সংলগ্ন অত্যন্ত মনোরম পরিবেশে স্কুলটি ১৯৮৮ সালে স্থাপিত হয়। স্থাপিত হওয়ার পর থেকেই বিদ্যালয়টি শিক্ষা বিস্তারে অত্র এলাকায় অনন্য ভুমিকা পালন করে আসছে।

এ বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী দেশে বিদেশে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন সহ দেশ সেবায় বলিষ্ট ভুমিকা রাখছে। স্কাউটিং খেলাধুলা সহ সহপাঠ্যক্রম বিষয় গুলোতে এবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সফলতা ইর্ষণীয়। প্রমান স্বরুপ অসংখ্য স্বীকৃতিপত্র, ক্রেস্ট, শিল্ড কাপ, এ্যাওয়ার্ড, সার্টিফিকেট, বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে যত্নের সঙ্গে রক্ষিত আছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহসিন আলী মন্ডল জানান ‘বর্তমান স্কুলে প্রায় ৪’শত শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে কিন্তু এতগুলো ছাত্র-ছাত্রী বসার মত শ্রেণি পরিবেশ নাই। ৩৫ বছর পূর্বে নির্মিত সেমিপাকা টিনের ছাউনী দেওয়া ৬টি রুমের মধ্যে ৫টির অবস্থাই আশঙ্কাজনক। টিন ফুটো হয়ে বৃষ্টির পানি পরে, বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির সময় ক্লাস করানো সম্ভব হয় না।

ঐচ্ছিক বিষয়গুলি ছাত্রিদের কমনরুমে অথবা গাছের নিচে পড়ানো হয় যা মোটেও শিক্ষা বান্ধব পরিবেশ নয়। ফ্যাসিলিটিজ ডিপার্টমেন্টের ৩টি পাকা রুম আছে তাও ৩০’বছরের পুরানো যার ছাদের প্লাস্টার খসে পড়ে শিক্ষার্থীদের আহত হওয়ার ঘটনাও প্রায় ঘটে।

এ অবস্থায় ঐ জরাজীর্ণ ৩টি পাকা রুমের ১টি প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের বসার জন্য বরাদ্দ , ১টিতে পাঠাগার, অন্যটি সাইন্স ল্যাব হিসাবে ব্যবহার করা হয়। যাতে ছাড়া ছাত্রীরা দূর্ঘটনা স্বীকার না হয়। বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি একটু বেশি হলে শ্রেণী কক্ষে আর জায়গা হয় না। শিক্ষার্থীদেরকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।

আশেপাশের এবং প্রত্যন্ত এলাকার অধিকাংশ স্কুল মাদ্রাসায় বহুতল ভবন হয়েছে কিন্তু এখানে হলো না কেন এমন প্রশ্ন করলে অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহসিন আলী মন্ডল বলেন, আমাদের বিদ্যালয়টি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছে। আওয়ামীলীগের দীর্ঘ শাসন আমলে স্থানীয় সাংসদ ছিলেন সামছুল আলম দুদু।

স্কুল সংলগ্ন এলাকার মানুষ অধিকাংশ বিএনপি জামাত সমর্থিত হওয়ায় এমপি মহোদয় স্কুলটিকে লাল তালিকা ভুক্ত করে রেখেছিলেন। বহুবার তার নিকট ধর্ণা দিয়েও কাজ হয়নি। বর্তমান পরিবর্তিত সময়ে এমপি না থাকলেও নিরপেক্ষ অন্তবর্তীকালীন সরকার রয়েছে।

দৈন্যদশা থেকে স্কুলটিকে মুক্ত করার জন্য সরকারের নিকট আবেদন জানাই! স্কুলে সেমিপাকা ঘরগুলির পশ্চিম পাশ ঘেঁষে একটি জলাশয় রয়েছে। প্রতিনিয়ত জলাশয়ের পানির ঝাপটা লেগে স্কুল ঘরের ভিত্তি থেকে মাটি অপসারণ হচ্ছে এতে ভবনটি হুমকির মুখে পড়েছে। যে কোন সময় বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।

বিদ্যালয় এলাকার শিক্ষা বান্ধব ও অত্র বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আব্দুল জলিল মন্ডল জানান, এই উচ্চ বিদ্যালয়টি ছাড়া আশে পাশের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে বহুতল ভবন হয়েছে।

এমনকি অত্র বিদ্যালয়ে ১টি শ্রেণিতে যে পরিমান শিক্ষার্থী রয়েছে বহুতল ভবন পাওয়া অনেক প্রতিষ্ঠানে সব ক্লাস মিলে অত শিক্ষার্থী নেই। তারপরও এখানে আধুনিক একাডেমিক ভবন হয়নি এমনকি এই বিদ্যালয়ের নামে বরাদ্দ হওয়া ভবন কেটে অন্যত্র দেয়া হয়েছে।