বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি ভুক্তভোগীদের
রাজধানী ঢাকার শাহবাগে জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত ‘অগ্নি সন্ত্রাসের আর্তনাদ: বিএনপি-জামায়াতের অগ্নি সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের খণ্ডচিত্র’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার জীবদ্দশায় অপরাধীদের শাস্তি দেখতে পারবেন কিনা এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
বিগত ২০১৪-১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত চক্র তথাকথিত আন্দোলনের নামে অগ্নিসন্ত্রাস, পেট্রোল বোমা হামলাসহ দেশব্যাপী সহিংসতায় ৫ শতাধিক নিরীহ মানুষকে হত্যা এবং ৩৬০০ জনের বেশি মানুষকে আহত করে।
রবিবার (৬ নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন এবং বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের শিকার ব্যক্তিদের খোঁজখবর নেন এবং তাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা শোনেন পাশাপাশি ঘটনার বিচারে তাদের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
আন্দোলনের নামে ২০১৩-১৪ সালে বিএনপি-জামায়াত জোটের বোমা হামলা ও অগ্নিসন্ত্রাসের শিকাররা আজ বিচারের মাধ্যমে সেই নাশকতার হোতা এবং দুষ্কৃতকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
কক্সবাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে যাত্রীবাহী বাসে বিএনপি-জামায়াতের পেট্রোল বোমা হামলায় স্বামী নুরুজ্জামান বাবলু ও তার দশম শ্রেণি পড়–য়া মেয়ে মাইশাকে হারানোর বেদনা জানাতে গিয়ে মাফরুহা বেগম প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করেন, ‘আমার স্বামীসহ বহু মানুষ হতাহত হওয়া সেই অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িতদের বিচার করুন।
আসাদুজ্জামান নূর এমপির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
এ সময় বিদেশি মিশনের সদস্য, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
পেট্রোল বোমা হামলায় গুরুতর দগ্ধ মাফরুহা বেগম বলেন, ‘আমি এখনও আমার মেয়ে মাইশার চিৎকার শুনতে পাই এবং বাস পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ায় দেখতে পাই। আমি সারা রাত ঘুমাতে পারি না।
তিনি প্রধানমন্ত্রীকে তার মা হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, ‘আপনি (প্রধানমন্ত্রী) আমাদের কষ্ট উপলব্ধি করতে পারেন। কারণ, আপনি আপনার কাছের মানুষগুলোকে হারিয়েছেন।’
তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার একমাত্র ছেলের জন্য একটি চাকরির ব্যবস্থা করার অনুরোধ করেন যাতে তারা তাদের জীবনযাপন করতে পারে।
২০১৩ সালের ২৪ জানুয়ারি অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে যাত্রাবাড়ী থানাধীন কোনাপাড়ায় অগ্নিসন্ত্রাসে মারাত্মকভাবে মুখ ও হাত পুড়ে যাওয়া সেই সালাহউদ্দিন ভূঁইয়া অনুষ্ঠানে বলেন, তিনি কীভাবে প্রচ- মানসিক ও শারীরিক যন্ত্রণা নিয়ে দিনযাপন করছেন।
তিনি বলেন, ‘মানুষ সাধারণত আমার ভীতিকর মুখের জন্য আমাকে ভয় পায়। মানুষ আমার সাথে পাগলের মতো আচরণ করে। আমার চেহারা বেশ ভাল ছিল এবং আমার জন্য চাকরিও সহজলভ্য ছিল। অদ্ভুত চেহারার কারণে এখন কেউ বাসে আমার পাশে বসে না এবং চাকরির জন্য গেলে সব জায়গায় আমাকে উপেক্ষা করা হয়।’
বর্তমানে সংরক্ষিত মহিলা আসনের একজন সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট খোদেজা নাসরিন আক্তার একই হামলায় গুরুতর দগ্ধ হয়েছিলেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে তাকে সংসদ সদস্য করার জন্য ধন্যবাদ জানান এবং কীভাবে তিনি অগ্নিদগ্ধ বাস থেকে লাফ দিয়ে হামলা থেকে বেঁচে যান এবং রিকশাচালকের সহায়তায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন তা বর্ণনা করেন। তিনি যোগ করেন: ‘তিনি রিকশাচালকের মধ্যে সম্পূর্ণ মানবতা দেখেছেন।
প্রধানমন্ত্রীকে তাদের অভিভাবক আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই বিএনপি-জামায়াত জোটের শাস্তি ও বিচার চাই। বিচার সম্পন্ন হলে বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসংযোগের ঘটনায় নিহতদের আত্মা শান্তি পাবে এবং আমরা যারা হামলা থেকে বেঁচে আছি তারা সন্তুষ্টি পাব।
দিনাজপুর জেলায় বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীদের বর্বরোচিত পেট্রোল বোমা হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া এবং এখন গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় জীবনযাপন করা ট্রাকচালক রফিকুল ইসলাম আবেগাপ্লুত কণ্ঠে হামলার বর্ণনা দেন এবং বিচার দাবি করেন।
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জোট আমাকে নিয়ে কী ভাবছে তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমি শুধু তাদের হামলার বিচার চাই যাতে বহু মানুষ হতাহত হয়।’
চট্টগ্রামের ফটোসাংবাদিক আবু সাঈদ তামান্না বলেন, বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসংযোগের ছবি তুলতে গেলে তাকে অমানবিকভাবে ছুরিকাঘাত ও মারধর করা হয়।
তিনি বলেন যে তিনি এখনও ব্যথায় ভুগছেন এবং হামলার সাথে জড়িত দোষীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, তিনি আশঙ্কা করছেন যে বিএনপি-জামায়াত জোট বর্তমানে আন্দোলনের নামে নৈরাজ্যের দিকে যাচ্ছে। ফলে, তারা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
এই ফটোসাংবাদিক বলেন, তিনি বাংলাদেশে সুস্থ রাজনীতি চান।
বিজিবি সদস্য শাহ আলমের স্ত্রী নাসরিন আক্তার, পুলিশ সদস্য বাবলু মিয়ার স্ত্রী জ্যোৎস্না বেগম, পুলিশ কনস্টেবল জাকারিয়ার স্ত্রী মায়া বেগম ও পুলিশ সদস্য হযরত আলীর স্ত্রী লায়লা বেগম তাদের দুঃখ-দুর্দশার বর্ণনা দেন এবং প্রশ্ন করেন কেন তাদের স্বামীদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে এবং তাদের অপরাধ কী ছিল। কারণ, তারা শুধুমাত্র তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করছিল।
তারা অবিলম্বে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে এবং বেঁচে থাকার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাহায্য চেয়েছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন