বিএনপি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাত শেষে যা বললেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে সাক্ষাত করেন।

রোববার বিকাল ৩টার দিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রবেশ করেন বিএনপির ওই প্রতিনিধিদল।

বিএনপির সঙ্গে সাক্ষাত শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল আমাদের কাছে এসেছিলেন। তারা তাদের দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য বিষয়ে একটি লিখিত বক্তব্য আমাকে দিয়েছেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, খালেদা জিয়ার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা হবে। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বর্তমানে দুর্নীতির মামলায় কারাগারে আছেন। তিনি এখন অসুস্থ। তার অসুস্থতার মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, এ বিষয়ে তারা আগের মতো আমাকে জানাতে এসেছিলেন। তারা তাদের চেয়ারপারসনের চিকিৎসার জন্য তার পছন্দের হাসপাতালে নেয়ার কথা আগের মতো এবারও বলেছেন। তবে আগে কেবল মুখে বললেও এবার তারা লিখিত আবেদন করেছেন। আগে ইউনাইটেড হাসপাতালের কথা বললেও এবার তারা অ্যাপোলো হাসপাতালের কথাও বলেছেন।

মন্ত্রী বলেন, আমরা এ বিষয়ে জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব ও কারা মহাপরিদর্শককে (আইজি প্রিজন) দায়িত্ব দিয়েছি। তারা যত দ্রুত সম্ভব একটি বোর্ড গঠন করবেন। এই বোর্ডে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক, আমাদের চিকিৎসক ও কারা চিকিৎসকরা থাকবেন। তারা যদি মনে করেন সরকারি হাসপাতালে এই সব চিকিৎসা ও সেবা নেই তখন তাদের সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। ওই সুপারিশ অনুযায়ী সব ব্যবস্থা করা হবে।

খালেদা জিয়ার আর্থারাইটিস আছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ জন্য তার সঙ্গে তার পছন্দ অনুযায়ী একজন সহকারী রাখা হয়েছে। একজন ফিজিওথেরাপিস্ট, একজন চিকিৎসক ও একজন ফার্মাসিস্ট একদিন পর একদিন তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন, চিকিৎসা দিচ্ছেন। জেল কোড অনুযায়ী তাকে যে যে সুবিধা দেয়া সম্ভব, তার সবই দেয়া হচ্ছে। জেলকোড অনুযায়ী পছন্দের হাসপাতালে পাঠানোর কোনো সুযোগ নেই। তবে বোর্ড সুপারিশ করলে বা আদালত যদি নির্দেশনা দেয়, সেটা আলাদা কথা। আমরা তাদের বলেছি, জেলকোড অনুযায়ী আমরা যা যা করা সম্ভব তার সবই করবো। দেশের যে কোনো সরকারি হাসপাতালে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করবো।

‘খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ বলে বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে’ বিষয়টি সঠিক বলে মনে করেন কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ ধরণের কোনো প্রতিবেদন বা রিপোর্ট আমার কাছে নেই। খালেদা জিয়ার অসুস্থতা কতটুকু গুরুতর তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতেই মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হবে। বোর্ডই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সুপারিশ করবে। সেই অনুযায়ী খালেদা জিয়ার চিকিৎসা হবে।

আগেও খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে বিএনপি এমন দাবি জানিয়েছিল। এবারে সরকার কী ভূমিকা নেবে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য গঠিত বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী আমরা সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেব। দরকার পড়লে সরকারি হাসপাতালে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকলে বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী আমরা বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করবো।’

এ সময় সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, গতবারও আপনি (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) সিএমএইচে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে বলেছিলেন। এবারও কি আপনি সে রকম কিছু বলেছেন? এর উত্তরে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি গতবার বিএনপি নেতাদের যেসব কথা বলেছি, এবারও সেই সব কথাই বলেছি।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসময় দাবি করেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা কোনো ত্রুটি হচ্ছে না। সরকার এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সচেতন আছে।

জেলকোড অনুযায়ী সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির পছন্দ মতো কোনো হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘জেলকোড অনুযায়ী সেই স্কোপ (সুযোগ) নেই।’

মির্জা ফখরুল ছাড়াও বিএনপির ওই প্রতিনিধি দলে ছিলেন- কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, রফিকুল ইসলাম মিঞা, মির্জা আব্বাস, ড. মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

উল্লেখ্য, জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার শুনানি এতদিন চলছিল কারাগারের কয়েকশ গজ দূরে বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসাসংলগ্ন কারা অধিদফতরের মাঠে বিশেষ এজলাসে।

নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে গত মঙ্গলবার আইন মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের ৭ নম্বর কক্ষকে আদালত ঘোষণা করে সেখানেই দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার শুনানি করার নির্দেশ দেয়। এরপর বুধবার সেই আদালত বর্জন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।

এ কারাগারেই আরেকটি ভবনের দোতলার একটি কক্ষে গত সাত মাস ধরে বন্দি রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি একই বিচারক তাকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেন।