বিক্ষোভে ছাত্র সংগঠনের অংশগ্রহণে উত্তাল ইবি

ইসলমী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাজিদ হত্যার তদন্ত পিভিআইকে হস্তান্তর,তদন্তের অগ্রগতি রোডমেপ প্রকাশ,খুঁনির দ্রুত বিচার সহ ক্যাম্পাস সংস্কারের নানা দাবি বাস্তবায়নে বিক্ষোভ।

সোমবার (৪ আগষ্ট) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল,বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবির,বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ইবি সংসদ, ইসলমী ছাত্র আন্দোলন, খেলাফতে ছাত্র মজলিস, বাংলাদেশ জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়ার ইবি শাখার নেতৃবৃন্দ সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে প্রশাসন ভবনের সামনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ, শাখা শিবিরের সভাপতি মাহমুদুল হাসান, সাবেক সমন্বয়ক এস. এম সুইটসহ প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী।

শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ বলেন, আমরা আর কোনো তালবাহানা দেখতে চাচ্ছি না, ক‍্যাম্পাসে আর কোনো লাশ দেখতে চাচ্ছি ন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে প্রতিটি শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে ।আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে হুঁশিয়ার করে দিতে চাই পিবিআই ও বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে দ্রুত সাজিদ হত্যার খুনিদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে

শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, “আমরা সাজিদ আব্দুল্লাহকে হারিয়েছি। জুলাই আন্দোলনের পর আমাদের নিরাপদ ক‍্যাম্পাস পাওয়ার কথা ছিলো যে প্রশাসন আমাদের আগলে রাখবে, সব দাবি পূরণ করবে, প্রতিটি শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে সে রকম প্রশাসন পাওয়ার কথা ছিল কিন্তু আমরা দেখেছি প্রশাসন অনেকাংশে ব্যর্থ হয়েছে।

আমারা প্রশাসন কে বলতে চাই সাজিদ আব্দুল্লাহর খুনিদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে ।সিডিআই, পিবিআই উচ্চতর তদন্ত কমিটি দিয়ে জড়িতদের চিহ্নিত করে তাদের সবোর্চ্চ শাস্তি ফাঁসি নিশ্চিত করতে হবে। প্রশাসন যদি দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয় তাহলে আমরা প্রশাসনকে আসসালামুআলাইকুম বলতে বাধ্য হবো।

আমরা বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন সম্প্রীতি ১০/১৫ দফা দাবি দিয়েছি কিন্তু বতর্মানে আমাদের দাবি একটাই সাজিদ আব্দুল্লাহ খুনিদের ফাঁসি নিশ্চিত করতে হবে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে এই দাবি পূরণ করুন নাহলে আপনাদের মত প্রশাসন আমাদের দরকার নাই। যদি চেয়ার সেচ্ছায় ছেড়ে না দেন তাহলে আমরা শিক্ষার্থীদের নিয়ে কঠিন আন্দোলন গড়ে তুলবো।

শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি নূর আলম বলেন, আমরা সাজিদ হত্যার বিচার ছাড়া রুমে ফিরে যাবো না। যারা সাজিদের স্বপ্নকে ভঙ্গ করেছে, যারা সাজিদের পরিবারের স্বপ্নকে ভঙ্গ করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না করে আমরা মাঠ ছাড়ব না।আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখেছি পিবিআইকে তদন্ত হস্তান্তর করা হয়েছে ।আমরা জানতে চাই এই তদন্ত প্রক্রিয়া কী, কতদিন সময় লাগবে এর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা চাই।

সাবেক সমন্বয়ক এস.এম সুইট বলেন, আমরা জানতে পেরেছি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সাজিদ হত্যার তদন্তের দায়িত্ব পিবিআইকে (PBI) দিতে যাচ্ছে। আমরা স্পষ্ট করে জানাতে চাই, এই হস্তান্তর যেন আজকের মধ্যেই সম্পন্ন হয় এবং কালক্ষেপণ না করা হয়। তদন্ত শুরু হওয়ার পর পিবিআইকে নির্দিষ্ট সময় পরপর অগ্রগতির একটি রোডম্যাপ শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরতে হবে।

এই হত্যাকাণ্ডের পর আমরা আশঙ্কা করছি, আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বা জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। আমরা দাবি করছি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেন প্রত্যেক আন্দোলনকর্মী, বিশেষ করে জুলাই অভ্যুত্থানের অংশগ্রহণকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। যদি প্রশাসন এই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়, তাহলে তাদের উচিত হবে পদত্যাগ করা।

উপচার্য নকীব মো: নসরুল্লাহ বলেন, গতকাল পাওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী নিশ্চিত হওয়া গেছে, সাজিদ আব্দুল্লাহকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে।যেহেতু এটি একটি হত্যাকাণ্ড, তাই বিষয়টি এখন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার আওতায় যাবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।

ভিকটিমের পরিবারকে বিষয়টি জানানো হয়েছে এবং আজকের মধ্যেই একটি আনুষ্ঠানিক মামলা রুজু করা হবে।দোষীদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। শাস্তির ব্যাপারে আমরা শতভাগ কঠোর অবস্থানে আছি।

আমরা ইতোমধ্যে উচ্চতর তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা দিয়েছি এবং আজ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হবে। শিক্ষার্থীদের দাবির আলোকে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও পরীক্ষা যাতে স্বাভাবিকভাবে চলে, সে বিষয়েও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রশাসন নিয়মিতভাবে শিক্ষার্থীদের অগ্রগতি জানাবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করা হবে।