বিজিএমইএ ভবন ভাঙার প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজউক
আদালতের রায় অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই বিজিএমইএ ভবন ভাঙার প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজধানী উন্নয়ন কতৃপক্ষ (রাজউক)। অন্যদিকে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষও নিজেদের কর্মকাণ্ড ওই ভবন থেকে গুটিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে।
বিজিএমইএ সূত্রে জানা যায়, আপাতত উত্তরায় অফিস করবে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ। অস্থায়ীভাবে অফিস ভাড়া নেওয়ার জন্য অফিসও খোঁজা হচ্ছে, কারণ ছয় মাসের মধ্যে জায়গা নির্বাচন করে বহুতল ভবন নির্মাণ করা সম্ভব নাও হতে পারে। এছাড়া স্থায়ীভাবে উত্তরায় অফিস তৈরি করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে যে জায়গার ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল তা নিয়ে আলোচনা চলছে। শিগগির এ বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। এর পরেই বোঝা যাবে ভাড়া অফিস নেবে কিনা বিজিএমইএ।
মাত্র ছয় মাস সময়ের মধ্যে জায়গা নির্বাচন করে বহুতল ভবন নির্মাণ সম্ভব কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, আমরা ভাড়া নয়, নিজস্ব ভবনেই চলে যেতে পারব। তবে একটি বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য তিন বছর সময়ের আবেদন করেছিলাম আমরা। এখন আর কিছু করার নেই আমাদের। কারণ আদালতের রায়কে আমরা সম্মান করি। তাই নির্দিষ্ট সময়েই আমরা চলে যাব।
ভবন ভাঙলে পোশাক খাতে কোনো প্রভাব পড়তে পারে কিনা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশে-বিদেশে ইমেজ সংকটে পড়বে পোশাক খাত। তবে আবার নিজস্ব ভবনে চলে যেতে পারলে সেই সংকট কাটিয়ে ওঠা যাবে।
ভবনের ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে ভবন ছাড়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভবনের দুই লাখ ৬০ হাজার বর্গফুটের মধ্যে এক লাখ ৪০ হাজার বর্গফুট ব্যবহার করে বিজিএমইএ। বাকি এক লাখ ২০ হাজার বর্গফুট বিক্রি করা হয়েছে। তিনটি ব্যাংক ছাড়া ভবনের বিভিন্ন ফ্লোর যাদের কাছে বিক্রি করা হয়েছে তারা সবাই বিজিএমইএর সদস্য। ভবনে কোনো ভাড়াটিয়া নেই।
তবে তাদের সঙ্গেও আমাদের কিছু চুক্তি হয়েছিল এবং চুক্তির বিষয়গুলো নিয়ে দুপক্ষের আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করা হবে। বিষয়টি নিয়ে সমস্যা হবে না বলেও জানান তিনি।
একই বিষয়ে বিজিএমইএর সহ-সভাপতি (অর্থ) মো. নাছির উদ্দিন বলেন, ভবনটি ভাঙার দায়িত্ব আমরা নেব না। রাজউকই ভাঙবে। আমরা এখন এখান থেকে চলে যেতে পারলে বাঁচি।
এদিকে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকায় বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) অবৈধভাবে গড়ে তোলা বহুতল ভবন কোন পদ্ধতিতে ভেঙে ফেলা হবে তা প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।
রাজউকের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, আদালতের রায়ের পর থেকেই ভবনটি ভাঙার বিষয়ে কর্মকর্তারা কয়েকবার বৈঠকে বসেছিল। ভবনটি ভাঙতে বিজিএমইএ খরচ দিলেও, ভাঙার পদ্ধতি খুঁজে বের করতে হচ্ছে রাজউককে। তাই আলাদা একটি বিশেষজ্ঞ দলও কাজ করেছে বিষয়টি নিয়ে এবং যে বৈঠক হয়েছে তাতে বিস্ফোরক ব্যবহারের মাধ্যমে ভবনটি ভাঙার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এজন্য চীনসহ কয়েকটি দেশের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও কথা বলেছে রাজউক।
একই বিষয়ে রাজউক বোর্ডের সদস্য (উন্নয়ন) আবদুর রহমান বলেন, আমরা বিজিএমইএ ভবন ভাঙার জন্য প্রস্তুত আছি। কন্ট্রোলড ডিমোলিশন পদ্ধতি অনুসরণের বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত। এ পদ্ধতিতে একটি ভবনের বিভিন্ন অংশে বিস্ফোরক বসিয়ে আশপাশের সবার নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করার পরই ভবন ধ্বসানোর কাজটি সম্পন্ন করতে হয়।
আবদুর রহমান বলেন, বিস্ফোরণের মাধ্যমে ভবনটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার বেশকিছু নেতিবাচক দিক রয়েছে। সেগুলো হলো ঘটনাস্থলে প্রচণ্ড ধুলি, শব্দ ও কম্পন তৈরি হতে পারে। এর ফলে বিজিএমইএ ভবনের কাছাকাছি থাকা বাড়িঘর, হাতিরঝিলের আন্ডারগ্রাউন্ড ও সংলগ্ন সড়কে থাকা পানি, গ্যাস ও বৈদ্যুতিক লাইন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ক্ষতির শিকার হতে পারে সোনারগাঁও হোটেলও। তাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এসব বিষয় ভালোভাবে বিবেচনা করা হবে।
এছাড়া ভবন ভাঙার ফলে সম্ভাব্য পরিবেশ বিপর্যয়ের বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে পরিবেশ অধিদপ্তর। তবে পরিবেশ অধিদপ্তর এ বিষয়ে তাদের পর্যবেক্ষণ এখনও জানায়নি বলেও জানান তিনি।
রাজউকের অন্য একটি সূত্রে জানা যায়, ভবনটি ভাঙার বিষয়ে রাজউকের সঙ্গে হাতিরঝিল প্রকল্পের সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরেরও আলাপ-আলোচনা চলছে। বিজিএমইএর কাছে ভবনের ড্রয়িং-ডিজাইনগুলোও চাওয়া হয়েছে। কোথায় কলাম, কোথায় রড আছে, সেগুলোর অবস্থানের ভিত্তিতে সব ঠিক করা হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন