বিজয়ী-পরাজিত চেয়ারম্যানের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ ১১
গোপালগঞ্জে স্থানীয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিজয়ী ও পরাজিত চেয়ারম্যানের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ১১ জন গুলিবিদ্ধসহ ৩০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় ছয়টি বাড়ি-ঘরে ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে।
মঙ্গলবার সকালে সদর উপজেলার শুকতাইল ইউনিয়নের পারচন্দ্র দিঘলীয়া গ্রামে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
আহতদের মধ্যে ১৭ জনকে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
গোপালগঞ্জ হাসপাতালে যারা ভর্তি রয়েছেন তারা হলেন- মিঠুন মোল্লা (২৫), সুজন মোল্লা (২৮), রবিউল মোল্লা (৩৫), নাসির মোল্লা ( ৪০), একরাম শেখ (৫০), জারিব শেখ (২৫), আরিফ শেখ (৩০), সিরাজ শেখ (৫০), হেমায়েত মোল্লা (৫০), বুলবুল মোল্লা (২৬) , মাসুদ মোল্লা (৩৫), লিমন মোল্লা (২২), সাবের মোল্লা (২০), তুহিন মোল্লা (৩০), আকাশ (১৬), বদর মোল্লা (৪০) ও মাসুদ (৩০)। অপর আহতরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছে।
সরেজমিনে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুকতাইল ইউনিয়নের বিজয়ী চেয়ারম্যান রানা মোল্লা ও পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী শেখ মো. আবেদ আলী সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়।
সংঘর্ষে পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী শেখ মো. আবেদ আলীর পক্ষে নেতৃত্ব দিয়েছেন ওই গ্রামের সাবান মোল্লা ও অপর পক্ষের নেতৃত্ব দিয়েছেন রবিউল মোল্লা। নির্বাচনের পর থেকে দুপক্ষের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার করাকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল।
বিজয়ী চেয়ারম্যান রানা মোল্লার সমর্থক আহত মুরাদ শেখ বলেন, সোমবার আমি বাড়ি থেকে সরিষা নিয়ে তেল ভাঙতে চন্দ্রদিঘলিয়া যাচ্ছিলাম।
পথিমধ্যে আবেদ আলীর সমর্থক বিরামপাড়ার জাফর মোল্লার ছেলে রাজিবুল আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, যারা রানা মোল্লাকে চেয়ারম্যান ও ওহিদুল শেখকে মেম্বারের ভোট দিয়েছেন তাদের একজন একজন করে দেখে নেব বলে হুমকি দেন। এসময় আমার ছেলে রিয়াদ এসে তাকে চলে যেতে বললে তিনি আমার ছেলেকে হতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে আহত করেন। আমি ঠেকাতে গেলে আমাকে ও হাতুড়ি পেটা করে হাত ভেঙে দেন। আমরা তখনই হাসপাতালে ভর্তি হই। ওই দিন দু’ পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পালটা ধাওয়া চলে।
এ ঘটনার জেরে মঙ্গলবার সকালে আবেদ আলীর সমর্থকরা সংঘবদ্ধভাবে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে রানা মোল্লার সমর্থদের ওপর হামলা চালায়। এসময় মাসুদ মোল্লা, সাদিক মোল্লা, আলমামুন, মোহাম্মাদ মোল্লা, হেমায়েত মোল্লা ও বদিউজ্জামানের বাড়িসহ ছয়টি বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করে। সংঘর্ষ চলার সময় ১১ জন গুলিবিদ্ধ হয়।
এবিষয়ে পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী শেখ মো. আবেদ আলীর সমর্থক সাবান মোল্লা বলেন, এটা সামান্য একটা ঘটনা। নির্বচনের পর থেকে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করা নিয়ে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। রানা মোল্লা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর তার হুকুমে এসব হচ্ছে। ঘটনার পর রানা চেয়ারম্যান তার গাড়ি দিয়ে তাদের লোকজন হাসপাতালে নিয়ে গেছে। দুপক্ষের লোক জড়ো হয়ে সংঘর্ষ হয়। কে কাকে গুলি করছে তা আমি বুঝতে পারিনি।
এ বিষয়ে সুকতাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রানা মোল্লা বলেন, আমি এলাকায় ছিলাম না। মঙ্গলবার সকালে বাড়িতে আসছি। আমি আগে আহতদের দেখব এরপর কথা বলব।
গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. বিচিত্র কুমার বিশ্বাস বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় ১৭ রোগী হাসপাতালে এসেছে। এদের মধ্যে ১১ জনের শরীরে গুলিবিদ্ধ। তাদের শরীর থেকে গুলি বের করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা এখন ঝুঁকি মুক্ত।
গোপালগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শীতল চন্দ্র পাল বলেন, সুকতাইল সংঘর্ষের ঘটনা জানার পর আমরা তাৎক্ষণিক সেখানে যাই। এছাড়া হাসপাতালে এসেছি রোগী দেখতে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি এখন শান্ত।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন