বিজয় দিবসের ঠিক পরেই ভোটগ্রহণ চায় সরকার!

বিজয় দিবসের ঠিক পরেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ করতে চায় সরকার। সম্ভাব্য ১৮ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) ধরে এ জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ লক্ষ্যে নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহেই তফসিল ঘোষণা হবে। রেওয়াজ অনুযায়ী তফসিলের পর ৪৫ দিনের মাথায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। খবর পরিবর্তনের।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। তার এ ভাষণ বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) প্রচারিত হবে। এ বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য ইসি থেকে বিটিভিতে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।

আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে, ক্ষমতাসীনরা প্রথমে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে ও পরে জানুয়ারির শুরুর দিকে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যত কম সময়ের মধ্যে পারা যায় নির্বাচন করতে চায় তারা। এ ক্ষেত্রে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে আন্দোলনের মাধ্যমে কোনো অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার সুযোগ দিতে নারাজ আওয়ামী লীগ।

এ ছাড়া ডিসেম্বর মাস বিজয়ের মাস। এ মাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে দলগতভাবে আওয়ামী লীগের অর্জন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বেই মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বর ওতপ্রোতভাবে আওয়ামী লীগের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত। এ ক্ষেত্রে বিজয় দিবসের পরপর ভোট অনুষ্ঠিত হলে বাড়তি সুবিধা পাবে বলে মনে করছেন তারা।

আওয়ামী লীগ হাইকমান্ড মনে করছে, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপিসহ বিরোধীদের যে জোট হয়েছে সেটার ভিত্তি খুব একটা শক্তিশালী নয়। পরস্পর বিপরীত মতাদর্শের রাজনৈতিক এ জোটে পক্ষে সাংগঠনিকভাবে খুব বেশিদূর যাওয়া সম্ভব নয়। তবে সাম্প্রতিক কোটা আন্দোলন, শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে কঠোর অবস্থানের কারণে তরুণদের মাঝে সরকারবিরোধী একটা মনোভাব তৈরি হয়েছে।

এ ছাড়া দেশে গত ১০ বছরে প্রভূত উন্নতি হলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টা নিয়ে মধ্যবিত্তসহ সাধারণ মানুষের মাঝে উদ্বিগ্নতা রয়েছে।

এ পরিস্থিতিতে বিরোধীরা যদি বেশি সময় পায় তাহলে নিজেদের দল সংগঠিত করার পাশাপাশি জনগণের মাঝে সরকারবিরোধী প্রচারণা চালানোর সুযোগ পাবে। এ ছাড়া জনগণের মাঝে উসকানি দিয়ে সহিংসতাও সৃষ্টি করতে পারে বিভিন্ন মহল। এ পরিস্থিতিতে অনেকটাই বিরোধীদের অপ্রস্তুত রেখে তফসিল ঘোষণা ও নির্বাচনের ডামাডোল সৃষ্টি করতে চান তারা।

নির্বাচন কমিশনও নভেম্বরের শুরুতে তফসিল ও বিজয় দিবসের পরে ভোটের প্রস্তুতি গুছিয়ে এনেছে। বিটিভিতে চিঠি পাঠানোর বিষয়ে ইসি সূত্র জানিয়েছে, সিইসি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। এর প্রস্তুতির জন্যই বিটিভি কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ওই ভাষণে তফসিল ঘোষণা হতে পারে বলে জানায় ওই সূত্র।

তফসিল ঘোষণার পর ভোটগ্রহণের জন্য সাধারণত ৪৫ দিন সময় থাকে। এর মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা, যাচাই-বাছাই ও আপিলের সময় থাকে। এরপর মনোনয়ন প্রত্যাহার এবং প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে ভোটগ্রহণের সময় থাকে ১৯ দিন।

বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বছরের ২৮ জানুয়ারি। সংবিধান অনুযায়ী, এ বছরের ৩০ অক্টোবর থেকে ২৮ জানুয়ারির মধ্যে ভোটগ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে আগের নির্বাচনগুলোকে দেখা গেছে, সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার অন্তত ১২-১৫ দিন হাতে রেখে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোনো কারণে আবার ভোটগ্রহণের দরকার পড়লে যাতে পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায় সেজন্যই এটা করা হয়।

এদিকে সরকারবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ সাত দফা দাবি জানিয়েছে। দাবিগুলোর সমর্থনে তারা ঢাকা ও সিলেটে সমাবেশ করেছে। চট্টগ্রাম ও রাজশাহীসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে তারা সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে। তবে জোটটির রূপরেখা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এটা নির্বাচনী জোট না আন্দোলনের জোট তা নিয়েও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে।

এ পরিস্থিতিতে সরকার চাইছে, জোটটিকে আন্দোলনের জন্য বেশি সময় দেওয়া ঠিক হবে না। তফসিল ঘোষণা করে দিলে দেশে নির্বাচনী আমেজ তৈরি হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে বিরোধীরাও শামিল হবে নির্বাচনে দৌড়ে। কারণ গতবারের মতো নির্বাচন বর্জন করলে দলগতভাবে আরও ক্ষতির মুখে পড়বে বিএনপি।