বিদেশি অধিকাংশ গণমাধ্যমের প্রধান খবরে বাংলাদেশের নির্বাচন
৩০ ডিসেম্বর সকাল থেকে শুরু হয়ে গেছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট যুদ্ধ। দশ বছর পর এই প্রথম একটি নির্বাচন হচ্ছে যাতে অংশ নিচ্ছে দেশের সব প্রধান রাজনৈতিক দল।
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে তাই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কৌতূহল এবং পর্যবেক্ষণের প্রতিফলনই পাওয়া যায় বিবিসি, আলজাজিরা এবং ভারতের জনপ্রিয় গণমাধ্যম এনডিটিভিতে।
ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা বিবিসি– বাংলাদেশ নির্বাচন: ‘উচ্চ সতর্কতা ও নিরাপত্তার চাদরে ভোট’ এই শিরোনামে প্রতিবেদনে বলেন- ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে সাধারন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। হাসিনা পরপর তৃতীয়বারের মতো জয়লাভের ব্যাপারে আশাবাদী’।
এদিকে নির্বাচনকে ঘিরে দেশব্যাপী কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আইন শৃংখলা রক্ষায় প্রায় ৬ লক্ষ সৈন্য নিয়োজিত আছে। এবারের ভোটারের সংখ্যা ১০ কোটির অধিক।
এর আগে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রধান দুই দলের সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ১২ জনের মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
বিবিসি প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এবারের নির্বাচনে অন্যদের থেকে কিছুটা এগিয়ে আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী দুর্নীতির দায়ে জেলে আছেন।
নির্বাচনী গুজব অস্থিরতা রোধ করার জন্য রাত থেকে বাংলাদেশের উচ্চ গতির মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হয়েছে।
তবে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসির এক কর্মী চট্রগ্রাম ১০ আসনে(লালখান বাজার) নির্বাচনে আনুষ্ঠানিক ভোট গ্রহন শুরুর আগেই ভরা ব্যালট বাক্স দেখেছেন বলে দাবি করেছেন।
এ ব্যাপারে সেখানকার প্রিসাইডিং অফিসারকে জিজ্ঞেস করলে তিনি কোন মন্তব্য করে নি।
‘আল জাজিরা’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে– ‘হুমকি ও সহিংসতার ভেতর দিয়ে বাংলাদেশে সাধারন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দেশটির প্রায় ১০ কোটি ৪ লক্ষ ভোটারের হাতে এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্য নির্ভর করছে। যিনি তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হবার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
লাখ লাখ বাংলাদেশি নাগরিক নিয়ন্ত্রিত পরিবেশের মাঝেও ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোট প্রদানের জন্য অপেক্ষা করছেন। সকাল ৮ টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত টানা চলবে এ ভোটগ্রহণ। এবার দেশ জুড়ে প্রায় ৪০ হাজার ভোটকেন্দ্র রয়েছে বলে জানিয়েছে আল জাজিরা।
শেখ হাসিনা বলেন,‘আমরা গণতন্ত্রের উপর বিশ্বাস করি এবং জনগণের ম্যান্ডেট গ্রহণ করবো’।
ভারতের গণমাধ্যম ‘এনডিটিভি’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে–
কড়া নিরাপত্তার চাদরে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে বাংলাদেশে। ভোট পর্বের শুরু থেকেই অন্যদের চেয়ে কিছুটা এগিয়ে আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার জিতলে টানা তিনবার জেতা হবে তার।
এনডিটিভি প্রতিবেদনে আওয়ামী লীগের এক কর্মীকে খুন করার অভিযোগ উঠেছে বিএনপির বিরুদ্ধে। এবং ৭১ এর পর ১১তম সাধারণ নির্বাচনে পরের পাঁচ বছর কার হাতে থাকবে বাংলাদেশের ক্ষমতা তা নির্ধারণ করবে ১০ কোটি ভোটার বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করে।
এবং নির্বাচনে শাসক আওয়ামী লীগ না বিরোধী জোট শেষ হাসি কে হাসবে তা দেখার কথা বলছেন আন্তর্জাতিক এই গণমাধ্যম।
সাথে সাথে বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে এনডিটিভি প্রতিবেদনে।
কিন্তু জনমত সমীক্ষা বলছে এবারও এগিয়ে শেখ হাসিনাই। ৩০০ আসনের সংসদে জিততে দরকার ১৫১টি আসন। সমীক্ষা মনে করে সেটি পেয়ে যেতে পারেন হাসিনা। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মনে হয় জিতলেও বিরোধীদের দমন করার অভিযোগ উঠবে হাসিনার বিরুদ্ধে।
নির্বাচন পর্ব শুরু হওয়া থেকে এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন বিরোধী দলের প্রায় ১৫ হাজার নেতাকর্মী।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতো সংগঠনের দাবি বাংলাদেশে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। নির্বাচনী পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আমেরিকাও।
বিরোধী জোটের নেতা কামাল হুসেন শবিনার এনডিটিভিকে জানিয়েছিলেন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট হলে শাসক দলের পরাজয় নিশ্চিত। আর তাই গায়ের জোরে বিরোধীদের দমন করার চেষ্টা হচ্ছে ।
এই আচরণ থেকে স্পষ্ট সরকার দেশের মানুষের উপর আস্থা রাখতে পারছে না। শুধু বিরোধী দলগুলি নেতা-কর্মী নন গ্রেপ্তার হয়েছেন সতেরো জন প্রার্থীও।
বাংলাদেশ সিভিল সোসাইটি গ্রুপের নেতা বদিউল আলম মজুমদারের দাবি শাসক দলই আবার ক্ষমতায় ফিরবে এমন মনোভাব তৈরির জন্যই এভাবে গ্রেপ্তারি করা হচ্ছে।
প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, বৃহস্পতিবার রাতে বিটিআরসি-কে ৩জি এবং ৪জি পরিসেবা নিয়ন্ত্রণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সংস্থা এএফপিকে তিনি আরও জানান নির্বাচনের মুখে ইন্টারনেটের অপব্যবহার করে কেউ যাতে বিভ্রান্তি না ছড়াতে পাতে তা সুনিশ্চিত করতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন