বিদেশি কর ফাঁকিবাজদের ধরতে শিগগিরই অভিযান
দেশে কর্মরত বিদেশি কর ফাঁকিবাজদের ধরতে নতুন করে অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এমন ৩০টি প্রতিষ্ঠান শনাক্ত করা হয়েছে।
এর আগে বাংলাদেশে তেল–গ্যাস অনুসন্ধান ও উন্নয়নে নিয়োজিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানি শেভরনসহ পাঁচ প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালানো হয়। সে সময় একটি প্রতিষ্ঠানে ১২ এবং অপর একটি প্রতিষ্ঠানে তিন বিদেশি কর্মকর্তার সন্ধান পায় এনবিআর। তারা উচ্চ বেতনে চাকরি করলেও রিটার্ন দেন না।
এনবিআর কর্মকর্তারা নতুন করে এমন ৩০টি প্রতিষ্ঠান শনাক্ত করে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চলতি মাসে অভিযান পরিচালিত হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
২০১৬ সালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রতি বছর দেশ থেকে প্রায় ৪০০ কোটি ডলার নিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশিরা। টাকার হিসাবে যা প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকা। এ অর্থ বাংলাদেশের মোট রেমিট্যান্স আয়ের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। প্রতি বছর এর পরিমাণ বাড়ছে আশঙ্কাজনকভাবে। বিষয়টি নিয়ে বেশ চিন্তিত এনবিআর।
এনবিআরের ট্যাক্স লিগ্যাল অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট বিভাগের সদস্য সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘সম্প্রতি আমরা পাঁচ প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে ১৫ বিদেশিকে পেয়েছি। তারা উচ্চ বেতনে চাকরি করেন কিন্তু সরকারকে কোনো আয়কর দেন না। এ অবস্থায় এসব কর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এনবিআরের স্ব স্ব জোন থেকে চিঠি ইস্যু হয়েছে।’
‘আমরা নতুন করে আরও ৩০ প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যেসব বিদেশিকর্মী আয়করের বাইরে থাকবেন তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইনের ১০৮ ধারা মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে। যেসব প্রতিষ্ঠানে অধিকসংখ্যক বিদেশিকর্মী নিয়োজিত আছে তার একটি তালিকাও করা হয়েছে। শিগগিরই অভিযান শুরু হবে।’
সূত্র জানায়, বাংলাদেশে অবস্থান করা বিদেশির সঠিক সংখ্যা সরকারি কোনো সংস্থার কাছে নেই। অধিকাংশ বিদেশি বাংলাদেশে প্রবেশের ক্ষেত্রে ট্যুরিস্ট ভিসা ব্যবহার করেন। এরপর বিভিন্ন কাজে যুক্ত হন। অনেকে বিভিন্ন কোম্পানির ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে আসেন। বিশেষ করে এনজিও, হোটেল-রেস্টুরেন্ট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, প্রকৌশল, চিকিৎসা, গার্মেন্টস, মার্চেন্ডাইজিং, পরামর্শকসহ বিভিন্ন পদে যোগ দিয়ে উচ্চ বেতন নেন। তাদের বেতনের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান গোপন রাখে।
মূলত কর ফাঁকি দিতেই এ কৌশল অবলম্বন করা হয়। পাশাপাশি গোপন চুক্তি অনুযায়ী বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে মানি লন্ডারিংয়ের আশ্রয় নেয়া হয়। প্রতি বছরই মুদ্রা পাচারের পরিমাণ আশংকাজনক হারে বাড়ছে।
এছাড়া অবৈধভাবে আসা বিদেশিরা মাদক চোরাচালান, জাল মুদ্রা তৈরি ও ব্যবহারের মতো অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন, যা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। আবার অনেক বিদেশি ‘অন অ্যারাইভাল’ ভিসা নিয়ে দেশে প্রবেশের পর ঠিকানা পরিবর্তন করেন। ফলে তাদের খুঁজে বের করা যায় না।
এমন অবস্থায় বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশিদের কাছ থেকে সঠিকভাবে আয়কর আদায় করতে বছর দুয়েক আগে একটি টাস্কফোর্স গঠন করে এনবিআর। টাস্কফোর্সের সদস্য হিসেবে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), পুলিশের এসবি, ডিজিএফআই, এনএসআই, বাংলাদেশ ব্যাংক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বেপজা, পাসপোর্ট অধিদফতর, এনজিও ব্যুরো ও এফবিসিসিআইয়ের প্রতিনিধিদের রাখা হয়। পরবর্তীতে কাজের সুবিধার্থে ঢাকা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলভিত্তিক টাস্কফোর্সকে ভাগ করা হয়।
ঢাকা অঞ্চলের টাস্কফোর্স ১২ সদস্য নিয়ে গঠিত। বিদেশিদের ডাটাবেজ তৈরির কাজও করছে এ টাস্কফোর্স। কিন্তু ডাটাবেজ তৈরি এখনও সম্পন্ন হয়নি বলে জানা গেছে।
এনবিআর কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম আরো বলেন, বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশিদের প্রকৃত সংখ্যা জানতে একটি ডাটাবেজ তৈরির কাজ চলছে। যেখানে বিদেশিকর্মীর নাম, পাসপোর্ট নম্বর, কর্মস্থলের ঠিকানা, বাংলাদেশে বসবাসের স্থায়ী ঠিকানা, কাজের ধরন, বেতন-ভাতা ও আয়কর পরিশোধের তথ্য উল্লেখ থাকবে। ডাটাবেজ শেষ করতে আরও একটু সময় লাগবে। প্রক্রিয়া চলছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন