বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে
বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের বিদেশে বিনিয়োগের বাধা দূর হচ্ছে। আর প্রথম সুযোগটি পেতে যাচ্ছে দেশের অন্যতম শিল্প প্রতিষ্ঠান আকিজ গ্রুপ। বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া শর্ত পূরণ সাপেক্ষে বাংলাদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য অন্য দেশে গিয়ে বিনিয়োগ করার দ্বার উন্মোচিত হতে যাচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশী বিনিয়োগকারীরা বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করে আসছিল। বেশ কয়েক বছর আগে দেশের নেতৃস্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান আকিজ গ্রুপ, হা-মীম গ্রুপ এবং নিটোল-নিলয় গ্রুপ বিদেশে বিণিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করে সরকারের কাছে আবেদন করে। তাদের যুক্তি ছিল বিদেশী বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারলে বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীরা কেন পারবে না।
সূত্র জানায়, বিষয়টি নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতামত চাওয়া হয়। এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক-১ আহমেদ জামালকে প্রধান করে ‘বাংলাদেশী উদ্যোক্তা কর্তৃক বিদেশে বিণিয়োগ সংক্রান্ত প্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি)’ গঠন করা হয়।
সূত্র জানায়, বিভিন্ন দিক যাচাই-বাছাই করে এই কমিটি সম্প্রতি আকিজ গ্রুপের মালয়েশিয়ায় বিনিয়োগের আবেদনে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। একই সঙ্গে বিনিয়োগকৃত অর্থের হিসাব সুষ্ঠুভাবে সংরক্ষণ, শতভাগ লভ্যাংশ দেশে ফেরত আনা, মালয়েশিয়ায় স্থাপিত শিল্প প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশীদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিসহ ১৩টি শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশী উদ্যোক্তা আকিজ জুট মিলস লিমিটেড মালয়েশিয়ায় আকিজ রিসোর্স এসডিএন বিএইচডি নামে কোম্পানি গঠন করে সেই কোম্পানির মাধ্যমে মালয়েশিয় কোম্পানি রবিন রিসোর্সেস (মালয়েশিয়া) এসডিএন বিএইচডি (যার শতভাগ মালিকানাধীন সাবসিডিয়ারি রবিন ফ্লোরিং এসডিএন বিএইচডিসহ) অধিগ্রহণ করার জন্য প্রস্তাব করে। এর অনুকুলে আকিজ জুট মিলস লিমিটেডের নামে পরিচালিত এক্সপোর্টার্স রিটেনশন কোটা হিসাবে স্থিতি থাকা সাপেক্ষে তা থেকে প্রস্তাবিত অনিবাসী সাবসিডিয়ারি আকিজ রিসোর্সেস এসডিএন বিএইচডি-এর অনুকুলে মালয়েশিয়ায় ইক্যুইটি ইনভেস্টমেন্ট বাবদ ২০ মিলিয়ন ডলার পাঠানোর আবেদনপত্র পিইসি’র বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়। কমিটি এ ব্যাপারে কয়েকটি পর্যবেক্ষণ ও মতামত গ্রহণ করে।
সূত্র জানায়, আকিজ গ্রুপের বিনিয়োগ প্রস্তাবে কমিটি দেখতে পায় যে, আকিজ জুট মিলস লিমিটেড নিজের শতভাগ মালিকানাধীনে মালয়েশিয়ায় ২০ মিলিয়ন ডলার সমমূল্যের পরিশোধিত মূলধনে আকিজ রিসোর্স এসডিএন বিএইচডি নামের একটি কোম্পানি গঠন করবে। এই কোম্পানি তার পরিশোধিত মূলধনের ২০ মিলিয়ন ডলার এবং বিদেশ থেকে ৬০ মিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়ে মোট ৮০ মিলিয়ন ডলারে মালয়েশিয়ার রবিন রিসোর্সেস (মালয়েশিয়া) এসডিএন বিএইচডি নামের কোম্পানি ক্রয় করবে। আর এই ক্রয় করা হবে সিংগাপুরের হোল্ডিং কোম্পানি রবিনা রিসোর্স পিটিই লিমিটেডের কাছ থেকে।
কমিটি এখানে দেখতে পায় যে, মালয়েশিয়ায় প্রস্তাবিত সাবসিডিয়ারি আকিজ রিসোর্সেস এসডিএনবিএইডি এবং এ সাবসিডিয়ারি কর্তৃক অধিগ্রহণতব্য রবিন রিসোর্সেস (মালয়েশিয়া) এসডিএন বিএইচডি (যার শতভাগ মালিকানাধীন সাবসিডিয়ারি রবিনা ফ্লোরিং এসডিএন বিএইচডি-সহ) উভয়ের উপর স্থানীয় আকিজ জুট মিলস লিমিটেডের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
প্রস্তাবিত বিনিয়োগের মাধ্যমে স্থানীয় প্রতিষ্ঠান আকিজ জুট মিলস লিমিটেড মালয়েশিয়ার রবিন রিসোর্সেস (মালয়েশিয়া) এসডিএন বিএইচডি অধিগ্রহণ করে মালয়েশিয়ায় ফাইবার বোর্ড এবং কাঠ ভিত্তিক পণ্য উৎপাদন এবং সেখান থেকে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করবে। যেহেতু এ পণ্য বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হয় না সেহেতু উক্ত কোম্পানি মালয়েশিয়ায় উৎপাদন কার্যক্রম সম্প্রসারণ করলে বাংলাদেশের রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হবে না।
প্রস্তাবিত বিণিয়োগের মাধ্যমে আকিজ জুট মিলস লিমিটেড কর্তৃক অধিগ্রহণতব্য রবিন রিসোর্সেস (মালয়েশিয়া) এসডিএন বিএইচডি বর্তমানে লাভজনক প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৪ সালে ৪ দশমিক ৫২ মিলিয়ন ডলার, ২০১৫ সালে ৬ দশমিক ১৬ মিলিয়ন ডলার এবং ২০১৬ সালে ৭ দশমিক ৮৪ মিলিয়ন ডলার করোত্তর মুনাফা করেছে। উক্ত মেয়াদে কোম্পানিটি যথাক্রমে ১০ শতাংশ, ২০ শতাংশ এবং ৮২ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদান করে। সর্বশেষ নিরিক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) শূণ্য দশমিক ৫৩ রিংগিত/শূণ্য দশমিক ১৩ ডলার (প্রতি শেয়ারের দাম ১ রিংগিত/শূণ্য দশমিক ২৫ ডলার) অর্থাৎ ৫৩ শতাংশ। কোম্পানির আগামী ১০ বছরে ইপিএস প্রাক্কলন করা হয়েছে সর্বনি¤œ ৬৬ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ১৬৪ শতাংশ।
প্রস্তাবিত বিনিয়োগ থেকে আগামী ১০ বছরে ৮৩ দশমিক শূন্য ৬ মিলিয়ন ডলার মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হবে এবং এ মুনাফা থেকে লভ্যাংশ বাবদ আগামী ১০ বছরে ২৯ দশমিক ৯০ মিলিয়ন ডলার দেশে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে বিনিয়োগকারী কর্তৃক প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। তবে বিনিয়োগকারী কর্তৃক আগামী বছরগুলোতে যে পরিমাণ করোত্তর মুনাফা অর্জনের প্রাক্কলন করা হয়েছে তার সম্পূর্ণ অংশ লভ্যাংশ আকারে দেশে প্রত্যাবাসন করা হলে আবেদনকৃত ২০ মিলিয়ন ডলার আগামী ৩ বছরে দেশে ফেরত আসবে। বিনিয়োগের গন্তব্যস্থল মালয়েশিয়ার বৈদেশিক মুদ্রা নীতির বিধান অনুসারে উক্ত দেশ থেকে বিনিয়োগ করা অর্থ ও মুনাফা অবাধে প্রত্যাবাসন যোগ্য।
বর্তমানে কোম্পানিটিতে ৪৭২ জন মালয়েশিয়ান কর্মরত এবং আকিজ জুট মিলস লিমিটেড কর্তৃক কোম্পানিটি অধিগ্রহণ করার পর উক্ত কোম্পানিতে মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশীদের নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে পিইসি কমিটি মনে করে যে, রাতারাতি বিদ্যমান মানবসম্পদ পরিবর্তন করা সম্ভব হবে না বিধায় আপাততঃ অধিগ্রহনতব্য প্রতিষ্ঠানে প্রবাসী বাংলাদেশীদের কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা কম।
কমিটি মনে করে, আকিজ জুট মিলস তার হিসাব থেকে বিনিয়োগের অর্থ প্রেরণ করবে বিধায় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও উপর প্রভাব পড়বে না। কারণ, গ্রাহকের বৈদেশিক মুদ্রা হিসাবের স্থিতি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে অন্তভর্’ক্ত থাকে না। এ ছাড়া ওই কোম্পানির বিদ্যমান মুনাফার ধারা অব্যাহত থাকলে অথবা উন্নতি হলে এবং মুনাফা নিয়মিতভাবে লভ্যাংশ আকারে দেশে প্রত্যাবাসন করলে তা ভবিষ্যতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তবে কমিটি দর কষাকষির মাধ্যমে বিনিয়োগের মূল্য কমিয়ে আনার সুপারিশ করেছে। একই সঙ্গে কমিটি মন্তব্য করেছে, অধিগ্রহণতব্য কোম্পানিটি বর্তমানে লাভজনক হলেও অধিগ্রহণের পর ব্যবস্থাপনা পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশী উদ্যোক্তা কর্তৃক বিদেশের পরিবেশে সফলভাবে পরিচালনা করতে পারার বিষয়টি অনিশ্চিত।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সম্প্রতি পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এ সংক্রান্ত একটি চিঠি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়টি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। তার নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন