বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে ২০২৭ সালের পর ভয়াবহ বৈদেশিক মুদ্রা সংকট হবে : টুকু

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে ২০২৭ সালের পর থেকে দেশে ভয়াবহ বৈদেশিক মুদ্রা সংকট তৈরি হবে।

বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

এ সময় শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সম্পাদিত সব চুক্তি জনসমক্ষে প্রকাশের দাবিও জানান তিনি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই নেতা বলেন, বিদ্যুৎ খাতে ম্যাজিক করতে গিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে সর্বস্বান্ত করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ২০২৭ সালের পর থেকে এ দেশে ভয়াবহ একটা ফরেন এক্সচেঞ্জ ক্রাইসিস (বৈদেশিক মুদ্রা সংকট) হবে। তার মূল কারণ হলো বিদ্যুৎ। এখানে আপনারা প্রত্যেকে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেন। সবাই ভুক্তভোগী। আসলে তারা এটাকে (বিদ্যুৎ) একটা ব্যবসার খাত বানিয়েছিল। তারা বুঝতে পেরেছিল যে, এই খাত থেকে কোনো হিসাব না দিয়েই কুইক মানি বানানো যায়।

ক্যাপাসিটি চার্জ নিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, এই ক্যাপাসিটি চার্জে কোন মেশিনে কত ক্যাপাসিটি, কে এটাকে আইডেন্টিফাই করেছে এবং সেই মেশিনগুলোর এফিসিয়েন্সি কী… এগুলো কেউ বিশ্লেষণ করেও না, দেখেও না। এই ক্যাপাসিটির নামে তারা ১৫ বছরে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা নিয়ে চলে গেছে।

ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আমি অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি করব যে, বিদ্যুৎখাতের প্রত্যেকটা চুক্তি… তারা তো কোনো পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুল মানে নাই… তারা আইন করে নিয়মনীতি বন্ধ করে দিয়ে ইচ্ছামতো ক্লোজ টেন্ডারে এসব চুক্তি করেছে। জনগণের অধিকার আছে এসব বিষয় জানার।”

গত সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের চুক্তিগুলো প্রকাশের ব্যাপারে এই রাজনীতিবিদ বলেন, উই মাস্ট সি দ্যা কন্ট্রাক্ট। তারা কীভাবে কন্ট্রাক্টগুলো করেছে এটা পাবলিক হওয়া উচিত। অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রথম কাজ হলো জনগণের কাছে এই কন্ট্রাক্টগুলো উন্মুক্ত করে দেওয়া।

বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতির পরিসংখ্যান তুলে ধরে টুকু বলেন, বিদ্যুৎ খাতে ১৫ বছরে মোট খরচ হয়েছে ২ হাজার ৮৩০ কোটি মার্কিন ডলার। বর্তমান বিনিময় হারে তা দাঁড়ায় ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। ক্যাপাসিটি চার্জে লুটপাট হয়েছে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা।

ক্যাপাসিটি চার্জ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশিরভাগেরই যন্ত্রাংশ খারাপ বলে দাবি সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর।

তিনি বলেন, ক্যাপাসিটি চার্জের শীর্ষ পাঁচ কোম্পানির কথা আমি বলছি। এদের মধ্যে সামিট নিয়েছে ১০ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা, অ্যাগ্রো ইন্টারন্যাশনাল নিয়েছে ৭ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা, আল্ট্রা পাওয়ার হোল্ডিংস নিয়েছে ৭ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা, ইউনাইটেড গ্রুপ নিয়েছে ৬ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা, আরপিসিএল নিয়েছে ৫ হাজার ১১৭ কোটি টাকা।

এই রাজনীতিবিদ জানান, দুই বছর মেয়াদি আপদকালীন কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো ১৫ বছর ধরে চালানো হয়েছে। এমনকি এসব প্ল্যান্টে কোনো রকমের লাভ ছাড়াই বিগত সরকার ৭৫ শতাংশ অর্থ বিনিয়োগ করেছে বলেও দাবি করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির নামে ৯ বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হয়েছে ১১ হাজার ১৫ কোটি টাকা।

এসময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমি যেটা বলতে চাচ্ছি, আমরা পুরো বিষয়গুলো রিভিউ করব। এগুলো করে যেটা প্রয়োজনীয় সেটা আমরা করব।

টুকু বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে রিভিউ মানে বাতিল না। আমরা দেখব যে, কোন কোন জায়গায় দুর্বলতা ছিল।

সংবাদ সম্মেলনে রুপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের বিষয়েও কথা বলেন বিএনপির এই নেতা। তিনি দাবি করেন, এই প্রকল্প থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার নিয়ে গেছে সাবেক সরকারের দায়িত্বে থাকা কর্তাব্যক্তিরা। এমনকি প্রিপেইড মিটার নিয়েও দুর্নীতি হয়েছে বলে জানান তিনি।

টুকু বলেন, এটা তাদের একটা সিন্ডিকেট। ১ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা তারা অতিরিক্ত খরচ করেছে। এর মধ্যে দুর্নীতি করেছে ৬১৭ কোটি টাকার। মিটার সরবরাহ ও স্থাপন, বাস্তবায়নে বাজেট ছিল ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সেটা তারা ১২ হাজার কোটি টাকা করেছে। এই নেটওয়ার্কটা হচ্ছে কিছু ব্যক্তির নেটওয়ার্ক। যেখানে পতিত সরকারের প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় স্বজনরা আছে।

এলএনজি প্রকল্পের নামে সাবেক বিদ্যু প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর কোম্পানিসহ ‘একটি চক্র’ কোটি কোটি টাকা লুটপাট করেছে বলে অভিযোগ করেন ইকবাল হাসান মাহমুদ টুক।

বিদ্যুত খাতে দুর্নীতি ও অনিয়ম প্রতিরোধে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, প্রকল্পের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়ানো, দুর্নীতি রোধে কঠোর আইন প্রণয়ন, বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং নিয়মিত বিদ্যুৎ পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া করা জরুরি বলে মনে করেন সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।