বিশ্ববাজারে কমলেও দেশে বেড়েছে চিনির দাম
রাজধানীর শুক্রাবাদ থেকে কারওয়ান বাজারে এসেছেন আবু নাসের চৌধুরী। মাসিক বাজার করবেন। চিনি কিনতে গিয়ে জানতে পারেন এই নিত্যপণ্যটি কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে অন্তত পাঁচ টাকা। যেখানে তিনি প্রতিমাসে আট কেজি চিনি কিনতেন সেখানে তিনি কিনলেন ছয় কেজি।
রমজানকে সামনে রেখে দেশের বাজারে চিনির দাম আরেক দফা বাড়িয়েছে বিক্রেতারা। গত সপ্তাহে যে চিনি বিক্রি হয়েছিল ৬২ থেকে ৬৫ টাকায় সেই চিনি এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৬৭ থেকে ৭০ টাকায়।
সম্প্রতি বিশ্ববাজারে কমেছে চিনির দাম। বিশ্ববাজারে কমলেও দেশের বাজারে কেন কমেনি, উল্টো বেড়েছে, এর কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। অজুহাত হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন নানা কারণ।
এ ব্যাপারে বাজারদর নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবির প্রধান কর্মকর্তা শাহাবুদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তিনি জানান, এ ব্যাপারে সংস্থাটির চেয়ারম্যান ছাড়া আর কেউ কথা বলার অধিকার রাখেন না। আর চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এফএওআর পরিসংখ্যানে বলা হয়, গত এপ্রিলে বিশ্ববাজারে খাদ্যসামগ্রীর দাম কমেছে। চিনিসহ অন্যান্য প্রধান খাদ্যসামগ্রীর যথেষ্ট উৎপাদন ও সরবরাহ থাকায় বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। প্রতিবেদন সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে চিনি। পণ্যটির দাম বিশ্ববাজারে নয় দশমিক এক শতাংশ কমেছে।
এই ব্যাপারে কারওয়ান বাজারের খুচরা চিনি বিক্রেতা আবদুর রহমান বলেন, ‘গত দশ দিনের মইধ্যে বস্তা প্রতি ৩০০ থেইকা ৩৫০ টেকা বাড়সে। অহন প্রতিকেজি বেচা হইতাসে ৬৫ টেকা কইরা। আগের বৎসরও এমন দাম ছিল না। অহন একটু বেশি বাড়ছে।’
এই বাজারের চিনির পাইকারি বিক্রেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘মিলগেটে চিনির কোনো সংকট নেই। মিল মালিকরা বছরের এই সময় প্রতিবারই দাম বাড়িয়ে দেয়। এরা মাল না ছাড়লে আমরা সেখানে দাম বাড়িয়ে দিতে বাধ্য হই। সরকারের পক্ষ থেকে সঠিক নজরদারি করলে দাম অনেকটাই কমে আসবে।’
অপরদিকে কাঁঠালবাগান বাজারে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০ টাকায়। এই ব্যাপারে কাঁঠালবাগান বাজারের চিনি বিক্রেতা শাহাবুদ্দিন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এইহানে শুধু খোলা চিনির দাম বাড়সে। প্যাকেট চিনি আগের মতোই আছে। বছরে এই সময়টাত একটু দাম বাড়বোই। আর সামনে রমজান আইয়া পড়সে, দাম আরেকটু বাড়নের সম্ভাবনা আছে।’
শাহাবুদ্দিন আরও বলেন, ‘যে বস্তা আগে তিন হাজার কইরা কিইন্না আনতাম হেইডা অহন তিন হাজার ৩৫০ টাকা কইরা কিইন্না আনতাসি। হেরা দাম বাড়াইলে তো আমগোর কিসু করনের থাহে না।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রায় ১৭ লাখ টন চিনি আমদানি করা হয়। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জুলাই থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চিনি আমদানি করা হয় ১৩ লাখ টন। গত বছর এই সময় আমদানি করা হয়েছিল প্রায় ১১ লাখ টন।
কারওয়ারবাজারে চিনি কিনতে এসেছেন সাইফুল ইসলাম। পেশায় তিনি চিকিৎসক। তিনি বলেন, ‘এটা ব্যবসায়ীদের একটা কারসাজি। প্রতিটা বছর দেখে আসছি রমজান এলেই তারা দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। সরকার যদি এই সময় বাজারগুলোতে একটু নজরদারি করত, তাহলে দাম একটু হলেও কমত। দেখে মনে হচ্ছে এখানে কোনো নজরদারি করা হচ্ছে না।’
রাজধানীর হাতিরপুল বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেখানে প্রতি কেজি সাধারণ চিনি বিক্রি হচ্ছে ৬৮ টাকায়। ভালোমানের খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ৭২ টাকায়।
দাম বাড়ার ব্যাপারে চিনি বিক্রেতা আরিফুজ্জামান বলেন, ‘আমগো এইহানে অন্য বাজার থেইকা একটু দাম বেশি থাহে। এইটা আমগো ঐতিহ্য। আর রমজানের আগে চিনির দাম একটু বাড়বোই।’
ক্রেতাদের দাবি, বছরের বিভিন্ন সময় নানা অজুহাতে চিনির দাম বাড়ায় ব্যবসায়ীরা। আসন্ন রমজানকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর দাম বাড়াতে কৌশল অবলম্বন করে তারা। এভাবে দাম বাড়ানোকে অসাধু ব্যবসায়ীর কাজ বলে মনে করছেন ক্রেতারা।
এই ব্যাপারে রাজধানীর মৌলভীবাজারের পাইকারী চিনি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান প্রীতি এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শাহরিয়ার কবীর বলেন, ‘দেশের চিনি কলগুলোতে আমরা চাহিদা মতো আখ পাইনি। এর ফলে অন্যান্যবারের তুলনায় এবার চিনির দাম বেড়েছে।’
এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘আর বিশ্ববাজারে চিনির দাম কমলেও আমদানি খরচসহ অন্যান্য খরচ অনেক বেড়েছে। যাতায়াত ভাড়া গতবারের তুলনায় একটু বেশি বাড়তি। এর কারণে বাজারে চিনির দাম বাড়ছে। এই খরচগুলোর কারণে আমরা চাহিদামত চিনি আমদানি করতে পারছি না।’ তিনি বলেন, ‘অন্যদিক দিয়ে দেশের কলগুলোতে আখ সংকট। আমরা আর কী করবো বলেন?’-ঢাকাটাইমস
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন