বিশ্বব্যাংক বলেছে পদ্মাসেতু ষড়যন্ত্রে ড. ইউনূস : জয়
বহুল আলোচিত পদ্মা সেতু প্রকল্প ঠেকানোর ষড়যন্ত্রে নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূস জড়িত বলে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা এবং তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। বিশ্বব্যাংকের উচ্চ পর্যায় থেকে এ কথা জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি। জয় বলেন, ‘ড. ইউনূস ফোন করে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনকে বলেছিলেন বাংলাদেশকে একটা কিছু কর, তারা আমার কথা শুনছে না।’
সোমবার বিকালে রাজধানীতে একটি সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। ‘রাজনীতির সত্য-মিথ্যা ও পদ্মা সেতুর অভিজ্ঞতা’ শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করে সুচিন্তা ফাউন্ডেশন।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের ষড়যন্ত্রের নানা দিক উল্লেখ করে জয় বলেন, ‘অনেক কিছু আপনারা জানেন, আবার কিছু কথা জানেন না। যেগুলো জানেন না সেগুলো আমি বলতে চাই।’
জয় বলেন, ‘আপনারা জানেন ষড়যন্ত্র কোথায় থেকে শুরু হয়। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর নরওয়ের একটি টেলিভিশন চ্যানেল আবিষ্কার করে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে টাকা পাচার হয়েছে। সেই ব্যাংকের বেশির ভাগ টাকা নরওয়ের।’ তিনি বলেন, ‘আমরা তখন তদন্ত করে দেখি ১০০ মিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। তবে নরওয়ের সরকার তখন চিঠি দিয়ে জানায় টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে। তারা কিন্তু বলেনি টাকা পাচার হয়নি।’
সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘১০০ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে মাত্র ৩০ মিলিয়ন ডলার ফেরত আসে। এটা সরাসরি চুরি। অবশ্য পরে খবরে বেরিয়েছে গ্রামীণ ব্যাংকের তৎকালীন এমডি (ইউনূস) নরওয়ে সরকারকে চিঠি দিয়েছেন, তোমরা একটা কিছু করো। আমাকে বাঁচাও। নরওয়ের সরকার এজন্য চিঠি দিয়ে বলেছে টাকা ফেরত পাঠানো হয়েছে।’
বিদেশিদের কথা আমরা বিশ্বাস করি, নিজেদের কথা আমরা বিশ্বাস করি না-এ প্রসঙ্গে জয় বলেন, ‘আরেকটি গল্প আপনাদের বলি। বিশ্বের একটি বড় কোম্পানির চেয়ারম্যান। ইউরোপীয় কোম্পানি। তার বাড়ি আমেরিকায়। তার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি আমাকে বলেন, তুমি জানো, ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে দুর্নীতির দেশ নরওয়ে। এ কথাও তিনি বলেন, বাংলাদেশে আমরা এত বছর আছি এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের কেউ এক পয়সাও আমাদের কাছে চায়নি।’
প্রধানমন্ত্রীর পুত্র বলেন, ‘আবার আসি পদ্মা সেতুতে। এখানে যখন প্রথম আমাদের সরকারের কাছে দুর্নীতির অভিযোগ করা হলো তখন বাস্তবতা কী? তখন কিন্তু প্রজেক্ট বাস্তবায়ন হয়নি। বিশ্বব্যাংক কিন্তু একটি পয়সাও বিতরণ করেনি। যেখানে কোনো টাকা খরচ হয়নি সেখানে দুর্নীতি কীভাবে করল। তখন বিশ্বব্যাংক বলা শুরু করলো দুর্নীতি হয়নি দুর্নীতির ষড়যন্ত্র হয়েছে।’
জয় বলেন, ‘তখন আমরা তাদের (বিশ্বব্যাংকের) কাছে তথ্য চাইলাম। তারা একটি ডায়েরির পৃষ্ঠা দিল। কোথায় থেকে এই ডায়েরি এলো তারা জানালো না। ডায়েরি তো আমিও লিখতে পারি।’
সেই সময়ের ঘটনাপ্রবাহ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে বিশ্বব্যাংক প্রতিনিধির অনেক আলোচনা হয়েছে। দুদক তথ্যপ্রমাণ চেয়েছে। তারা বলেছে মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ও উপদেষ্টা মশিউর রহমানকে আজই গ্রেপ্তার করতে হবে। দুদকের চেয়ারম্যান বলেছেন, এই তথ্য দিয়ে তো আমি একজন মন্ত্রী ও উপদেষ্টাকে গ্রেপ্তার করতে পারি না।’
নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসের সমালোচনা করে জয় বলেন, ‘ইউনূস আজ পর্যন্ত দেশ সম্পর্কে একটি ভালো কথা বলেছে? একটি কথাও বলতে পারেনি। সুশীল সমাজকে কোনোদিন বাংলাদেশের প্রশংসা করতে দেখেছেন? নিজের দেশকে তাদের টেনে নামাতে হবে। দেশপ্রেম তো দূরের কথা, বিশ্বের সামনে বাংলাদেশকে টেনে নামাতেই তারা ব্যস্ত।’
জয় বলেন, ‘আমরা যে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করছি এটা কিন্তু আন্দাজে না। আমরা হিসাব-নিকাশ করেই তা বাস্তবায়ন করছি। আওয়ামী লীগের একটি গুণ আছে, আমাদের মেধা আছে। আমরা হিসাব করেই কাজটি করেছি। আমরা হিসাব করে দেখেছি এর দ্বারা আমাদের অর্থনীতিতে কোনো প্রভাব পড়বে না।’
জয় বলেন, ‘ইউনূস ভাবেন একশ মিলিয়ন ডলার কামিয়েছি, এখন ক্ষমতা দরকার। কিন্তু মানুষের ভালোবাসা ছাড়া ক্ষমতায় আসা যায় না সেটা তার জানা দরকার।’
পদ্মা সেতু ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করে জয় বলেন, ‘আমাকে ব্যক্তিগতভাবেও আমেরিকান অ্যাম্বেসি থেকে হুমকি দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, তোমার ট্যাক্সে ঘাপলা থাকতে পারে। দেখেন সৎ থাকলে একটা সুবিধা থাকে ভয়ের কিছু নেই। আমি হাসি দিয়ে বলেছিলাম যা পার কর, কিছু পাবে না।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন