বিয়ের জন্য অপহরণ করাই যেখানে প্রথা…
গত বছর ১৫ বছরের ফাতামাতাকে যখন অপহরণ করা হয়, তখন প্রথমে নিজের প্রাণ নিয়ে বেশ শঙ্কিত ছিল সে। কিন্তু যখন সে বুঝতে পারে যে তাকে অপহরণ করা হয়েছে বিয়ে করার জন্য, তখন নিজের ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে ফাতামাতা।
আয়তনে দেশটি মাঝারি হলেও জনসংখ্যায় খুব বড় নয়। মাত্র ১ কোটি ৪৫ লাখ মানুষের দেশ পশ্চিম আফ্রিকার মালি। কনেকে অপহরণ করে বিয়ে করাটা সেখানকার অনেক পুরোনো দিনের প্রথা। বেশির ভাগ সময়ই প্রতিপক্ষের প্রতিহিংসার শিকার হতে হয় কন্যাশিশুদের। শোধ নিতেই এক পরিবার আরেক পরিবারের মেয়েকে অপহরণ করে বিয়ে করে। ফাতামাতার যেমন তার ভাইয়ের কাজের মূল্য চুকাতে হয়েছিল। যে ব্যক্তি অপহরণ করেছিল, তার বোনকে এর আগে অপহরণ করেছিল ফাতামাতার ভাই।
মাহৌ গ্রামে নিজের স্কুলে থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে ফাতামাতা বলছিল নিজের অভিজ্ঞতার কথা। সে বলে, ‘আমি তখন খুব আতঙ্কে থাকতাম, সারা দিন কান্নাকাটি করতাম। আমি ওই লোকটাকে একেবারেই পছন্দ করতাম না। আর তাকে জোর করে বিয়ে করার বিষয়টি স্রেফ ঘৃণার ব্যাপার ছিল আমার কাছে।’
জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বের মধ্যে যেসব দেশে বাল্যবিবাহের হার বেশি, সেগুলোর মধ্যে মালি অন্যতম। এই দেশটির প্রতি সাতজন শিশুর একজনের বিয়ে হয় ১৫ বছর বয়সের মধ্যে। মালিসহ গোটা পশ্চিম আফ্রিকাজুড়ে বাল্যবিবাহের হার অনেক বেশি।
আর দক্ষিণ মালিতে সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে, অপহরণের পর বিয়ের প্রথা। স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তা ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কর্মীরা বলছেন, এসব কন্যাশিশুকে জোর করে বিয়ের পর গৃহস্থালি কাজ করতে বাধ্য করা হয়। তাদের নিজেদের পরিবারে যেতে দেওয়া হয় না। খুব কম মেয়েদেরই ছেড়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, ওই সব লোক মূলত কন্যাশিশুদের অপহরণ করে, যাদের যৌতুক দেওয়ার সামর্থ্য নেই। এ ছাড়া যেসব পুরুষের বিয়ে করতে সাধারণত কোনো নারী রাজি হয় না, তারাও অপহরণকেই বেছে নেয়। আর এসব অপহরণের কোনো হিসাবও রাখা হয় না। মাহৌ স্কুলের প্রধান শিক্ষক সনৌ ডায়ারা বলেন, ‘অহরহই এক গ্রামের পুরুষেরা আরেক গ্রামের মেয়েকে অপহরণ করছে। এর সঠিক কোনো সংখ্যা অনুমান করাও সম্ভব নয়। কারণ, একে অপরাধ হিসেবে নয়, সামাজিক প্রথা হিসেবে দেখা হয়।’
এখন ওই অঞ্চলের স্কুলগুলোতে মেয়ে শিক্ষার্থীদের বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে জানানো হচ্ছে। এ ছাড়া যৌন স্বাস্থ্য ও কিশোর বয়সে গর্ভধারণের ঝুঁকির ব্যাপারেও জানানো হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
ফাতামাতার পরিণতি কী হয়েছিল জানেন? শেষ পর্যন্ত তাকে আর অমতে বিয়ে করতে হয়নি। এক মাস অপহরণকারীর কাছে আটক থাকার পর স্থানীয় অধিবাসী ও স্কুল কর্তৃপক্ষের অক্লান্ত চেষ্টায় মুক্তি পায় সে। এখন বাল্যবিবাহ ঠেকানোর প্রচারণায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছে ফাতামাতাও। সে বলছিল, ‘আমি আবার স্কুলে ফিরতে পেরে খুব খুশি। আমি আমার ভবিষ্যৎ ফিরে পেয়েছি। হয়তো একদিন নিজের পছন্দে বিয়েও করতে পারব।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন