বীরশ্রেষ্ট মতিউর রহমানের শুভ জন্মদিন
বীরশ্রেষ্ট মতিউর রহমানের শুভ জন্মদিন ২৯ শে অক্টোবর।”এক টুকরো সবুজ জমি,মধ্যখানে লাল,বুকের ভিতর খোদাই করে রাখিস চিরকাল! “বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান পাকিস্তানে একটি কবরের উপর লেখা ছিলো,ইধার সো রাহা হে এক গাদ্দার!
(মানে এখানে শুয়ে আছে এক বেঈমান)!
পাকিস্তানের ভাষ্যমতে সেই গাদ্দারটি কে জানেন ? পড়ুন, এবং জানুন– ১৯৪১ সালের ২৯ অক্টোবর পুরান ঢাকার ১০৯, আগা সাদেক রোডের “মোবারক লজ”- এ জন্মগ্রহণ করা এক বীর সন্তান – আমাদের সাত (০৭) বীরশ্রেষ্ঠ’র একজন, বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান !
মতিউর রহমান ১৯৬১ সালে পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৬৩ সালে রিসালপুর পি,এ,এফ কলেজ থেকে পাইলট অফিসার হিসেবে কমিশন লাভ করেন !
এরপর, বৈমানিক কনভার্সন কোর্স এ ভালো ফলাফলের ভিত্তিতে তাকে পেশোয়ারে (১৯ নং স্কোয়ার্ডন) এ পোস্টিং দেয়া হয় !
বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান তখন ৩০শে পা দিয়েছেন, ১৯৭১ এর জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে ছুটি কাটাতে ঢাকায় আসেন পাকিস্তান বিমানবাহিনীর ফ্লাইট ল্যাফট্যান্ট!
১-মার্চ কর্মস্থল পশ্চিম পাকিস্তানে ফিরে যাবার কথা থাকলেও তিনি যাননি বরং স্বাধীনতার সাথে যুক্ত হয়ে যান!
৪-এপ্রিল পাকিস্তান বিমানবাহিনী নরসিংদীতে বোমাবর্ষন করে; মতিউর রহমানের মাথায় আসে বিমান ছিনতাই করে তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ব্যবহার করার যায় কি না!
সে লক্ষ্যেই ৯ মে পশ্চিম পাকিস্তান ফিরে গিয়ে কাজে যোগদান করেন ফ্লাইং সেফটি অফিসার হিসেবে ; উদ্দেশ্য একটাই বিমান ছিনতাই – অনেকবার পরিকল্পনা করেন, অনেকবার চেষ্টাও করেন কিন্তু সুযোগ মিলছিল না!
পি. আই. এ-এর একটি বিমান হাইজ্যাকের পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর বাঙালি পাইলটদের আকাশে উড্ডয়নের অনুমতিও বাতিল করা হয় ; কিন্তু সুযোগ অবশেষে আসেঃ ২০ আগস্ট, ১৯৭১, শুক্রবার, সকাল ১১.১৫ মিনিট।
পাঞ্জাবী পাইলট রশীদ মিনহাজ উড্ডয়নের প্র্যাকটিস করার জন্য টি-৩৩ বিমান নিয়ে রান দিয়ে এগুচ্ছিল। হঠাৎ বিমানটির সামনে এগিয়ে যান মতিউর রহমান, ইশারা দিয়ে রশীদকে বুঝালেন বিমানের পেছনের দিকে সমস্যা হয়েছে!
সমস্যা দেখবার জন্য রশীদ বিমানের উপরের ঢাকনা (কেনোপি) খুললে, ওকে কিছু বুঝতে না দিয়ে দ্রুত লাফ দিয়ে বিমানের ভেতরে ঢুকে পড়েন মতিউর রহমান।
মুহুর্তকাল দেরী না করে হাতের ক্লোরোফরম দেয়া রুমাল রশীদের নাকে চেপে ধরলেন মতিউর, অজ্ঞান হয়ে যায় রশীদ ; এরপর, অজ্ঞান রশীদকে পেছনের সিটে ঠেলে পাঠিয়ে, বিমানটি দ্রুত ভারত সীমান্তের দিকে যাচ্ছিলেন মতিউর।
রাডারকে ফাকি দেবার জন্য অনেক নিচ দিয়ে বিমান চালাচ্ছিলেন – কিন্তু কিছুক্ষন পর পাকিরা টের পেয়ে চারটি বিমান নিয়ে মতিউরের পিছু নিল কিন্তু ওরা বাগে আনতে পারল না!
ভারত সীমান্ত থেকে আর মাত্র কয়েক মিনিট বাকি ; এসময় রশীদের জ্ঞান ফিরে আসে ; শুরু হয় ধস্তাধস্তি! তবু সর্বশক্তি দিয়ে সবকিছু ঠিক রাখার চেষ্টা করলেন মতিউর।
ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে রশীদ ইজেক্ট সুইচ চাপলে মতিউর বিমান থেকে ছিটকে পড়েন ; কিন্তু প্যারাসুট না থাকাতে তিনি মাটিতে পড়ে শহীদ হন!
মতিউর রহমান বিমান থেকে ছিটকে পরার কিছুক্ষন পরে, নিয়ন্ত্রনহীন বিমানটি রশীদসহ ভারত-সীমান্ত হতে মাত্র ৩৫ মাইল দূরে পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের খাট্টা অঞ্চলের জিন্দাগ্রাম এলাকায় বালির পাহাড়ে আছড়ে পড়ে! রশিদ মিনহাজকে পাকিস্তান সরকার সম্মান সূচক খেতাব দান করে এবং মতিউরকে করাচির মশরুর বিমান ঘাটিতে চতুর্থশ্রেনীর কবরস্থানে সমাহিত করে – লিখে রাখে “ইধার শো রাহা হে গাদ্দার”!
অবশেষে ২০০৬ সালে বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফট্যান্ট মতিউর রহমানের দেহাবশেষ পাকিস্তান হতে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হয় এবং পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ২৫ জুন মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে পুনরায় সমাহিত করা হয়।২৯ অক্টোবর, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের অন্যতম বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের ৮২ তম জন্মবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা জানিয়ে তার রুহের মাগফিরাত কামনা করছে জাতি।এব্যপারে ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক ও গবেষক সুমন প্রতিনিধি কে বলেন বীরশ্রেষ্ট মতিউর রহমানের জন্মদিনে জাতি শ্রদ্ধাভরে স্বরণ করবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন