বৃষ্টির দেখা মিলছে না, ব্যাহত হচ্ছে আমন চাষ, দুশ্চিন্তায় কৃষক

কিশোরগঞ্জর হোসেনপুরে শুকিয়ে গেছে ফসলি জমির পানি। তীব্র রোদ আর ভ্যাপসা গরম, শ্রাবণেও দেখা মিলছে না বৃষ্টি। আমন চাষের ভরা মৌসুমে এমন পরিস্থিতিতে চিন্তায় পড়েছে কৃষকরা। অনেকে বাধ্য হয়ে সেচ দিয়ে জমিতে চারা রোপন করছেন। পেটের দায়ে কাজে বের হলেও মাঠের কাজে কাহিল কৃষি শ্রমিকদরা। এদিকে এখনও চারা রোপণের পর্যাপ্ত সময় রয়েছে জানিয়ে লক্ষ্যমাত্রা পুরোপুরি অর্জনের আশা ব্যক্ত করেছে উপজেলা কৃষি দপ্তর।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, প্রখর রোদে খালবিল ও ফসলি জমির পানি শুকিয়ে গেছে। বৈদ্যুতিক সেচপাম্প ও ডিজেল চালিত শ্যালো মেশিন দিয়ে জমিতে সেচ দিয়ে আমনের চারা রোপণ করছেন অনেকে। কেউ আবার খেতের ফসল বাঁচাতেও জমিতে সেচ দিচ্ছেন। কৃষক বলছেন, অনাবৃষ্টির কারণে জমিতে আমন আবাদ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে চাষাবাদে হচ্ছে বাড়তি খরচ। উপজেলার গোবিন্দপুর এলাকার কৃষক মোঃ রতন মিয়া
জানান, এবারে চার বিঘা জমিতে আমন আবাদ করতে গিয়ে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাকে। খরায় আমন চাষের জমিতে একফোঁটা পানিও নেই। এদিকে বীজতলায় চারার বয়স বেড়ে যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে সেচপাম্প চালু করে জমিতে চারা রোপণ করছেন। চারা রোপণের সময় পেরিয়ে যাচ্ছে তবু দেখা নেই বৃষ্টির। সেচ দিয়ে আবাদে বাড়তি খরচের বোঝা বইতে হচ্ছে বলে জানান এই কৃষক।

একই এলাকার কৃষক আব্দুল কাদের জানান, তিনি আঁট বিঘা জমিতে আমন আবাদের প্রস্তুতি নিয়েছেন। কয়েক দিন আগে পানিতে তার সমস্ত আবাদি জমি ডুবে ছিল। পানি নেমে যাওয়ার পরে দেখা দিয়েছে খরা। এতে তার আমন আবাদ ব্যাহত হচ্ছে। প্রখর রোদে জমিতে হালচাষ করা দুরূহ হয়ে গেছে। উপজেলার সিদলা এলাকার কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি সাড়ে চার বিঘা জমিতে আমন ধানের চারা রোপণ শেষ করেছেন। সাড়ে তিন বিঘা জমিতেই সেচ দিয়ে চারা রোপণ করতে হয়েছে। চারা
রোপণের পর এখন পর্যন্ত দুই দফায় খেতে বৈদ্যুতিক সেচপাম্প ও ডিজেল চালিত শ্যালো মেশিন দিয়ে জমিতে সেচ দিয়ে আমনের চারা রোপণ করছেন। অচিরেই বৃষ্টি না নামলে এবার আমন আবাদে লোকসানের শঙ্কার কথা জানান তিনি। উপজেলার সাহেদল এলাকার কৃষক মজিবুর রহমান জানান, তিনি বারো বিঘা জমিতে আমন আবাদ করতে বীজতলায় চারা প্রস্তুত করেছেন। এদিকে খরায় তার সব আবাদি জমির পানি শুকিয়ে গেছে। পানির অভাবে তিনি এখন পর্যন্ত জমিতে চাষই দিতে পারেননি। দু-এক দিনের মধ্যে বৃষ্টি না হলে জমিতে সেচ দিয়ে চারা রোপণের প্রস্তুতি নিয়েছেন বলে জানান তিনি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাজাহান কবির জানান, উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৮ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। রোদ আর গরম উপেক্ষা করে সেচের মাধ্যমে কৃষকরা জমিতে চারা রোপণ চলমান রেখেছেন। এখন পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চারা রোপণ করা হয়েছে। এখনো চারা রোপণের পর্যাপ্ত সময় রয়েছে উল্লেখ করে তিনি লক্ষ্যমাত্রা পুরোপুরি অর্জনের আশা ব্যক্ত করেন।