বেনজীরের দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদক
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গঠন করা হয়েছে তিন সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি। এ কমিটির মধ্যে রয়েছেন- উপপরিচালক হাফিজুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক নিয়ামুল হাসান গাজী এবং জয়নাল আবেদীন। কমিটির অনুসন্ধান তদারকের জন্য নিয়োগ করা হয়েছে তদারক কর্মকর্তা। অনুসন্ধান শেষে দুদক মামলার প্রক্রিয়া শুরু করবে।
গতকাল বিকাল পৌনে ৪টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে সংস্থাটির সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। এর আগে সকালে বেনজীর আহমেদের দুর্নীতির অনুসন্ধান চেয়ে হাই কোর্টে রিট করা হয়। এতে দুদক চেয়ারম্যান, সচিবসহ চারজনকে বিবাদী করা হয়েছে। হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সালাউদ্দিন রিগ্যান এ রিট করেন।
দুদক সচিব বলেন, একাধিক প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ প্রকাশিত হয়। এ অভিযোগের বিষয়ে দুদক বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছে। ঈদের পর ১৮ এপ্রিল কমিশনের প্রথম সভায় বেনজীরের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানের অনুমোদন দেওয়া হয়। ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার তথ্যাদি বিবেচনায় নিয়ে বিধি অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, অনুসন্ধান করতে তিন সদস্যের একটি টিম গঠন করা হয়েছে। বেনজীরের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান আইওয়াশ কি না জানতে চাইলে সচিব বলেন, এটা সত্য নয়। এর আগেও বেনজীরের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলেছিল, সেটা নথিভুক্ত হয়েছে। সেটাকে পুনরায় শুরু করা যায়নি কেন, জানতে চাইলে সচিব বলেন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।
এ ছাড়া বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকে আবেদন করেন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। গত রবিবার দুদককে দেওয়া ওই আবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ ৩৪ বছর সাত মাস চাকরি করে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর অবসরে যান। অবসর গ্রহণের পর দেখা যায়, বেনজীর আহমেদ তার স্ত্রী ও কন্যাদের নামে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি অর্জন করেছেন, যা তার আয়ের তুলনায় অসম।
এতে বলা হয়, গত ৩১ মার্চ দৈনিক কালের কণ্ঠে ‘বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক মহাপরিদর্শক তার স্ত্রী জিশান মির্জা এবং দুই মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেছেন। বেনজীর আহমেদ তার পদের অপব্যবহার করে আয়ের তুলনায় প্রতিবেদনে উল্লিখিত সম্পত্তি অধিগ্রহণ করেছেন বলে বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে- চিঠিতে জানান ব্যারিস্টার সুমন। এমন পরিস্থিতিতে বেনজীর আহমেদ, স্ত্রী, বড় মেয়ে ও ছোট মেয়ের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ সংগ্রহের জন্য তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নিতে দুদককে অনুরোধ করেন তিনি।
ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেনজীরের অঢেল সম্পদের মধ্যে গোপালগঞ্জের সাহাপুর ইউনিয়নে সাভানা ইকো রিসোর্ট নামে এক অভিজাত ও দৃষ্টিনন্দন পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। এ ছাড়াও তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ছয়টি কোম্পানির খোঁজ পাওয়া গেছে। পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে তার বিনিয়োগের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকার বেশি হতে পারে। ঢাকার অভিজাত এলাকাগুলোতে বেনজীর আহমেদের দামি ফ্ল্যাট, বাড়ি আর ঢাকার পাশে বিঘার পর বিঘা জমি রয়েছে। দুই মেয়ের নামে বেস্ট হোল্ডিংস ও পাঁচতারকা হোটেল লো মেরিডিয়ানের রয়েছে ২ লাখ শেয়ার। পূর্বাচলে রয়েছে ৪০ কাঠার সুবিশাল জায়গাজুড়ে ডুপ্লেক্স বাড়ি, যার আনুমানিক মূল্য কমপক্ষে ৪৫ কোটি টাকা। একই এলাকায় আছে ২২ কোটি টাকা মূল্যের আরও ১০ বিঘা জমি।
অথচ গত ৩৪ বছর সাত মাসের চাকরিজীবনে বেনজীর আহমেদের বেতন-ভাতা বাবদ মোট আয় ১ কোটি ৮৪ লাখ ৮৯ হাজার ২০০ টাকার মতো হওয়ার কথা।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন