বেরোবি উপাচার্য বিদায়ের মুহুর্তে ইউজিসি’র প্রতিবেদন পেশ
বেরোবি প্রতিনিধি: রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ^বিদ্যালয়ের (বেরোবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে এম নূর-উন-নবীর দুর্নীতি, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও সেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারিদের প্রদানকৃত অভিযোগপত্রাদির প্রেক্ষিতে তদন্তকৃত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) তিন সদস্যের একটি তদন্ত দল। কমিটি সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্মভাবে উপাচার্যের সকল অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্ত করে তাঁর বিদায়ের পূর্ব মুহুর্তে ( গত ২৫ এপ্রিল) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
এ দিকে তাঁর বিদায়ে ( ৫ মে) সাত মে থেকে ১৪ মে পর্যন্ত বিশ্বদ্যিালয় গ্রীষ্মকালীন ছুটি প্রদান করা হয়েছে। তবে যাওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে উপাচার্য তাঁর বাসভবন থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ইতোমধ্যে ঢাকার বাসভবনে নিয়ে গেছেন বলেও জানা গেছে।
অনিয়ম-স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে প্রদানকৃত প্রতিবেদনে অভিযোগসমূহকে আর্থিক, প্রশাসনিক ও একাডেমিক-এই তিনভাগে ভাগ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ইউজিসি। প্রতিবেদনে মোট ১৬ টি অভিযোগকে সামনে করে তদন্তের পর সবগুলো অনিয়মের সত্যতা খুঁজে পায় ইউজিসির তদন্ত কমিটি। এর মধ্যে উপাচার্যের ধারাবাহিক অনুপস্থিতি ( ইউজিসি’র তদন্তে দুই বছরে মাত্র ১৬৫ দিন ক্যাম্পাসে ছিলেন উপাচার্য), একাই ১৪ পদে আসীন,পুলিশের অজ্ঞাতনামা মামলায় (৩/৩/২০১৫) শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারিকে হয়রানি, বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমকে বাতিল আবেদনে নিয়োগ, উপাচার্যের ৩৪ মাসে স্থায়ী রেজিস্ট্রার নিয়োগ না দিয়ে ৫ জনের দায়িত্ব পালন, ৩৩৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারিদের জ্যেষ্ঠতা লংঘন করে নিজের খেয়াল খুশিমত পদায়ন ও বেতন-ভাতা প্রদান, ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি জালিয়াতিদের না ধরে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার প্রচেষ্টা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৮ বছরেও বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার সংবিধি ও প্রবিধি প্রণীত না হওয়ার ব্যাপারে উপাচার্যের উদ্যোগ গ্রহণ না করা।
এছাড়াও উপাচার্যের আপ্যায়ন ভাতা বাবদ নয় লাখ ৭৪ হাজার ৪৯৫ টাকা ব্যয়, ট্রেজারার পদে নিজে থেকে দুই লাখ ১৯ হাজার ৩৩ টাকা আপ্যায়ন বাবদ ব্যয়, তিনটি গাড়ি ব্যবহার করে বিলাস জীবন যাপন, তাঁর তিন বছরে বিভিন্ন কৌশলে ভর্তি পরীক্ষায় দায়িত্ব থেকে বিপুল অংকের (প্রায় ১৭ লাখ) অর্থ সম্মানী বাবদ গ্রহণের অংকও তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনটিতে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, উপাচার্য (ড. একে এম নূর-উন-নবী) মহোদয়ের ঘন ঘন অনুপস্থিতির কারণে প্রশাসনিক,আর্থিক ও একাডেমিক কর্মকান্ডে শালথ গতি সৃষ্টি হয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে অসন্তোষ বিরাজ করছে। প্রতিবেদনের অভিযোগে, ২০১৩-২০১৬ সাল পর্যন্ত ৪৯৫ দিন অনুপস্থিতির অভিযোগ করা হয়।
উল্লেখ্য যে, গত ২৫ এপ্রিল শিক্ষকদের সংগঠন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে। সংবাদ সম্মেলনে গত চার বছরে উপাচার্যের বিরুদ্ধে প্রায় ২০ টি অনিয়ম উল্লেখ করে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সদস্য সচিব মোহাম্মদ রফিউল আজম খান।
এমনকি সম্প্রতি শিক্ষক-কর্মকর্তাদের নতুন নিয়োগে নিয়ম লঙ্ঘন করে বিজ্ঞপ্তি প্রদান করেন উপাচার্য। পরে হাইকোর্ট এটা স্থগিত করলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের নাম ভাঙিয়ে হাইকোর্টের নির্দেশকে উপেক্ষা করে পুনরায় বিজ্ঞপ্তি প্রদান করা হয়। নয়টি বিভাগের প্লানিং কমিটিতেও রয়েছেন উপাচার্য। এমনকি তাঁর প্রতিশ্রুত ক্যাফেটেরিয়া ও ডরমেটরীও আন্তরিকতার অভাবে অবহেলায় পড়ে আছে দুটি কমিটি হওয়ার পরও।
এ বিষয়গুলো নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন অসন্তোষ বিরাজ করছে। উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৫ মে। নতুন উপাচার্য হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসর যোগদান করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন