বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ফুসফুসে প্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাবঃ বাংলাদেশী গবেষকের সাফল্য
“মাইক্রোপ্লাস্টিক” শব্দটির সাথে আমরা সবাই কমবেশি পরিচিত। মাইক্রোপ্লাস্টিক হচ্ছে এক ধরণের ক্ষুদ্রপ্লাস্টিকের কণা, যা জল, বাতাস, মাটি, এমন কি বায়ুমন্ডলসহ সর্বত্র পাওয়া যায়। একজন ব্যক্তি তার অজান্তে লক্ষ লক্ষ মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা প্রতিদিন গ্রহণ করতে পারে।
মাইক্রোপ্লাস্টিক গুলি সাধারণত ছোট প্লাস্টিকের টুকরা যার দৈর্ঘ্যে ৫মাইক্রোমিটার থেকে কম কিন্তু ১ মাইক্রোমিটার থেকে বড় হয়। বিজ্ঞানীরা আরও নির্ধারণ করেছেন যে প্লাস্টিককণার আকার ২৫ মাইক্রোমিটার, ৫ থেকে ২৫ মাইক্রোমিটার, ১ থেকে ৫ মাইক্রোমিটার, এবং ১ ন্যানোমিটার থেকে ১মাইক্রোমিটার পর্যন্ত হতে পাওে যেগু লোয থাক্রমেম্যাক্রোপ্লাস্টিক, মেসোপ্লাস্টিক, মাইক্রোপ্লাস্টিক এবং ন্যানোপ্লাস্টিক হিসাবে পরিচিত।
প্রথম বারের মতো মানুষের সম্পূর্ণ শ্বাস নালিতে ১ – ১০০ ন্যানোমিটার সাইজের ন্যানোপ্লাস্টিক এবং ১ – ১০০ মাইক্রোমিটার সাইজের মাইক্রোপ্লাস্টিকের ক্ষুদ্রকণার পরিবহন এবং জমা হওয়ার প্রক্রিয়া বিশ্লেষণে বিশেষ মডেল তৈরি করেছেন ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি সিডনির শিক্ষক ও গবেষক ড. সুভাষ চন্দ্র সাহা ও তাঁর গবেষক দল।
এই গবেষক দলটি দ্রুত ও ধীর শ্বাস-প্রশ্বাসের মধ্যে বিভিন্ন আকার ও আকৃতির নানোপ্লাস্টিক ও মাইক্রোপ্লাস্টিকের গতি বিধি পর্যবেক্ষণ করেছেন। সম্প্রতি, মার্চ ২০২৪ সালে এনভায়রনমেন্টাল এডভান্সস গবেষণা সাময়িকীতে এ-সংক্রান্ত একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকেরা দেখিয়েছেন, মানুষের সম্পূর্ণ শ্বাস নালিতে নানোপ্লাস্টিক ও মাইক্রোপ্লাস্টিক কিভাবে পরিবাহিত ও জমা হওয়ার মাধ্যমে দীর্ঘ মেয়াদে শ্বাসতন্ত্রেও মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে।
প্লাস্টিক কণার বিরূপ প্রভাব নিয়ে প্রতিনিয়ত গবেষণা চলছে কিন্তু এখন পর্যন্ত প্লাস্টিক কণা মানুষের শরীরে কি ধরনের ক্ষতি কওে এই বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। মানুষের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে এবং অন্যান্য প্রাণীর শরীরে প্রতিদিন প্লাস্টিককণার উপস্থিতির খবর প্রকাশিত হচ্ছে। কিন্তু শ্বাসনালীতে প্লাস্টিক কণার প্রবাহ ও তার স্থিতি নিয়ে খুবই কম গবেষণা হয়েছে।
শুধু তাই নয়, আমাদেও পুরো শ্বাসনালিতে বা ফুস ফুসে বায়ু চলাচলের অংশে নানোপ্লাস্টিক বা মাইক্রোপ্লাস্টিক কীভাবে আটকে যায় এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে সেটি নিয়ে এর আগে কোনো গবেষণা হয়নি। এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেয়েছেন এই বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরেগবেষনা করা ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজিসিডনির শিক্ষক ও গবেষক ড. সুভাষ চন্দ্র সাহা।
তার গবেষণা দলের অন্যান্য বিজ্ঞানীরা হলেন শিংলেইহুয়াং এবং ইসাবেলাফ্রান্সিস, উভয়েই ড. সুভাষ সাহার পিএইচডি গবেষক, ড. গৌতম সাহা, যিনি তাঁর অধীনে গবেষক হিসেবে কাজ করছেন, এবং ড. ঝেন লুওযিনিইউটিএস-এর একই বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত আছেন।
ড. সুভাষ চন্দ্র সাহার নেতৃত্বে মানুষের সম্পূর্ণ শ্বাস নালিতে বিভিন্ন ধরণের নানোপ্লাস্টিক ওমাইক্রোপ্লাস্টিক এর পরিবহন এবং জমা হওয়ার ঘটনা বিশ্লেষণ করার জন্য গবেষকদল একটি কম্পিউটারাইজড টমোগ্রাফি-ভিত্তিক সম্পূর্ণ শ্বাস নালির মডেল ব্যবহার করেছেন এবং কম্পিউটেশনাল ফ্লুইডডাইনামিকমডেল এর মাধ্যমে তা পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করেছেন। এইগবেষণাটিন্যানো ও মাইক্রোপ্লাস্টিকের আচরণ এবং শ্বাসনালিতেএ র প্রভাবের মধ্যে একটি যোগ সূত্র খুঁজে পেয়েছে।
এই গবেষণায় নাক থেকে শ্বাস নালীর ১৩ জেনারেশন পর্যন্ত বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন শ্বাস-প্রশ্বাসের অবস্থার মধ্যে বায়ু প্রবাহের ধরণ, গতি-প্রকৃতি এবং প্লাস্টিকের কণার পরিবহন ও জমাহওয়া এই বিষয়গুলি সতর্কতার সাথে পরীক্ষাকরা হয়েছে। গবেষক দল গোলাকার, নলাকার, এবং টেট্রাহেড্রালন্যানো প্লাস্টিক এবং মাইক্রোপ্লাস্টিকগুলির কিভাবে ফুসফুসে পরিবাহিত হয় সেটা প্রকাশ করেছে।
এই কণাগুলিকে বল আমাদেও ফুসফুসে শুধু পরিবাহিতই হয়না, বরং বরং বিভিন্ন “হটস্পট”-এ জমাও হয়, যা সম্ভাব্য ফুসফুসের ব্যাধিগুলিকে বাড়িয়ে তুলতে পারে, যেমন হাঁপানি, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারিডিজিজ এমন কি ফাইব্রোসিস রোগের তীব্রতা বাড়াতে পারে।
এই গবেষণার ফলাফল থেকে জানা যায়, বড় সাইজের মাইক্রোপ্লাস্টিক এর কণাগুলি প্রাথমিক ভাবে উপরের বায়ু পথে বেশি জমা হয়, অন্য দিকে ছোট সাইজের ন্যানোপ্লাস্টিক এর কণাগুলি তাদেও ক্ষুদ্র আকারের কারণে সহজেই ফুস ফুসের গভীর অংশ গুলিতে পৌঁছাতে পারে।
প্লাষ্টিক কণাগুলির এই ভিন্ন আচরণের কারণে ন্যানো-এবং মাইক্রোপ্লাস্টিক কণার এক্সপোজারনিয়ন্ত্রণ এবং জনস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার উপর গুরুত ¡দেয়ার সময় হয়েছে। এছাড়াও, এই গবেষণা থেকে দেখা যায়, অ-গোলাকার প্লাস্টিকগুলি ফুস ফুসের গভীর অংশে অনু প্রবেশের প্রবণতা দেখায়, যা শ্বাস যন্ত্রেও বিভিন্ন রোগের উপর দীর্ঘ মেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে।
তাই, শ্বাস নেওয়ার সময় বায়ুতে মাইক্রোপ্লাস্টিক এবং নানোপ্লাস্টিক উপস্থিতি এবং তা আমাদেও শ্বাসনালিতে প্রবেশ করে যে স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরী করছে সেক্ষেতে প্লাষ্টিক কণার আকার ও গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা পালন করছে যা বিবেচনা করা উচিত।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন