বৌদ্ধ ছাড়া অন্য ধর্মকে পাত্তা দেন না সু চি
গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কারণে এক সময় বিশ্ববরেণ্য এক নেত্রী হয়ে ওঠেন বর্তমানে মিয়ানমার সরকারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি। আশা জাগিয়েছিলেন মানবাধিকার ও মিয়ানমারের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর অধিকার প্রতিষ্ঠায়।
প্রশংসিত প্রবন্ধ-চিঠিপত্র ও নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির মতো অর্জন তাকে নেলসন ম্যান্ডেলা ও দালাইলামার স্তরে নিয়ে এসেছিল। তবে দেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ক্রমেই তিনি সেই আস্থার জায়গাটি হারিয়েছেন।
এর প্রধান কারণ মিয়ানমারে বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, মুসলিম ও হিন্দু প্রভৃতি ধর্মাবলম্বী থাকলেও একমাত্র বৌদ্ধ ছাড়া অন্য ধর্মকে পাত্তা দেন না তিনি।
আর এ কারণেই তাকে ‘অনুগত বৌদ্ধ’ আখ্যা দিয়ে রয়টার্সের এক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘গণবৌদ্ধ আবেগের (পাবলিক সেন্টিমেন্ট) বাইরে যেতে চান না তিনি।’
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সু চির যে জনপ্রিয়তা ছিল সেটা তার বাবা অং সান ও এক দশকের বেশি সময় গৃহবন্দিত্বের কারণেই।
মিয়ানমারের স্বাধীনতার নায়ক এবং আধুনিক সামরিক বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন জেনারেল অং সান। তিনি রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা সু চির বাবা। বহু জাতিগোষ্ঠীর মিয়ানমারে বিপুল জনপ্রিয় ছিলেন অং সান।
প্রতিবেদনে আশির দশকের এক ছাত্রনেতাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, তার বাবার শূন্যস্থানে মিয়ানমারবাসী সু চিকে গ্রহণ করেছিল। এছাড়া গৃহবন্দিত্বও তাকে জনপ্রিয় করে তোলে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৭ সালে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির জন্য সরকারবিরোধী বিক্ষোভ দেখা দেয়। যার নেতৃত্বে ছিল বৌদ্ধ ভিক্ষুরা। সেই বিক্ষোভের নাম দেয়া হয়েছিল ‘গেরুয়া বিপ্লব।’ আন্দোলন দমাতে পুলিশ লেলিয়ে দেয়া হয়।
সু চি বিক্ষোভরত ভিক্ষুদের তার বাড়ির গেটের সামনে স্বাগত জানান। ২০০৩ সালের পর সেটাই ছিল তার প্রথম প্রকাশ্যে হাজির হওয়া। রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমবিরোধী প্রচারণা তুঙ্গে তোলেন বিরাথু নামের এক চরমপন্থী বৌদ্ধ ভিক্ষু। ফলে ধর্মীয় দাঙ্গা রাখাইন ছাড়িয়ে আশপাশেও ছড়িয়ে পড়ে।
২০১৩ সালের মার্চ মাসে বৌদ্ধ চরমপন্থীরা মেইকটিলায় কয়েক ডজন মুসলমানকে হত্যা করে। কাছের শহরগুলোতে দাঙ্গা, হত্যা, অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটতে থাকে। কিন্তু মুসলিমদের বিরুদ্ধে এসব অন্যায়-অবিচারের পরও কোনো প্রতিবাদ করেননি সু চি।
রয়টার্স লিখেছে, সু চি নিজে একজন অনুগত বৌদ্ধ। বৌদ্ধদের দ্বারা এমন সহিংসতার ঘটনা ঘটা সত্ত্বেও তিনি নীরব থাকেন। তার বন্ধু পাস্তারনাকের ভাষ্য, ‘সু চির নৈতিকতার বাছ-বিচারে অত্যন্ত খুঁতখুঁতে।
সাংবাদিকরা চাপ দিয়েছে বলেই তিনি পাবলিক সেন্টিমেন্টের বিরুদ্ধে গিয়ে মুখ খুলবেন, এমনটা ভাবার কোনো সুযোগ ছিল না।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন