ব্যাকডেটেড বেরোবি’র ওয়েবসাইট, হালনাগাদে নেই কার্যকর উদ্যোগ
এইচ. এম নুর আলম, বেরোবি প্রতিনিধি : তথ্য প্রযুক্তির যুগে মানুষ যখন উন্নতির শীর্ষে আরোহণ করছে, নিমিষেই হাতের নাগালে মানুষের যাচিত সবকিছুই তখনও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এর ছোঁয়া লাগেনি। যার একটি বড় প্রমাণ-এখনও ব্যাকডেটেড (সেকেলে) রয়ে গেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির ওয়েবসাইট (িি.িনৎঁৎ.ধপ.নফ)।
বর্তমান সরকারের রূপকল্প ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে যখন সব সেকটরে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে তখনও পিছিয়ে রয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য-প্রযুক্তিগত উন্নয়ন। ওয়েবসাইটে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম এবং প্রয়োজনীয় তথ্য হালনাগাদ না থাকায় ডিজিটাল যুগে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে এখানকার শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারিরা। ওয়েবসাইটের বেহাল দশায় ভুক্তভোগিদের অভিযোগ, বিশ্বপরিমন্ডলে বিশ্ববিদ্যালয়কে তুলে ধরতে ব্যর্থ হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, চলতি মাসের ( ২জুলাই) বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটটির ‘অ্যাবাউট আস’ এর ‘ম্যাসেজ ফরম ভিসি’ অপশনে উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ (বিটিএফও) এর বাণী সংযুক্ত করা হলেও উপাচার্যের ছবি সংযুক্ত করা হয়নি এখনও। বিভাগগুলোর সম্পর্কে সবশেষ হালনাগাদ করা হয়েছিলো ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। অনেক বিভাগে নতুন মুখ যোগদান করলেও তা হালনাগাদ করা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে ‘গুগল’ এ সার্চ দিয়ে তেমন তথ্য জানা যায় না।
এছাড়াও ব্যাচ সংখ্যা, শিক্ষক সংখ্যাসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগটির বিষয়ে বিস্তারিতভাবে হালনাগাদেরও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি এখনও। এখনও ছবি আপলোডেট রয়েছে পুরনো বিভাগীয় প্রধানদের। চলতি মাসের ২ জুলাই ওয়েবসাইটটির ‘অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ অপশনে দায়সারা হালনাগাদ করা হয়েছে। নেই কারো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হলেও এর সবশেষ তথ্য সংযোজন করা হয়েছিলো ২০১৩ সালের ৬ অক্টোবর। ২০১১ সালের ১৯ মার্চ লাইব্রেরির স্থায়ী অবস্থানের কথা উল্লেখ করলেও বর্তমান সময়ের নেই কোনো হালনাগাদ,সংযোজন। নেই কোনো বিস্তারিত তথ্যও। আর ‘হোমপেজ’ অপশনে শেষ হালনাগাদ ছিলো চলতি বছরের ২৭ এপ্রিল। এরপর কোনো হালনাগাদই করা হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে বিশ্ববিদ্যালয়ের দপ্তর, বিভাগ, রিসার্চ ইনস্টিউট, সাইবার সেন্টার, মসজিদ,ক্যাফেটেরিয়া, শিক্ষার্থীদের আবাসিক তিনটি হল, বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নসহ সংশ্লিষ্ট বিষয় সংযোজনে এখনও গ্রহণ করা হয়নি কোনো কার্যকর উদ্যোগ।
দুই/তিন বছরের সেশনজটের যাতাকলে পিষ্ঠ শিক্ষার্থীরা জানান, যদি বিভাগগুলোর সেমিস্টার ফলাফল সিস্টেমেটিকলি ( সংরক্ষিত পদ্ধতিতে) বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া যেতো আমরা কিছুটা ভোগান্তি হতে বাঁচতাম। কারণ, ফলাফলের জন্য আমাদের নিজস্ব বিভাগ এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরে ধর্ণা দিতে হয়। ওয়েবসাইটে ফলাফল দেওয়া হলে যে কোনো সময় আমরা নিতে পারতাম, হয়রানি কমতো। এছাড়াও শিক্ষার্থীরা বলেন, একেকটি বিভাগে ফলাফলের পর ভর্তি ও ফরম ফিল আপে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। এমনকি একই দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটিমাত্র অস্থায়ী ব্যাংক ব্যুথে কয়েকটি বিভাগের ভর্তি ও ফরম ফিল আপ ও জমা প্রদানে দীর্ঘ সময় ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয় যা ভোগান্তি বাড়ায়। দিনে দিনে এ ভোগান্তি বেড়েই চলছে। ফলে একাডেমিক, প্রশাসনিক ও হল সংক্রান্ত ভর্তি ফরম পূরণ ও জমা প্রদান এবং অন্যান্য কাজ ওয়েবসাইটে করা গেলে ভোগান্তি পরিত্রাণ পেত শিক্ষক-শির্ক্ষাীসহ সকলেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগ থেকে স্নাতক পাশ করে বর্তমানে আমেরিকার জ্যাকসন স্টেট ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নরত ইমরান সরকার নামের এক শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে জানান, উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের যারা দেশের বাইরে আছেন তারা ওয়েবসাইট থেকে কোনো আপডেট (হালনাগাদ) তথ্য পাননা।
তিনি বলেন, ‘আমরা যারা বিদেশে শিক্ষার্থী কিংবা শিক্ষক রয়েছি ওযেবসাইটে যথেষ্ট তথ্য না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বপরিমন্ডলে তুলে ধরতে পারছি না। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভেবে দেখা উচিৎ।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি (তথ্য ও প্রযুক্ত) বিভাগের সাইবার সেন্টারের নেটওয়ার্ক অ্যাডমিনিস্ট্রেটর মো. আতিকুর রহমান মিলন বলেন, আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটটি দেখাশোনা করতে কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং(সিএসই) বিভাগের শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের দেখাশোনার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে সিএসই বিভাগের আবুল কালাম আজাদ বলেন, গত উপাচার্যের সময়ে ওয়েবসাইটের বিভিন্ন দিক উন্নয়নে কাজ করার জন্য প্রস্তাবনা দিয়েছিলাম কিন্তু সাবেক উপাচার্য ড. একে এম নূর-উন-নবী’র সময়ের শেষ দিকে আমার কাছ থেকে দায়িত্ব নিয়ে নেওয়া হয় বর্তমানে দায়িত্বে কে আছেন তা জানিনা।
তবে বর্তমান উপাচার্যের সময়ে ওয়েবসাইটির দেখাশোনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে রবিবার সকালে জানিয়েছেন উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ (বিটিএফও) এর একান্ত সচিব মো. আমিনুর রহমান।
এ বিষয়ে সম্প্রতি গঠিত ‘ওয়েবসাইট মেইনটেইনিং কমিটি’র আহ্বায়ক মুহা. শামসুজ্জামান রবিবার দুপুরে জানান, গত বৃহস্পতিবার ওয়েবসাইটেটির দেখাশোনার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ বিষয়ে মিটিং করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন