ব্যাট ছেড়ে ব্যাটন! কেমন হবেন ‘প্রধানমন্ত্রী’ ইমরান খান?

পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ ইমরান খানের জীবন যেন উত্তেজনায় ভরপুর। রাজনৈতিকভাবে চরম গোলযোগপূর্ণ দেশটিতে ধীরে ধীরে নিজের অবস্থান পোক্ত করে তুলেছেন ইমরান খান। পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ দলের চেয়ারম্যান ইমরান।

ইমরানের মাঝে দুই ধরনের ব্যক্তিত্বই দেখা যায়। আগামী ২৫ জুলাই নির্বাচনে যদি ইমরান খান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন তাহলে তার ভক্তদের সামনে সেই দ্বৈত চরিত্র প্রকাশিত হবে। জানা যাবে, তিনি কতটা সাদাসিধা এবং তার লোকজন কতটাই বা ভয়ঙ্কর।

ভোটারদের সামনে উন্মোচিত হবে নতুন পাকিস্তানের চিত্র, যা পুরনো পাকিস্তানেরই যেন মেরামত করা ছবি। পাকিস্তানের মধ্যবিত্ত শ্রেণীই ইমরান খানের মূল শক্তি। তারা আবিষ্কার করবেন, যে ইমরান খানকে ভোট দিলেন এই ইমরান খান তা থেকে ভিন্ন। যেন ইমরান খানের দ্বিতীয় ভার্সন।

পাকিস্তানের অন্য সব রাজনীতিবিদ থেকে ইমরান খান ভিন্ন। তিনি রাজনীতিতে নামার আগে ক্রিকেটার হিসেবে একজন ‘জাতীয় বীর’ ছিলেন।

পাকিস্তানের ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ হয়ে উঠেছেন ইমরান খান। তিনি পাকিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক খেলোয়াড় এবং অধিনায়ক ছিলেন। তিনি বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বকালের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডারদের একজন। তাঁর অধিনায়কত্বে পাকিস্তান ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ জয় করে।

ক্রিকেটের মূলধনকে রাজনীতির মূলধনে রূপান্তর প্রায় অসম্ভব একটি কাজ ছিল। ইমরান খানকে এজন্য দীর্ঘ দুই দশক অন্ধকারের মাঝে কাটাতে হয়েছে। আশার আলো দেখার অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে দীর্ঘ সময়।

রাজনীতিবিদ হিসেবে ইমরান খানের জীবনের প্রথম অধ্যায় শুরু হয় প্রায় ১৯৯২ সালে। সে বছর তিনি ৪০ বছরে পা দেন। তার টিম বিশ্বকাপ ক্রিকেট জয় করে। সে বছরেই তিনি সাউকাত খানুম ক্যান্সার হাসপাতালের জন্য তহবিল সংগ্রহ শুরু করেন, যা দুই বছর পরে বাস্তবায়িত হয়।

৪০ বছর বয়সটি সারা বিশ্বেই গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। কারণ এ বয়সটি জীবনের অন্যতম একটি মাইলফলক। এ বয়সের পরে মধ্যবয়সের সংকটে অনেকেই ভুগতে থাকেন। এ বয়সেই অন্ধকার টানেলের ভেতর থেকে অন্য দিকটি দেখা যায়। জীবনের অর্থটাও বোধগম্য হয় এ বয়সে। অনেকেই আবার এ বয়সে নতুন করে জন্মগ্রহণ করেন- যা হয়েছিল ইমরান খানের বেলায়।

১৯৯২ সালটি তার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ। এ বছরেই তিনি মুসলমান হিসেবে তার বৈশিষ্ট্যগুলো প্রকাশ করতে শুরু করেন। রাজনীতিতেও তিনি তার প্রাথমিক অবস্থান প্রকাশ করেন এই বছরেই। তার সমর্থক গোষ্ঠী গড়ে উঠলেও তা খুব একটা কার্যকর হয়নি দীর্ঘদিন।

ইমরান যাদের জন্য কাজ করেছিলেন তারা অবশ্য সর্বদা তাকে সমর্থন করেনি। পাকিস্তানের রাজনীতিতে দুই প্রধান ব্যক্তি যখন প্রবল পরাক্রমশালী ছিলেন, তখন ইমরানকে ভক্তরাও সেভাবে সামনে এগিয়ে নেয়নি। নব্বইয়ের দশকে পাকিস্তানে সামরিক অভ্যুত্থান ও দীর্ঘকাল সামরিক শাসন চললেও ইমরান খান সুবিধা করতে পারেননি। দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদরাও তার পার্টিতে খুব একটা আগ্রহ পাননি।

২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত অবশ্য ইমরানের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের জন্য ‘স্বর্ণযুগ’। তিনি তার গুরু আসগার খানের মতো জীবযাপন ও মৃত্যুবরণ করার ধারণা ত্যাগ করেন।

ইমরান খান রাজনৈতিক কাঠামো বিষয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গিও পাল্টে ফেলেছেন। তিনি এখন বিশ্বাস করেন কোনো নির্বাচনই রাজনৈতিক শক্তি ও সম্পদ ছাড়া বিজয় অর্জন করা যায় না। এটাই এখন নতুন ইমরান খানের পরিচয়।

— পাকিস্তানের ‘দ্য নিউজে’ প্রকাশিত জায়গাম খানের নিবন্ধ থেকে