ব্যাপক সমালোচনার মুখে ওয়াজ-মাহফিলের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার

ব্যাপক সমালোচনার মুখে-ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সোমবার (২৬ নভেম্বর) এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের চিঠি দিয়েছে কমিশন। এতে ওয়াজ-মাহফিল, ধর্মীয় জমায়েত বা কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠান কেউ করতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সহযোগিতা করতেও নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এরআগে, গত ১৯ নভেম্বর ইসি থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের চিঠি দিয়ে কোনও ধরনের ওয়াজ-মাহফিল বা ধর্মীয় জমায়েতের অনুমতি না দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। একইসঙ্গে কোথাও আগে থেকে অনুমোদন থাকলে সেখানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানের নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই ধর্মীয় অনুষ্ঠানে কোনও প্রার্থী বা তার পক্ষে কেউ যেন নির্বাচনি প্রচারণা না করতে পারে, সেই নির্দেশণাও দেওয়া হয়।

ইসির এই নির্দেশনার ফলে দেশের আলেম সমাজ থেকে কঠোর সমালোচনা করা হয়। নানা ধরনের হুমকিও দেওয়া হয় কমিশনকে। বরিশালের চরমোনাইসহ বিভিন্ন স্থানে ইসির নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ওয়াজ মাহফিল আয়োজনও করার খবর পাওয়া গেছে। ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে ওয়াজ-মাহফিলের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার চেয়ে বুধবার নির্বাচন কমিশনকে আইনি নোটিশও পাঠানো হয়েছে। ঢাকার রাজারবাগ দরবার শরীফের আন্তর্জাতিক ওয়াজ আয়োজক কমিটির সদস্য মুহম্মদ মাহবুব আলম ও সেই ওয়াজের অন্যতম বক্তা আবুল খায়ের মুহম্মদ আজিজুল্লাহর পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শেখ ওমর শরীফ এই নোটিশ পাঠিয়েছেন।

নানামুখী সমালোচনার কারণে কমিশন সোমবার সন্ধ্যায় নতুন করে চিঠি ইস্যু করে আগের চিঠির ব্যাখ্যা দেয়। একইসঙ্গে বলা হয়, ধর্মীয় সভা, ওয়াজ-মাহফিল বা এমন জমায়েতের বিষয়ে একটি মহল বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা চালাচ্ছে। এ ধরনের অপপ্রচারে নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে বিরূপ ধারণা সৃষ্টি, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

কমিশনের পক্ষ থেকে ওয়াজ বা ধর্মীয় জমায়েতের ওপর কোনও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি বলে নতুন চিঠিতে দাবি করা হয়। এ সময় আগের চিঠির ব্যাখ্যা দিয়ে বলা হয়, পূর্বনির্ধারিত বা ইতোমধ্যে অনুমোদিত কোনও ধর্মীয় জমায়েতে কোনও বাধা নেই। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে এবং নির্বাচন পূর্ব-পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ রাখতে পূর্ব নির্ধারিত ওয়াজ-মাহফিল ও ধর্মীয় জমায়েত ছাড়া নতুন করে ৩০ ডিসেম্বরের পর অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুরোধ করছিল। সেইসঙ্গে পূর্বনির্ধারিত বা বিশেষ বিবেচনায় ৩০ ডিসেম্বরের আগে অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে কোনও প্রার্থী, রাজনৈতিক দলের সদস্য বা অন্য কেউ কোনও ধরনের নির্বাচনি প্রচারণা অথবা কারও পক্ষে-বিপক্ষে বক্তব্য না দেন, সে জন্য কমিশন বিশেষভাবে নির্দেশনা দিয়েছে। এসব ক্ষেত্রে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।

ইসি যুগ্ম সচিব ফরহাদ আহম্মদ খান স্বাক্ষরিত নতুন চিঠিতে বলা হয়, ধর্মীয় সভা, ওয়াজ মাহফিল বা অনুরূপ জমায়েত সংক্রান্ত একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে অপপ্রচার রোধে এবং সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির অপচেষ্টা নস্যাৎ করার লক্ষ্যে এমন ধর্মীয় সভা বা জমায়েত আয়োজনে ক্ষেত্রবিশেষে রিটার্নিং কর্মকর্তা বা সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার অনুমতি সাপেক্ষে স্থানীয় পুলিশ কর্তৃপক্ষকে জানানোর জন্য কমিশন নির্দেশনা দিয়েছে। একইসঙ্গে এ ধরনের অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধি অনুসারে কোনও ধরনের রাজনৈতিক বক্তব্য বা কোন প্রার্থীর পক্ষে বিপক্ষে বক্তব্য দেওয়া যাবে না বলেও কমিশন সিদ্ধান্ত নেয়।

চিঠিতে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কমিশনের নির্দেশনা অনুসারে ধর্মীয় সভা, ওয়াজ মাহফিল বা এমন জমায়েত অথবা এ ধরনের ধর্মীয় কোনও অনুষ্ঠান আয়োজনে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়।