ব্রিটিশ পেট্রোলিয়ামের মুনাফা বেড়ে দ্বিগুণ

জ্বালানির ক্রমবর্ধমান দামের কারণে জ্বালানি কোম্পানির পোয়াবারো হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আমদানি ব্যয় বাড়ছে। মন্দাভাব বিরাজ করছে বিশ্ব অর্থনীতিতে। উন্নত দেশগুলো চলতি বছরের শেষ প্রান্তিকে মন্দার কবলে পড়বে বলে আশঙ্কা করছে। অর্থাৎ বিশ্বের বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো এখন ভালো ব্যবসা করতে পারছে না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম হচ্ছে জ্বালানি খাত। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বেড়েছে জ্বালানি তেলের দাম।

এই বাস্তবতায় বড় অঙ্কের মুনাফা ঘরে তুলেছে সৌদি আরামকো। বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে সৌদি আরবের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত এই জ্বালানি কোম্পানির মুনাফা হয়েছে ৪ হাজার ২৪০ কোটি ডলার। অন্যদিকে জ্বালানি খাতের আরেক বৃহৎ কোম্পানি ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম (বিপি) একই সময়ে মুনাফা করেছে ৮২০ কোটি মার্কিন ডলার, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় যা দ্বিগুণেরও বেশি। খবর বিবিসির।

জ্বালানি কোম্পানিগুলোর এই বিপুল মুনাফার পরিপ্রেক্ষিতে উন্নত দেশগুলোতে এসব কোম্পানির ওপর উইন্ডফল ট্যাক্স বা হঠাৎ লব্ধ মুনাফার ওপর করারোপ করা হচ্ছে। তবে ব্রিটেনের মতো দেশে এসব কোম্পানির ওপর আরও মুনাফা আরোপের দাবি উঠেছে।

জ্বালানির ক্রমবর্ধমান দামের কারণে জ্বালানি কোম্পানির পোয়াবারো হচ্ছে তা ঠিক, সে কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আমদানি ব্যয় বাড়ছে। বাড়ছে মূল্যস্ফীতির হার। ফলে সাধারণ মানুষ বড় ধরনের চাপের মুখে।

পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে যুক্তরাজ্যের মতো দেশে মানুষ জ্বালানির ক্রমবর্ধমান মূল্যের চাপে হিমশিম খাচ্ছে। এই বাস্তবতায় সে দেশের সরকার প্রায় ৮০ লাখ মানুষকে সহায়তা দিতে বিশেষ তহবিল গঠন করেছে, যার অর্থায়ন হবে জ্বালানি কোম্পানিগুলোর ওপর আরোপিত উইন্ডফল ট্যাক্স থেকে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী দুই বছরে এই কর থেকে যুক্তরাজ্য সরকার ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলার কর আদায় করবে।
কিন্তু বিপি এক প্রান্তিকেই ৮২০ কোটি ডলার মুনাফা করা সত্ত্বেও চলতি বছর মাত্র ৮০ কোটি ডলার উইন্ডফল কর দেবে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে বিপির প্রতিদ্বন্দ্বী শেল বলেছে, তারা উইন্ডফল করই দেবে না।

যুক্তরাজ্যের সদ্য নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক গত মে মাসে অর্থমন্ত্রী থাকাকালে এই উইন্ডফল কর প্রবর্তন করেন।
এদিকে যুক্তরাজ্যের ছায়া জলবায়ুমন্ত্রী এড মিলিব্যান্ড বিবিসিকে বলেছেন, বিপির এই মুনাফার বহর দেখে বোঝা যায়, সরকার এই জ্বালানি কোম্পানিগুলোর ওপর যথাযথ হারে করারোপ করতে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ঋষি সুনাকের এখন লজ্জা হওয়া উচিত। তিনি মানুষকে সহায়তা করতে জ্বালানি কোম্পানিগুলোর মুনাফায় হাত দিতে পারেননি। মানুষ কষ্টে থাকলেও এই কোম্পানিগুলোর ঘরে এখন বিপুল মুনাফা।
জ্বালানির দাম
২০২১ সালের শেষ নাগাদ যখন বিশ্বজুড়ে কোভিডজনিত বিধিনিষেধ উঠে যেতে শুরু করে, তখন থেকে জ্বালানির দাম বাড়তে শুরু করে। এর আগে টানা কয়েক বছর বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম কম ছিল। ২০২১ সালের শেষ দিকে বাড়তে শুরু করা জ্বালানির দর ২০২২ সালের শুরুতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর হু হু করে বাড়তে শুরু করে। এই জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির জেরে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে মূল্যস্ফীতির হার ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়।

জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিতে টোটাল ও এক্সন মবিলের মতো কোম্পানিগুলো বিপুল মুনাফা করছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আহ্বান, যুদ্ধ থেকে মুনাফা করা বন্ধ করুন। তেলের উৎপাদন বৃদ্ধি করে দাম না কমালে এসব তেল কোম্পানির ওপর তিনি আরও উচ্চ হারে করারোপের হুমকি দিয়েছেন।

বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, বিপির মতো কোম্পানি কত কর দিচ্ছে বা ভবিষ্যতে কত বিনিয়োগ করবে বা শেয়ারহোল্ডারদের কত লভ্যাংশ দেবে—এসবের মধ্যে সমন্বয় করতে হবে। শেষ বিচারে শেয়ারহোল্ডারদের ভারের অংশ বিশেষ বহন করতে হবে।