ভণ্ড বাবার বিরুদ্ধে লেখা চিঠিতে সেই রাতের বর্ণনা

ভারতে আলোচিত বাবা রাম রহিমের সংগঠন ডেরা সচ্চা সওদায় যে মহিলারা আবাসিক হিসেবে থেকে সংগঠনের কাজকর্মে অংশ নেন, তাদেরকে ‘সাধ্বী’ বলা হয়। সেই সাধ্বীদের দিয়ে নিজের লালসা মেটাতেন বাবা রাম রহিম। ধর্মের সঙ্গে মিলিয়েছেন সিনেমা। গড়েছেন আশ্রম। সব কু-কীর্তি ঠিক রাখতে সরকারি আমলা ও রাজনীতিবিদদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন তিনি।

সেই বিশাল সাম্রাজ্য ভেঙে দিল তারই আশ্রমের এক সাধ্বী। নিজের পরিচয় গোপন করে বাবার ধর্ষণ ও হত্যার কাহিনী লিখেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। আর তাতেই ১৫ বছর পরে কপাল পুড়ল গডম্যানের। ধর্মকর্মের আড়ালে বাবা যে মহিলা ভক্তদের ধর্ষণ করেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী-সহ পঞ্জাব এবং হরিয়ানা হাইকোর্টের বিচারপতিদের চিঠি লিখে সেই অভিযোগ জানিয়েছিলেন রাম রহিমের আশ্রমের এক মহিলা।

২০০২ সালে লেখা সেই চিঠি পেয়েই বাবার বিরুদ্ধে স্বতোঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করেছিল পঞ্জাব এবং হরিয়ানা হাইকোর্ট। পরবর্তীকালে যে মামলার দায়িত্ব যায় সিবিআই-এর হাতে। ২০০২ সালে লেখা সেই মহিলা ভক্তের চিঠিতে ঠিক কী লেখা ছিল? তা জানতে অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হয়েছে গণমাধ্যম কর্মীদের।

মহিলা ওই ভক্ত চিঠিতে জানিয়েছিলেন, স্নাতক হওয়ার পরেই পরিবারের ইচ্ছা অনুযায়ী তিনি ডেরা সচ্চা সওদার সাধ্বী হিসেবে যোগ দেন। প্রায় দু’বছর সাধ্বী হিসেবে কাজ করার পরে একদিন রাতে বাবা রাম রহিম তাকে নিজের গোপন ঘরে ডেকে পাঠান। চিঠিতে মহিলা লেখেন, ঘরে ঢুকে তিনি দেখেন বাবা টিভিতে একটি পর্নোগ্রাফিক(নীল সিনেমা) সিনেমা দেখছেন, তার সঙ্গে একটি রিভলবারও রয়েছে।

মহিলার অভিযোগ, গুরু রাম রহিম তাকে বলেন, ‘দীক্ষা নেয়ার সময়ে তুমি তোমার শরীর মন সবই গুরুকে সমর্পণ করেছিলে। তাই এখন তোমার শরীর, মন সবই আমার।’ এর পরেই গুরু রাম রহিম তার সঙ্গে জোর করে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হতে চান। বাধা দিলে তার পরিবারের ক্ষতি করার হুমকি দেন বাবা। পরে অসহায় হয়ে নিজেকে তুলে দেন বাবার হাতে।

শুধু তাই নয়, রাজ্য সরকার থেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, সবার সঙ্গে তার সুসম্পর্কের কথা উল্লেখ করে বাবা বলেন, কেউ তার কিছু করতে পারবে না। বরং প্রতিবাদ করলে খুন করে দেহ লোপাট করে দেয়ার হুমকিও তাকে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেন ওই মহিলা।

ওই মহিলা ভক্ত চিঠিতে অভিযোগ করেন, এর পরে প্রায় তিন বছর তাকে ধর্ষণ করেন নিজেকে ‘ভগবানের দূত’ বলে দাবি করা রাম রহিম। পরে ওই মহিলা জানতে পারেন, আশ্রমে থাকা অন্যান্য মহিলা ভক্তদেরও একইভাবে শারীরিক নির্যাতন করতেন রাম রহিম।

চিঠিতে ওই মহিলা লিখেছিলেন, তার নাম যদি কোনওভাবে প্রকাশ্যে আসে, তাহলে তাকে প্রাণে মেরে ফেলা হতে পারে। পরিবারের সদস্যদেরও ক্ষতি হতে পারে। তিনি কীভাবে কয়েকজনকে খুন করে লাশ গুম করে দিয়েছিলেন, সেই বর্ণনাও বাবা তাকে দেন বলে চিঠিতে অভিযোগ করেন ওই মহিলা।

এই চিঠির সূত্র ধরেই স্বতোঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে আদালত। মহিলার অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে আশ্রমের একাধিক সাধ্বীদের সঙ্গে কথা বলেন তদন্তকারীরা। এদের মধ্যে দু’জন মহিলা এই চিঠির অভিযোগের সত্যতা মেনে নেন। এর পরেই আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী বাবার কীর্তি খতিয়ে দেখতে কোমর বেঁধে তদন্তে নামে সিবিআই। যদিও, কে এই চিঠিটি লিখেছিলেন, আজও তা জানা যায়নি।

তার পরেও অবশ্য নিজের প্রভাব প্রতিপত্তি বাড়িয়েই যাচ্ছিলেন স্বঘোষিত ‘গডম্যান’। সিনেমায় হিরো হওয়া থেকে শুরু করে হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে স্বচ্ছ ভারত অভিযান, কী করেননি তিনি। সেই সঙ্গে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে তার ভক্তসংখ্যা।

এত কিছুর পরেও অবশ্য তারই ওই মহিলার ভক্তের তোলা অভিযোগের ভিত্তিতে এখন হাজতবাসের মুখে দাঁড়িয়ে ‘ভগবানের দূত’। আর সেই আশঙ্কায় বাইরে তাণ্ডব চালালেন তার হাজার হাজার ভক্ত। অনেকেই যাকে ‘ভেকধারী শয়তান’ বলে কটাক্ষ করছেন।