ভাইকিংদের শেষকৃত্যের পোশাকে কেন ‘আল্লাহ’ লেখা?


সুইডেনের গবেষকেরা ভাইকিংদের একটি কবরস্থান থেকে শেষকৃত্যের এমন কিছু সরঞ্জাম উদ্ধার করেছেন যেগুলোতে আরবী শব্দ লেখা রয়েছে।
আর এসব সরঞ্জাম উদ্ধারের পর প্রশ্ন জেগেছে স্ক্যান্ডিনেভিয়ানরা কি তাহলে ইসলাম ধর্ম দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন বেশ প্রাচীন আমলেই, লিখেছেন লন্ডন ভিত্তিক সাংবাদিক তারিক হুসেইন, যিনি মুসলিম হেরিটেজ সম্পর্কিত বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ।
নবম এবং দশম শতাব্দীর কবরস্থানে পাওয়া পোশাকে পরীক্ষা করে ভাইকিং এবং মুসলমানদের মধ্যকার যোগাযোগ সম্পর্কে নতুন ধারণা পাওয়া গেছে। ভাইকিংদের এসব কবর থেকে উদ্ধার করা সরঞ্জামগুলোতে ‘আল্লাহ’ ‘আলী’ ইত্যাদি শব্দ লেখা বা আঁকা রয়েছে।
সুইডেনের উপসালা ইউনিভার্সিটির টেক্সটাইল আর্কিওলজিস্ট আনিকা লারসন বলেছেন, ‘ভাইকিংরা কোনো এক পর্যায়ে হয়তোবা ইসলাম এবং এর পরকালের ধারণা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন।’
গবেষকরা জানাচ্ছেন, নৌকা আকৃতির কবর থেকে উদ্ধার করা শেষকৃত্যের কাপড়ে শব্দগুলো লেখা হয়েছে আরবী কুফিক বর্ণমালায়। “আমি হঠাৎ করে দেখলাম আল্লাহ শব্দটা এমনভাবে লেখা যেটা শুধু আয়নাতে ধরলে সঠিকভাবে দেখা সম্ভব” – বলছেন লারসন।
একশো’টি পোশাকের মধ্যে দশটি পোশাকে এ ধরনের শব্দ খুঁজে পেয়েছেন তিনি। “হতে পারে যাদের কবর দেয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে অনেকে মুসলিম ছিলেন। ডিএনএ পরীক্ষা করে আমরা দেখেছি যেসব মানুষকে কবর দেয়া হয়েছে, তাদের অনেকে পারস্য থেকে এসেছেন, যেখানে ইসলামের অনেক প্রতিপত্তি ছিল”।
অবশ্য ভাইকিংদের কবরে ‘আল্লাহ’ শব্দ লেখা পাওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম নয়। আরব এবং মুসলমানদের সঙ্গে ভাইকিংদের যোগাযোগ যে বহু আগে থেকে ছিল এটা বেশিরভাগেরই অজানা। দুই বছর আগে অর্থাৎ ২০১৫ সালে স্টকহোম ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক সেবাস্টিয়ান ওয়ার্মল্যান্ডারের নেতৃত্বে একদল গবেষক অনুসন্ধান চালিয়ে একটি কবর থেকে ‘আল্লাহ’ লেখা আংটি উদ্ধার করেছিলেন।
সুইডেনের একটি প্রাচীন বাণিজ্য কেন্দ্র বির্কায় ৯ম শতাব্দীর প্রাচীন একটি কবর খুঁড়ে এক মহিলার দেহাবশেষ পাওয়া যায়। তার হাতে একটি আংটি ছিল, আর সেই আংটিতে প্রাচীন আরবিতে লেখা ছিল ‘আল্লাহর প্রতি’ বা ‘আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে’।
রূপার তৈরি ওই আংটিতে যে কুফিক আরবি লেখা ছিল তার প্রচলন ছিল ৮ম থেকে ১০ম শতাব্দিতে। দুই বছর আগে উদ্ধার করা ওই আংটিটি বর্তমানে সুইডিশ হিস্টোরি মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে। ওই আংটিতে কুফিক বর্ণ ছিলো, এবারের উদ্ধারকৃত পোশাকগুলোতেও পাওয়া গেছে কুফিক বর্ণমালার উপস্থিতি।
“আল্লাহ শব্দটির পাশে বারবার আলী শব্দটিরও ব্যবহার হয়েছে,” জানাচ্ছেন লারসন। “আমি জানি মুসলিম শিয়া সম্প্রদায়ের লোকেরা আলীকে অনেক সম্মান করেন এবং এমন সংযোগ দেখেও আমি অবাক হয়েছি”।
ইসলামের নবী মুহাম্মদের মেয়ে ফাতিমাকে বিয়ে করেছিলেন আলী। তিনি ছিলেন ইসলাম ধর্মের চার খলিফার মধ্যে একজন। শিয়া ও সুন্নী সম্প্রদায়ের লোকেদের কাছে আলী গুরুত্বপূর্ণ হলেও শিয়া সম্প্রদায়ে তাঁকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়।
“ভাইকিংদের শেষকৃত্যের পোশাকে যে আলী লেখা শব্দ পাওয়া গেছে তাতে বুঝা যাচ্ছে যে তাদের সাথে শিয়াদের একটা যোগাযোগ থাকতে পারে,” বলেছেন লন্ডনের ইসলামিক কলেজের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রধান আমির দে মারতিনো। “যে প্যাটার্নে আলী শব্দটি লেখা হয়েছে তাতে মনে হচ্ছে তারা ‘আল্লাহর বন্ধু’ হিসেবে সেই শব্দটি ব্যবহার করতে চেয়েছে। এটা আবার শিয়া মতাবলম্বীদের সাথে মিলে না”।
“কেউ হয়তো ভুল করে এটা কপি করেছে”। “আমি ভাইকিংদের প্যাটার্ন ধরার চেষ্টা করছি। আমি নিশ্চিত ভাইকিংদের জিনিসে আরো ইসলামিক শিলালিপি খুঁজে পাবো। কে জানে হয়তো পোশাক ছাড়াও অন্য কোনো শিল্পকর্ম খুঁজে পাবো” বলেন লারসন।-সূত্র বিবিসি

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন