ভারতীয় সেনার গুলিতে ছাত্র নিহত, ফুঁসে উঠছে কাশ্মীর
কাশ্মীরে ১৯ বছর বয়সী শহীদ বাশির মীর নামের এক শিক্ষার্থীকে গুলি করে হত্যা করেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। পুলিশ বলেছে, নিরস্ত্র ছাত্রটিকে বিদ্রোহী ভেবে মঙ্গলবার সেনা সদস্যরা গুলি করে হত্যা করে। শহীদ বাশির মীর হত্যার ঘটনায় বৃহস্পতিবার ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের উত্তরাঞ্চলের হান্দাওয়ারায় ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষও হয়। বিক্ষুব্ধ জনতা হত্যার ঘটনায় জড়িত সেনা সদস্যদের বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। খবর আলজাজিরার।
বিক্ষোভকারীরা শহীদ বাশির মীরের লাশ নিয়ে তার গ্রাম দারিল তাতপোড়ায় বিক্ষোভ করে। এ সময় লাশের কফিন ধরে নারী-পুরুষরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা তদন্ত শুরু না হওয়া পর্যন্ত লাশ দাফনে বিরত থাকারও ঘোষণা দেন।
কাশ্মীরের পুলিশ প্রধান মুনির খান সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘শহীদ বাশির মীর একজন বেসামরিক ব্যক্তি। তার কাছ থেকে সেনা সদস্যরা কোনো অস্ত্র পায়নি।’
তবে কেন তাকে হত্যা করা হলো, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
মঙ্গলবার ভারতীয় সেনাবাহিনী দাবি করে, গ্রামের বাগানে বন্দুকযুদ্ধের সময় তারা এক জঙ্গিকে খতম করতে সক্ষম হয়।
পরে স্থানীয়রা সনাক্ত করেন, নিহত শহীদ বাশির মীর হান্দাওয়ারা ডিগ্রি কলেজের ছাত্র এবং দু’দিন ধরে তিনি নিখোঁজ ছিলেন।
শহীদ বাশির মীরের পরিবারের সদস্যরা আলজাজিরাকে বলেছে, সোমবার সেনা সদস্যরা এসে তাকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তার সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না।
শহীদ মীরের বাবা বাশির আহমেদ মীর বলেন, ‘তুলে নিয়ে যাওয়ার পর থেকেই আমরা সবখানে সন্ধান করি। আমি বনে গিয়েছি, গ্রামে তন্নতন্ন করে খুঁজেছি। কিন্তু কোথাও তাকে পাইনি।’
তিনি বলেন, ‘একদিন পরে পুলিশের ফোন পেয়ে থানায় গিয়ে ছেলের লাশ সনাক্ত করি। মরদেহে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন, মুখটা বিকৃত, যেন চেনার উপায় নেই। আমরা নিজেদের কষ্ট ধরে রাখতে পারিনি।’
এ ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন কাশ্মীরের উত্তরাঞ্চলের ওই কলেজ এবং স্কুলগুলো বন্ধ ঘোষণা করেছে।
নাজির আহমেদ নামের এক বিক্ষোভকারী আলজাজিরাকে বলেন, ‘আমরা আমাদের তরুণদের এভাবে হারাতে চাই না। এর চেয়ে ভালো জঙ্গিদের সঙ্গে যুক্ত হই আর সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে মরি। কী অপরাধ ছিল তার যে, এভাবে হত্যা করতে হবে? এভাবে রক্ত ঝরানো আর কতকাল চলবে?’
মানবাধিকারকর্মী খুররম পারভেজ অভিযোগ করেন, এসব খুনের জন্য সেনা সদস্যরা অর্থ পান। সেটির লোভেই তারা হত্যার সময় কে নিরীহ আর কে সন্ত্রাসী তার বাছবিচার করেন না।
পরমাণু শক্তিধর ভারত ও পাকিস্তান কাশ্মীরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে শাসন করে আসছে। এ নিয়ে দেশ দু’টির মধ্যে দীর্ঘদিন লড়াইও চলছে।
১৯৮৯ সাল থেকে স্বাধীনতার দাবিতে ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ করে আসছে জম্মু ও কাশ্মীরে বিদ্রোহী গ্রুপ। তারা স্বাধীনতা নতুনা পাকিস্তানের সঙ্গে মিশে যেতে চায়।
আর বিদ্রোহী দমনে ভারত কাশ্মীর সীমান্তে ৫ লাখের বেশি সেনা মোতায়েন করেছে। সেনা সদস্যরা বিভিন্ন সময় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমনে অভিযান পরিচালনা করে থাকে। তাদের অভিযানে এখন পর্যন্ত ৭০ হাজারের বেশি লোক নিহত হয়েছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন