ভারতে কোরআনের ২৬টি আয়াত নিষিদ্ধের আবেদন খারিজ, আবেদনকারীকে জরিমানা
ইসলামের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরানের ২৬টি আয়াত নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবিতে করা একটি জনস্বার্থ পিটিশন সোমবার ভারতের সুপ্রিম কোর্ট সরাসরি খারিজ করে দিয়েছে।
শুধু তাই নয়, এরকম একটি ‘সম্পূর্ণ অর্থহীন’ পিটিশন দাখিল করার জন্য আবেদনকারী সৈয়দ ওয়াসিম রিজভির ৫০,০০০ রুপি জরিমানাও করা হয়েছে।
সৈয়দ ওয়াসিম রিজভি উত্তরপ্রদেশের শিয়া ওয়াকফ বোর্ডের একজন সাবেক চেয়ারম্যান এবং দেশের শিয়া মুসলিম সমাজের একজন প্রভাবশালী নেতা।
গত ডিসেম্বরে তিনি কোরানের বিশেষ কয়েকটি আয়াত অসাংবিধানিক ঘোষণার দাবিতে শীর্ষ আদালতের শরণাপন্ন হয়েছিলেন।
এই আয়াতগুলো মূল কোরানের অংশ নয় বলেও পিটিশনে দাবি করা হয়েছিল।
তার যুক্তি ছিল, এই আয়াতগুলি মুসলিমদের তরুণ প্রজন্মকে শিখিয়ে বিধর্মীদের, বিশেষত মূর্তিপূজায় বিশ্বাসীদের হত্যা করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী বিধর্মীদের ওপর হামলা চালানোর ‘সাফাই’ হিসেবে এই আয়াতগুলো কাজে লাগাচ্ছে বলেও যুক্তি দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু সুপ্রিম কোর্টে সোমবার প্রথম দিনের শুনানিতেই তিনজন বিচারপতির বেঞ্চ আবেদনটিকে ‘পুরোপুরি ভিত্তিহীন’ বলে নাকচ করে দিয়েছেন।
বেঞ্চের নেতৃত্বে ছিলেন জাস্টিস রোহিংটন নরিম্যান।
তিনি এমনও প্রশ্ন তোলেন, “আবেদনকারী কি এই পিটিশন নিয়ে সত্যিই সিরিয়াস? আমরা তো বিশ্বাসই করতে পারছি না!’’ অর্থহীন বিষয় নিয়ে মামলা রুজু করে আদালতের সময় নষ্ট করার জন্য আবেদনকারীর আর্থিক জরিমানা করারও সিদ্ধান্ত নেয় শীর্ষ আদালত।
তবে সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার শুনানির আগেই ভারতের নানা মহলে সৈয়দ ওয়াসিম রিজভির পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছিল।
অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের সাধারণ সম্পাদক মৌলানা মাহমুদ দরিয়াবাদী বিবৃতি দিয়ে বলেছিলেন, “পবিত্র কোরানের কোনও আয়াত মানুষকে সহিংসতায় প্ররোচিত করে বলে আমরা বিশ্বাস করি না।”
অল ইন্ডিয়া শিয়া পার্সোনাল ল বোর্ড এবং আরও নানা মুসলিম সংগঠনের পক্ষ থেকেও অভিযোগ আনা হয়েছিল, সৈয়দ ওয়াসিম রিজভি ‘সম্পূর্ণ প্রসঙ্গ-বহির্ভূতভাবে কোরানের অপব্যাখ্যা’ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
ভারতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিঘ্নিত করার অভিযোগে মিস্টার রিজভিকে নোটিশ পাঠিয়েছিল দেশের জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশনও।
দক্ষিণ ভারতের আর্কটের নবাব মহম্মদ আবদুল আলিও বিবৃতি দিয়ে বলেছিলেন, ভারতের সুপ্রিম কোর্ট যদি এই আবেদনটি শুনানির জন্য গ্রহণ করে তাহলে সেটা হবে নাগরিকদের ধর্মীয় স্বাধীনতার লঙ্ঘন।
শুধু ভারতে নয়, প্রতিবেশী বাংলাদেশেও খেলাফত মজলিস-সহ বিভিন্ন ইসলামপন্থী সংগঠন কোরানের আয়াত নিষিদ্ধ করার দাবিকে ‘আল্লাহ-র সাথে চরম ধৃষ্টতার শামিল’ বলে বর্ণনা করেছিল। গত মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের সময় বাংলাদেশে যে তীব্র বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ হয়েছিল, সেখানেও এই ইস্যুটিকে সামনে নিয়ে এসেছিল বিভিন্ন সংগঠন।
তবে সোমবার সুপ্রিম কোর্টে মামলাটি অঙ্কুরেই বিনষ্ট হওয়ার পর এই বিতর্কের অবসান হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
সোমবারের শুনানিতে আবেদনকারীর পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী আর কে রাইজাদা অবশ্য যুক্তি দিয়েছিলেন, মাদ্রাসা শিক্ষাকে একটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনার সীমিত লক্ষ্য নিয়েই এই পিটিশন দাখিল করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমার সাবমিশন হল এই বিশেষ আয়াতগুলো বিধর্মী বা কাফিরদের বিরুদ্ধে সহিংসতার হয়ে সওয়াল করে।’
‘খুব অল্প বয়স থেকে যে বাচ্চাদের মাদ্রাসায় থেকে পড়াশুনো করতে হয়, তাদের এগুলো শিখিয়ে মগজধোলাই করা হয়- যা কখনওই কাম্য নয়’, যুক্তি দেন তিনি।
সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের বেঞ্চ অবশ্য এরপরও পরিষ্কার জানিয়ে দেন যে, তারা এই বিষয় নিয়ে কোনও তর্কবিতর্ক শুনতেও আগ্রহী নয়।
আবেদনকারীকে ৫০,০০০ রুপির প্রতীকি জরিমানা করে তারা আবেদনটিকে পত্রপাঠ খারিজও করে দেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন