ভারতের নতুন অস্ত্র পরীক্ষা, টার্গেট চীন না পাকিস্তান?

ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে নতুন ক্ষেপণাস্ত্র তুলে দিতে চলেছে ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন বা ডিআরডিও। থার্ড জেনারেশনের ‘ফায়ার অ্যান্ড ফরগেট’ অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক গাইডেড মিসাইল ‘প্রসপিনা’-কে আগে ‘নাগ’ বলে ডাকা হতো। এবার সেই প্রসপিনা মিসাইলকে রাজস্থানের রুক্ষ জমিতে পরীক্ষা করে দেখতে তৈরি ভারত। চীন না পাকিস্তান- কাকে লক্ষ্য করে এই পরীক্ষা চালানো হচ্ছে, সেটাই দেখার বিষয়।

এর আগে চলতি বছরের জুন মাসে জয়সলমেরের চন্দন ফিল্ড ফায়ারিং রেঞ্জে এই অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক গাইডেড মিসাইল সাফল্যের সঙ্গে পরীক্ষায় উতরে গিয়েছিল। আর এবার চূড়ান্ত পরীক্ষার মুখে এই মারণ ক্ষেপণাস্ত্র। দ্রুতই ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্তাদের সামনেই পুরোদমে চলবে টেস্ট ফায়ারিং। গতবারের তুলনায় এই ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা আরো বেড়েছে। সঙ্গে বসানো হয়েছে ইনফ্রারেড প্রযুক্তিও। রাজস্থানের চূড়ান্ত গরমে এই মিসাইল পরীক্ষা করার অন্যতম কারণ হলো, লক্ষ্যবস্তুকে চোখে দেখতে না পাওয়া গেলেও স্রেফ উত্তাপের উপর ভিত্তি করে কতটা নিখুঁত হামলা করতে পারে প্রসপিনা, সেটাই দেখে নেওয়া। পোশাকি ভাষায় একে বলে ‘হিট সেন্সিং’ টেকনোলজি।

নয়া নাগ বা প্রসপিনা মিসাইলে বসানো হয়েছে একগুচ্ছ নয়া প্রযুক্তি। হাই রেজলিউশন ইমেজিং ইনফ্রারেড রাতের অন্ধকারেও দুশমনের ঘাঁটিতে সফলভাবে হামলা চালাতে পারবে। বিকানিরে পরীক্ষার সময় এই মিসাইল এতটা মারাত্মক ছিল না, বলছেন খোদ ডিআরডিও-র বিজ্ঞানীরাই। এই মিসাইলের ‘হাই সেনসিটিভ ডিটেকটরস’ হামলার টার্গেটকে মূলত তিনটি ভাগে ভাগ করে নেয়। টার্গেটকে, যেখান থেকে নিশানা করা হচ্ছে, সেই জায়গা থেকে টার্গেটের দূরত্বকে ও টার্গেটের আশেপাশে কী রয়েছে-সেটাকে। যার ফলে লক্ষ্যবস্তু ছাড়া অন্য কোনও অদরকারি বস্তুকে হামলা করে মিসাইলটি নষ্ট হওয়ার সুযোগ নেই বললেই চলে। বিশেষভাবে তৈরি ইনফ্যান্ট্রি কমব্যাট ভেহিক্যালে এই মিসাইল বসানো হবে। দিনের আলোয় বা রাতের অন্ধকারে- যে কোনও পরিস্থিতিতে ৪ কিলোমিটার দূরের টার্গেটকে ধুলোয় মিশিয়ে দিতে পারে নাগ বা প্রসপিনা।

চীন–পাকিস্তানকে নিয়ে ভয় নেই :‌ রাওয়াত

অযাচিত মন্তব্য করে পড়শি দেশের সমালোচনার মুখে পড়েছেন। সময় থাকতে তাই সামলে নিলেন ভারতীয় সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াত। চীন ও পাকিস্তানকে নিয়ে ভারতের কোনো ভয় নেই বলে জানিয়ে দিলেন। একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শনিবার উত্তরাখণ্ডের দেরাদুন গিয়েছিলেন। সেখানেই এমন মন্তব্য করেছেন। বলেছেন, ‘‌চীন বা পাকিস্তান, দুই দেশের একটিকে নিয়েও ভয় নেই।’‌

চার দিন আগেই অবশ্য আক্রমণাত্মক সুর ধরা পড়েছিল তার গলায়। টানা ৭২ দিন ধরে টানাপোড়েনের পর ডোকা লা নিয়ে সবে শান্তিপূর্ণ পদক্ষেপ করেছিল ভারত ও চীন। আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সিকিম সীমান্ত থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় দুই দেশ। তারপর গত সপ্তাহে ব্রিকস সম্মেলনের শেষ দিনে ‌শান্তি, পারস্পরিক সহযোগিতা ও উন্নতির বার্তা দেন দুই দেশের রাষ্ট্রনেতা নরেন্দ্র মোদি ও শি জিনিপিং। কিন্তু তার দু’‌দিন পরই বেফাঁস মন্তব্য করে বসেন ভারতের সেনাপ্রধান।

তিনি বলেন, ‘‌যেকোনো মুহূর্তে ডোকা লামের পুনরাবৃত্তি হতেই পারে। চীনের সঙ্গে ভারতের সঙ্ঘাতের সুযোগ নিতে পারে পাকিস্তানও। আচমকা আক্রমণ করতে পারে তারা। দেশের উত্তর ও পশ্চিম— দুই প্রান্তেই ইতিমধ্যে এলাকা দখল শুরু হয়েছে। তবে আমরাও প্রস্তুত। কাশ্মীরে শান্তি স্থাপন এবহং সেখানকার স্থিতিশীলতা রক্ষাই আমাদের মূল লক্ষ্য। প্রয়োজনে ফের সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালাতেও আপত্তি নেই।’‌

ব্রিকস সম্মেলনের পরদিনই এমন মন্তব্য করায় তার ওপর চটে ওঠে বেইজিং। তাদের সরকারি মুখপাত্র জেঙ শুয়াঙ বলেন, ‘‌দু’‌দিন আগেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন প্রেসিডেন্ট জিনপিং। বিরোধ ভুলে শান্তি ও উন্নয়নে জোর দেয়ার কথা বলেছেন। তাসত্ত্বেও এমন মন্তব্য মেনে নেওয়া যায় না। দিল্লির মদতে উনি এমন মন্তব্য করেছেন না নিজেকে হামবড়া ভেবে হাবিজাবি বকেছেন তা জানা নেই।’‌

চীন সীমান্তে রাস্তা নির্মাণে তৎপর ভারতীয় সেনাবাহিনী

ডোকালামের ঘটনার পর চীন সীমান্তের রাস্তা ভালো করতে তৎপর হলো সেনা। ২০২০–২১ এর মধ্যে চীন সীমান্তের সেই সব রাস্তা পাকাপাকি ভাবে তৈরি করে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মোট ৬১টি রাস্তা রয়েছে ভারত চীন সীমান্তে। সেগুলি ভালো করার জন্য বর্ডার রোড অর্গানাইজেশনকে পর্যাপ্ত অর্থ সরবরাহ করা হবে বলে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। গত তিন বছরে এই সীমান্তের ১০৭ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি হয়েছে। ২০১৬–১৭ সালে আরো ১৪৭ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ হয়েছে। সেই কাজের গতি বাড়িয়ে ২০২০–২১ সালের মধ্যে পুরো কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। সূত্রের খবর ৬১টি রাস্তার মধ্যে ২৭টি রাস্তার নির্মাণ শেষ হয়ে গেছে। ৩৪টি রাস্তার কাজ বাকি আছে। সেজন্য ইতিমধ্যই ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

ডোকা লামের ঘটনার পর সীমান্তের রাস্তা ভালো করার দিকে বিশেষ নজর দেয়া হচ্ছে। শুধু ডোকা লাই নয় অরুণাচল সীমান্তেও রাস্তা পাকা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সেই কারণেই ভূপেন হাজারিকা সেতু নির্মাণ। আর তারপর থেকেই চীনের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করে ভারতের। কিন্তু ডোকা লাম নিয়ে যতটা পানি ঘোলা হয়েছে, ভবিষ্যতে আর সেই ঝুঁকি রাখতে চাইছে না ভারতীয় সেনাবাহিনী। সেকারণেই চীন সীমান্তের রাস্তা পাকা ও মজবুত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।