ভারতে পাঁচ বছর ধরে এক কিশোরীকে ধ*র্ষ*ণ করে ৬০ জন!


ভারতে দলিত সম্প্রদায়ের দরিদ্র এক মজুরির কিশোরী মেয়ে পাঁচ বছর ধরে প্রায় ৬০ জন সহপাঠী, প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন এবং অপরিচিত ব্যক্তির দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, মেয়েটিকে যৌন নির্যাতন, ধর্ষণ ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে মোট ৫৮ জন ছেলেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
কেরালা পুলিশের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল অজিতা বেগম সিএনএনকে বলেন, এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আরও দুজন দেশ ছেড়ে পালিয়েছে।
পাঁচ বছর আগে ১৩ বছর বয়সী মেয়েটি গ্রামে থাকত। প্রথমে এক প্রতিবেশীর দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিল বলে অভিযোগ। ওই প্রতিবেশী ভিডিও ধারণ করে তাকে ব্ল্যাকমেইল করত। এরপর পরবর্তী পাঁচ বছরে আরও কয়েক ডজন পুরুষ তাকে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন করে।
পুলিশ বলছে, বর্তমানে ১৮ বছর বয়সী ওই মেয়ে কেরালার একজন কাউন্সেলরের সঙ্গে কথা বলার পর এবং বছরের পর বছর ধরে ভয়াবহ নির্যাতনের বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়ার পরই বিষয়টি সামনে আসে।
সিএনএনের পর্যালোচনা করা মামলার নথি এবং স্থানীয় পুলিশের সাক্ষাত্কার অনুসারে, অভিযুক্তদের মধ্যে তার স্কুলের সহপাঠী, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী রয়েছে। এদের মধ্যে চল্লিশের দশকের পুরুষও রয়েছে। অভিযুক্তদের কেউই এই অভিযোগ নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি।
কঠোর শাস্তির শাস্তি যুক্ত করে আইন সংশোধন করা সত্ত্বেও লিঙ্গবাদ এবং পিতৃতন্ত্রের কারণে ভারতে নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা ব্যাপক। গত বছরের আগস্ট মাসে কলকাতায় একজন শিক্ষানবিশ চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার পর দেশব্যাপী চিকিৎসকদের ধর্মঘট শুরু হয়। সে সময় হাজার হাজার মানুষকে রাস্তায় নেমে এসেছিল।
তবে কেরালার ঘটনা সেই রকম ক্ষোভের জন্ম দেয়নি। বিশেষজ্ঞ ও অ্যাক্টিভিস্টরা বলছেন, এর কারণ হচ্ছে ভুক্তভোগী মেয়েটি হিন্দু বর্ণপ্রথায় নিচের দিকে থাকা দলিত সম্প্রদায়ের। এটি একটি ৩,০০০ বছরের পুরানো সামাজিক ও ধর্মীয় শ্রেণিবিন্যাস, যা জন্মের সময় মানুষকে একটি শ্রেণিতে ফেলে দেয়। সমাজ তাদের স্থান নির্ধারণ করে।
সিএনএন বলছে, দলিতদের ঐতিহ্যগতভাবে হিন্দু ধর্মগ্রন্থ দ্বারা প্রথাগতভাবে ‘অশুচি’ হিসাবে দেখা হয়। তাদের আলাদা পেশায় নিয়জিত করা হয় যেমন, বর্জ্য বাছাই এবং রাস্তা ঝাড়ু দেওয়া। তাদের প্রায়শই মন্দিরে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয় এবং তথাকথিত উচ্চবর্ণের সম্প্রদায় থেকে আলাদা থাকতে বাধ্য করা হয়।
বর্ণের ভিত্তিতে বৈষম্য নিষিদ্ধ করে আইন থাকলেও অ্যাক্টিভিস্টরা বলছেন, তথাকথিত ‘কলঙ্কের’ কারণে ভারতের ২৬০ মিলিয়নেরও বেশি দলিত মানুষ নির্যাতনের ঝুঁকিতে রয়েছে। তারা নিজেদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের প্রতিকার চাইতেও কম সক্ষম।
দলিত অধিকার কর্মী ও সমাজনীতি বিষয়ক গবেষক সিনথিয়া স্টিফেন বলেন, দলিত নারীরা (নির্যাতিত) হলে ভারতে ক্ষোভ কম দেখা যায়। একটা ধারণা আছে যে, এই মেয়েরা আমাদের কেউ না।
কারসাজি, অপহরণ ও নির্যাতনের শিকার
পুলিশ সিএনএনকে জানিয়েছে, গ্রামের এক যুবক মেয়েটির শ্লীলতাহানি করে এবং অশ্লীল ভিডিও ও ছবি তোলে। নির্যাতনকারীদের মধ্যে অন্তত তিনজন তাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। সেই সঙ্গে নির্যাতনের কথা জানালে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।
পুলিশ জানিয়েছে, গভীর রাতে ঘুমোতে যাওয়ার পর ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপের মতো সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপের মাধ্যমে ওই তরুণীর সঙ্গে যোগাযোগ করে অনেকেই।
ব্যক্তিগত ও প্রকাশ্য স্থানে, বাড়িতে, গাড়িতে, বাস স্টপেজে এবং মাঠে এই নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ। কিছু ক্ষেত্রে কয়েক মাইল দূরের শহরে বসবাসকারী অপরিচিত পুরুষরাও এতে জড়িত বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
পুলিশ বলছে, মেয়েটির বাবা-মা দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতেন এবং তাদের মেয়ের নির্যাতনের বিষয়ে জানতেন না।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ মিনিট জানিয়েছে, জানুয়ারিতে যখন অভিযোগ উঠেছিল, তখন সম্প্রদায়ের কিছু নারী অভিযুক্তের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। ওই নারীরাই আবার মেয়েটির পোশাক ও জীবনযাত্রার সমালোচনা করেছেন এবং তার মাকে দোষারোপ করেছেন যে, তারা মেয়েকে যেন আরও ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করেন।
‘নিজের বাড়ির উঠোনে দানব’
কেরালার অর্ধেকেরও বেশি দলিত ঐতিহাসিক আইনের অধীনে বছরের পর বছর জমির মালিকানা থেকে বঞ্চিত। তারা সরকার নির্ধারিত অঞ্চলে বাস করে।
কেরালার দলিত নারীবাদী কর্মী রেখা রাজ সিএনএনকে বলেন, এসব নির্ধারিত অঞ্চলে বসবাসকারী অনেক মেয়ের নিরাপত্তার অভাব রয়েছে। বিষয়টি তাদের নির্যাতনের জন্য আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।
যুক্তরাজ্যের শেফিল্ড হালাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান ও জেন্ডার জাস্টিসের অধ্যাপক মধুমিতা পান্ডে বলেন, তথাকথিত দানবরা যখন আমাদের বাড়ির উঠোনে থাকে, তখন ধর্ষণ সংশ্লিষ্ট ঘটনাগুলোর প্রতিবেদন করা আরও কঠিন হতে পারে।
সরকারি পরিসংখ্যান তার বক্তব্যকে সমর্থন করে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, কেরালায় ৯৮ শতাংশেরও বেশি ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত অপরাধীরা ভুক্তভোগীর পরিচিত হয়ে থাকে।
ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে দলিত নারীসহ ভারতে নিপীড়িত জাতিভুক্ত নারীদের ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৪ হাজার ২৪১টি। এটি প্রতিদিন ১০টির বেশি ধর্ষণের সমান।
পুলিশ জানিয়েছে, কেরলের গ্রামে ওই নির্যাতনের অন্তত ১৬টি ঘটনায় অভিযুক্তরা সুবিধাভোগী জাতের। দোষী সাব্যস্ত হলে এই ব্যক্তিরা সুবিধাবঞ্চিত বর্ণের সুরক্ষার জন্য তৈরি ভারতীয় আইনের অধীনে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন