ভারত থেকে বাংলাদেশে পুশইন গ্রহণযোগ্য নয়: নিরাপত্তা উপদেষ্টা

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেছন, বাংলাদেশি নাগরিক উল্লেখ করে সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে মানুষ প্রবেশ (পুশইন) করানোর বিষয়টি ‘গ্রহণযোগ্য’ নয়।
বুধবার (৭ মে) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, ভারত থেকে জোর করে মানুষ প্রবেশ করানোর খবর আমরা পাচ্ছি। দেশের নাগরিক হলে আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় তা জানাতে হবে। এ ধরনের ঘটনা গ্রহণযোগ্য নয়।
বিষয়টি নিয়ে দিল্লির সঙ্গে কথা চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে জোরপূর্বক প্রবেশের বিষয়ে দিল্লিকে জানানো হয়েছে। কোনো বাংলাদেশি নাগরিক হলে আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় তাদের পাঠানোর কথাও বলা হয়েছে।
সম্প্রতি মেহেরপুরের মুজিবনগর দিয়ে ১০ জনকে বাংলাদেশে জোর করে পাঠিয়ে দেয় ভারতীয় সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী (বিএসএফ)। আটকরা বিজিবিকে জানান, বিএসএফ সদস্যরা কাঁটাতারের বেড়া খুলে বাংলাদেশের মধ্যে তাদের ঠেলে দিয়েছে।
৬৬ ভারতীয়কে বাংলাদেশে ‘পুশইন’ করেছে বিএসএফ
খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা ও পানছড়ি সীমান্ত দিয়ে ৬৬জন ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশে জোর করে ‘পুশইন’ করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীবাহিনী বিএসএফ। এদের অধিকাংশই নারী ও শিশু এবং তারা নিজেরা ভারতের গুজরাটের বাসিন্দা বলে স্বীকার করেছে। বুধবার (৭ মে) ভোরে এদের পুশ করা হয়।
এনিয়ে সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি বলেছে, এসব ভারতীয় নাগরিকদের ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে বিএসএফের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, বুধবার ভোর আনুমানিক ৫টার দিকে মাটিরাঙ্গার গোমতী ইউনিয়নের শান্তিপুর সীমান্ত দিয়ে ২৭জন ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশে পুশ করা হয়। একই সময় তাইন্দং সীমান্ত দিয়ে ১৫জন এবং পানছড়ি সীমান্ত দিয়ে ২৪ জনকে জোর করে পুশ করা হয়। গোমতীর শান্তিপুর দিয়ে পুশ করা ভারতীয়রা হাজীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আবুল মাস্টারের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। পরে খবর পেয়ে শান্তিপুর বিওপির বিজিবি তাদের আটক করে। নিজেদের ভারতীয় নাগরিক স্বীকার করে গুজরাটের বাসিন্দা বলে তারা জানায়।
তারা আরও বলেন, গুজরাট থেকে তাদের আটক করে বিমান ও ট্রেনে করে ত্রিপুরায় নিয়ে আসা হয়। পরে বিএসএফ অস্ত্রেরমুখে জোরপূর্বক তাদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠায়।
জানা যায়, গত ২৯ এপ্রিল ভারতের পশ্চিম উপকূলীয় রাজ্য গুজরাটে বাংলাদেশি সন্দেহে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার ব্যক্তিকে আটক করে সেদেশের পুলিশ। আটককৃতরা অধিকাংশই ভারতীয় মুসলিম। সূত্র জানায়, এদের একটি বড় অংশ বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পুশ করার জন্য বিমান ও ট্রেনযোগে ত্রিপুরা রাজ্যে নিয়ে আসা হয়। এদেরই ৬৬জনকে বুধবার ভোরে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা ও পানছড়ি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পুশ করা হয়েছে।
মাটিরাঙ্গার পলাশপুরের বিজিবির ৪০ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক বলেন, আটককৃত ভারতীয় নাগরিকদের পুনরায় তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীবাহিনী বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে আলোচনা করতে বুধবার বিওপি কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠকে বসার জন্য বিএসএফকে আহবান জানানো হয়। একইভাবে বিএসএফের ১১৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়কের কাছে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে বৃহস্পতিবার পতাকা বৈঠকের আহবান জানানো হয়েছে।
খাগড়াছড়ির ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক নাজমুন আরা সুলতানা বলেন, আটক ৬৬ ভারতীয় নাগরিক বিজিবির হেফাজতে আছে। এদের বেশি ভাগই নারী ও শিশু। ভারতে ফেরত পাঠানো বা অন্য কোন সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ব্যাটালিয়নের বিজিবির সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে মানবিক কারণে জেলা প্রশাসন তাদের খাবার ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করবে। স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ ও বিজিবি এ বিষয়ে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ সমন্বয় বাজয় রাখছে।
এদিকে, জোরপূর্বক ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে পুশ করার ঘটনায় খাগড়াছড়ির রামগড়, মাটিরাঙ্গা,পানছড়ি ও ফটিকছড়ির সীমান্তে বিজিবির টহল ও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন