ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: পরমাণু অস্ত্র ও সার্বিক সক্ষমতায় কে এগিয়ে?

পেহেলগামে জঙ্গি হামলার ঘটনায় আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক। কাশ্মীরের এই ইস্যুতে পাকিস্তানের ঘাড়েই দোষ চাপাচ্ছে ভারত।

ইতোমধ্যে দু’দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সিন্ধু নদের পানি চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে দিল্লি। দিল্লির এমন মারমুখী প্রতিক্রিয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে ইসলামাবাদও।

রীতিমতো যুদ্ধের আশঙ্কা চিরশত্রু এই দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের। প্রশ্ন উঠছে, পরমাণু শক্তিধর দুই দেশের মধ্যে যদি সত্যিই যুদ্ধ শুরু হয় সেক্ষেত্রে জয়ের সম্ভাবনা কার?

যদি যুদ্ধ বেধেই যায়, কার জয়ের সম্ভাবনা কতটুকু, তা নিয়েও শুরু হয়েছে বিশ্লেষণ। আলোচনা চলছে কার কত সামরিক ক্ষমতা, তা নিয়েও।

এই সক্ষমতার গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো নিয়ে বিশ্লেষণমূলক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মালয়েশিয়াভিত্তিক ‘ডিফেন্স সিকিউরিটি এশিয়া’।

ডিফেন্স সিকিউরিটি এশিয়া জানিয়েছে, ১২৭ কোটি জনসংখ্যার দেশ ভারতের বর্তমান সামরিক বাজেট প্রায় ৭৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অন্যদিকে ১৯ কোটি মানুষের দেশ পাকিস্তানের সামরিক বাজেট ১০ থেকে ১২ বিলিয়ন ডলার।

সামগ্রিক সামরিক র‍্যাঙ্কিং ও সক্ষমতা সূচক

‘জিএফপি ২০২৫’–এ ৬০টির বেশি বিষয়ের (জনশক্তি, সামরিক সরঞ্জাম, অর্থনৈতিক ও ভৌগোলিক অবস্থা ইত্যাদি) ভিত্তিতে ১৪৫টি দেশকে মূল্যায়ন করা হয়েছে। সে অনুযায়ী, সামগ্রিক র‍্যাঙ্কিংয়ে ভারত বিশ্বের মধ্যে চতুর্থ, সক্ষমতা সূচকে স্কোর ০.১১৮৪ (কম স্কোর মানে বেশি শক্তিশালী সেনাবাহিনী)। এ ক্ষেত্রে পাকিস্তান বিশ্বে ১২তম, স্কোর ০.২৫১৩।

র‍্যাঙ্কিংয়ে ভারতের এ অবস্থান দেশটির বড় জনসংখ্যা, বৃহত্তর প্রতিরক্ষা বাজেট ও বিস্তৃত পরিসরের সামরিক সম্পদের প্রতিফলন। অন্যদিকে পাকিস্তান ছোট অর্থনীতির কারণে নানা সীমাবদ্ধতা ও বৈদেশিক সরবরাহকারী, বিশেষ করে চীনের ওপর নির্ভরশীলতা সত্ত্বেও ভারতকে মোকাবিলায় কৌশলগত বিষয়গুলোয় মনোযোগী। ফলে নির্দিষ্ট খাতগুলোয় প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে রয়েছে দেশটি।

পারমাণবিক সক্ষমতা:

ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশই পারমাণবিক ক্ষমতার অধিকারী। তাদের প্রতিরক্ষা কৌশলে এ সক্ষমতার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতের পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে ১৩০ থেকে ১৪০টি। ডেলিভারি সিস্টেমের মধ্যে রয়েছে অগ্নি–থ্রি/ফাইভ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (পাল্লা ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার কিলোমিটার), মিরেজ ২ হাজার ও রাফায়েল এবং সামুদ্রিক প্রতিরক্ষায় আইএনএস আরিহান্ট।

পারমাণবিক অস্ত্র আগে ব্যবহার না করার (নো ফার্স্ট ইউজ/এনএফইউ) নীতির পক্ষে ভারত। তবে এ ধরনের হামলার শিকার হলে ব্যাপক আকারে প্রতিশোধমূলক হামলার পক্ষে দেশটি।

অন্যদিকে পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা ১৪০ থেকে ১৫০। এদিক থেকে পাকিস্তানের সক্ষমতা ভারতের চেয়ে বেশি। ডেলিভারি সিস্টেমের মধ্যে আছে শাহিন–টু/থ্রি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাত্র, এফ–১৬ যুদ্ধবিমান, বাবর ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র। পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে দেশটি ‘ফুল–স্পেকট্রাম ডেটারেন্স’ নীতি অনুসরণের পক্ষপাতী। এ নীতিতে যুদ্ধক্ষেত্রে দেশটি প্রয়োজনে আগেভাগে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে।

সেনা সংখ্যা:

ভারতের সক্রিয় সেনা সংখ্যা ২১ লাখ ৪০ হাজার। রিজার্ভে রয়েছে ১১ লাখ ৫৫ হাজার সৈন্য। এছাড়াও, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে মিলবে ৩১ কোটি সেনা।

অপরদিকে, পাকিস্তানে সক্রিয় সেনা রয়েছে ৬ লাখ ৫৩ হাজার। রিজার্ভে রয়েছে ৫ লাখ ১৩ হাজার সেনা। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে দেশটিতে মিলবে চার কোটি সেনা।

স্থলবাহিনী:

ভারতের স্থলবাহিনীর হাতে রয়েছে চার হাজার ৬১৪টি ট্যাংক। সামরিকযান রয়েছে পাঁচ হাজার ৬৮১টি। রকেট আর্টিলারি রয়েছে ২৯২টি।

পাকিস্তানের স্থলবাহিনীর রয়েছে দুই হাজার ৭৩৫টি ট্যাংক। সামরিকযান রয়েছে তিন হাজার ৬৬টি। রকেট আর্টিলারি রয়েছে ১৩৪টি।

বিমান বাহিনী:

ভারতের যুদ্ধবিমান রয়েছে দুই হাজার ২১৬টি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে রাশিয়ায় তৈরি মিগ-২১, মিগ-২৭, মিগ-২৯, সুখোই-৩০এমকেআই, ব্রিটেন-ফ্রান্সের তৈরি জাগুয়ার এবং ফ্রান্সের তৈরি মিরেজ ২০০০। পাকিস্তানের যুদ্ধবিমান রয়েছে এক হাজার ১৪৩টি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে চীনের তৈরি এফ-৭পিজি এবং যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এফ-১৬ ফেলকন।

নৌবাহিনী:

আমর্ডফোর্সেসের হিসাবে ভারতের নৌবাহিনীর রয়েছে ১৫টি সাবমেরিন, ১৫টি ফ্রিগেট, ১১টি ডেস্ট্রয়ার এবং বিমানবহনকারী জাহাজ দুটি।

অন্যদিকে পাকিস্তানের রয়েছে পাঁচটি সাবমেরিন এবং ৯টি ফ্রিগেট।

প্রতিরক্ষা বাজেট:

ভারতের বাজেট (২০২৫-২৬) ৭ হাজার ৯০০ কোটি ডলার (যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পর তৃতীয়)। এটি জিডিপির ২ দশমিক ১ শতাংশ। এ ব্যয় পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ৯ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি।

পাকিস্তানের বাজেট ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার (অর্থনৈতিক সংকটের কারণে শীর্ষ দেশের তালিকায় নেই)। এ ব্যয় জিডিপির ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। বৈদেশিক সামরিক সহায়তা ১০ কোটি ডলার (মূলত চীন ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে)।

ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেট পাকিস্তানের ৬ থেকে ৮ গুণ। এ বিপুল প্রতিরক্ষা ব্যয় ভারতের সামরিক খাতে প্রযুক্তি ও অবকাঠামোগত এবং জনশক্তির আধুনিকীকরণে আরও বেশি বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে সহায়ক হচ্ছে। পাকিস্তান বাজেট–সংকটে ভুগলেও চীনের সহায়তা এটিকে সামাল দিচ্ছে। পাকিস্তানের সামরিক ব্যয়ের বড় অংশ ব্যয় হয় বৃহৎ সেনাবাহিনী ও পারমাণবিক অস্ত্রের সুরক্ষায়।